কোথায় আছো, কেমন আছো ঐন্দ্রিলা

20 Dec 2020, 04:13 PM কাভার গার্ল শেয়ার:
কোথায় আছো, কেমন আছো ঐন্দ্রিলা

বহুগুণে গুণান্বিত একসময়ের ক্রেজ ঐন্দ্রিলা আহমেদ। দীর্ঘদিন পর অভিনয়ে ফিরেও আবার অনিয়মিত হয়েছেন তিনি। ফিরেই একাধিক নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনচিত্রেরও মডেল হন এই অভিনয়শিল্পী। পাশাপাশি কাজ করেছেন নিজেদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ত্রয়ী চিত্রম’-এর। ‘ত্রয়ী চিত্রম’ ঐন্দ্রিলার বাবা প্রখ্যাত অভিনেতা বুলবুল আহমেদের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। এতদিন এর কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বাবার স্বপ্নের বাস্তবায়নে ‘ত্রয়ী চিত্রম’ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে কাজও শুরু করেছেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু এখন আর কোনো কিছুতেই দেখা যাচ্ছে না একসময়ের ক্রেজ ঐন্দ্রিলাকে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...



তবুও-

একজন ঐন্দ্রিলা ছিল, মনে পড়ে ?

এখনো রেখেছি তারে মনে, যতন করে

-মিনহাজ উদ্দিন শিবলী


ঐন্দ্রিলার বেড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক পরিমÐলে। বাবা জনপ্রিয় অভিনেতা বুলবুল আহমেদ ও মা অভিনেত্রী ডেইজি আহমেদ। এদেশে চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রয়াত অভিনেতা বুলবুল আহমেদের অবদান অনেক। অসংখ্য জনপ্রিয় ছবির অভিনেতা ও প্রযোজক তিনি। এজন্য সব ধরনের মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল তার। বাসা, অফিস কিংবা এফডিসিÑ সব জায়গায় জনপ্রিয় ছিলেন গুণী এই অভিনেতা। ছেলেবেলা থেকেই ঐন্দ্রিলার সঙ্গেও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রায় সবার সঙ্গেই পরিচয় ছিল। বাবা-মা’র পথেই হেঁটেছেন ঐন্দ্রিলা। মাত্র চার বছর বয়েসে হয়েছেন মডেল। সেই শুরু, এরপর সানক্রেস্ট, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী, তিব্বত লিপজেল, অ্যারোমেটিক সাবান, ক্যামেলিয়া সাবানসহ ১৫ টিরও বেশি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হন তিনি। 

সবশেষ তিনি ২০০৫ সালে পরমা জুয়েলার্সের বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হন। এরপর সংসার জীবনে প্রবেশ করায় সংসারে সময় দিতে হয় তাকে। তাই দীর্ঘদিন দর্শক তাকে টিভি পর্দায় দেখতে পাননি।

দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৮ সাল থেকে আবার তিনি অভিনয়ে যুক্ত হন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ঐন্দ্রিলা প্রায় শতাধিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে আসন করে নেন।

ঐন্দ্রিলা আহমেদ ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়ায় মাস্টার্স করেছেন। নির্মাণ করেছেন বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র ও বায়োগ্রাফি। আগামীতে নাটক ও ছবি নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে তার।

ঐন্দ্রিলার আরো পরিচয় রয়েছে, তিনি একজন নৃত্যশিল্পী ও সংগীতশিল্পী। যদিও এটাকে পেশা হিসেবে নেননি। তবে মাঝে মাঝে গানও করেন তিনি মনের আনন্দে।

অভিনয়ে ফিরেই প্রায় একডজনেরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখ করা যায় ‘বিলাভড’, ‘সাংসারিক ভালোবাসা’, ‘ছোট ছোট আশা ভালোবাসা’, ‘আতঙ্ক’, ‘জল পুকুরে ডুব’, ‘ফেইক লাভ’ প্রভৃতি।

বাবা বুলবুল আহমেদ ও মেয়ে ঐন্দ্রিলার মধ্যে মধুর সম্পর্ক ছিল। বাবাই যেন তার অস্তিত্ব। বাবা আজ বেঁচে নেই, বাবার আদর্শ নিয়েই সেই পথ ধরে হেঁটে চলছেন নীল আকাশের নিচে। এরই মধ্যে বাবাকে নিয়ে ঐন্দ্রিলা একটি গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। এর আগে বাবাকে নিয়ে ‘এক জীবন্ত কিংবদন্তির কথা’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। কাজেই বাবার প্রতি তার কতটা প্রেম তা তার কাজেই উঠে আসে। 

বাবাকে সবসময় মনে পড়ে ঐন্দ্রিলার। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বাবার সঙ্গে। কিছু কিছু স্মৃতি বিশেষ হয়ে থাকে জীবনে। কিশোরী ঐন্দ্রিলা তখন তরুণদের ক্রেজ। বিটিভিতে তার অভিনীত নাটকগুলো তরুণদের টানতো। সেই সময় একমাত্র বিনোদন মাধ্যম ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন [বিটিভি]। তাই তারকারা ছিলেন দারুণ জ্বলজ্বলে। ঐন্দ্রিলার কোচিং সেন্টারের সামনে জটলা বেঁধে ছেলেরা দাঁড়িয়ে থাকত হয়ত সে কারণেই।

দেড় বছর বয়েস থেকে ঐন্দ্রিলা ক্যামেরার সামনে। অভিনয় করেছেন বহু নাটকে। ‘রূপনগর’, ‘মোহর আলী’, ‘জীবন কাহিনী’, ‘শেষ থেকে শুরু’, ‘অভিমানে অনুভবে’সহ বহু নাটক। বাবার নাটকের টাইটেল গান, নিজের একক গান, নাটক ও সিনেমার জন্য গান করলেও অ্যালবাম করা হয়নি তার। এ-বছর ফেব্রæয়ারিতে নতুন করে একটি গান করেছেন। তিন বছর আগে অপূর্বর সঙ্গে ‘সাংসারিক ভালোবাসা’ নামে নাটকটি ইউটিউবে প্রায় ৩৭ লাখবার দেখেছেন দর্শক। কিন্তু নাটকের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সময় কোথায় ? অফিস সামলে সেটা অসম্ভব। কাজের ফাঁকে নিয়মিত রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন তিনি।

মার্কেটিংয়ে স্নাতক ঐন্দ্রিলার স্নাতকোত্তরের বিষয় ছিল ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া। বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী। একসময় বিনোদনের প্রায় সব শাখায় প্রচুর কাজ করেছেন। বড়ো বড়ো ব্র্যান্ডের মডেল হয়েছেন। কৈশোর ও তারুণ্যেই ঐন্দ্রিলা দারুণ দর্শকপ্রিয় ছিলেন। 

পরিবারকে ফেসবুক ও মিডিয়া থেকে দূরে রাখেন ঐন্দ্রিলা। সন্তানেরা যেন স্বাভাবিক আনন্দ নিয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়, এ ব্যাপারে তিনি সজাগ। তারাও নাচ-গান শিখছে, তবে মিডিয়ায় কাজ করার সিদ্ধান্ত বড়ো হয়ে তারাই নেবে। ঐন্দ্রিলা বলেন, ‘তারকার সন্তান হিসেবে আমাদের শৈশব তেমন আনন্দের ছিল না। পড়াশোনার পর শুটিংয়ে চলে যেতাম। পরীক্ষার হল থেকে চাকরির ভাইবা, সবখানে কেবল বাবার প্রসঙ্গ উঠে আসত। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, বেড়ানো, পার্টি করা হতো না। ঢাকা ক্লাবের মাঠ ছাড়া কোথাও একটু শান্তিতে হাঁটতে পারতাম না। নিজের ছেলেমেয়েদের সে রকম জীবন চাই না। বলিউডের অক্ষয় কুমার এ-কারণে সন্তানদের ছবি কোথাও প্রকাশ করেন না।’

বুলবুল আহমেদের হাত ধরেই টিভি-নাটকে নায়িকা হয়ে আসেন তিনি। একটা সময় নিয়মিত ছিলেন অভিনয়ে। তারপর হঠাৎ দশ বছরের বিরতি টানেন। বছর দুয়েক আগে আবারো অভিনয় শুরু করেন। তবে এই যাত্রায় নিয়মিত হতে পারেননি এই অভিনয়শিল্পী। সবশেষ গেল বছর একটি নাটকে কাজ করেন তিনি। ঐন্দ্রিলা বলেন, এই সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো আমার জন্য কঠিন। আমার শুরুর দিকে আর এখনকার সময়ের কাজে অনেক তফাৎ। আগে গল্প ও চরিত্রের প্রয়োজনে নির্মাতারা শিল্পী নির্বাচন করতেন। এখন দেখি তার উল্টো। যে পরিচালকের সঙ্গে যার ভালো সম্পর্ক তিনি তাকে নিয়েই বেশি কাজ করছেন। অভিনয়ের বাইরে ঐন্দ্রিলা গানও করেন। ‘গরম হাওয়া’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে প্লেব্যাক শুরু করেন। এরপর নিয়মিত নাটক ও চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন। অভিনয়ের মতো মাঝ পথে গানেও বিরতি আসে। দুই বছর আগে তার বাবাকে নিয়ে একটি গান করেন। এটির মধ্য দিয়ে গানেও আবার কামব্যাক করেন। চলতি বছরের ফেব্রæয়ারিতে নতুন একটি গানে তিনি কণ্ঠ দেন। ঐন্দ্রিলা বলেন, শেষের কবিতা শিরোনামে একটি গান করেছি। ফয়সাল আহমেদের কথায় এটির সুর ও সংগীত করেছেন আমজাদ হোসেন। ভালো কথা ও সুর পেলে আরো কিছু গান করব। এদিকে ঐন্দ্রিলা এখন ঘরেই থাকছেন। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির শুরু থেকে ঘরে আছেন বলে জানান। নতুন কোনো কাজ কি করছেন ? উত্তরে তিনি বলেন, আমি এখন ঘরে থাকাই নিরাপদ মনে করি। এই পরিস্থিতিতে বের হওয়া ঠিক হবে না। হ