টেলিভিশন সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে যে-ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন তাদের মধ্যে ডিবিসি নিউজের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক তানিয়া হারুন অন্যতম। দীর্ঘ আট বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি এই পেশায় নিজেকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপককে নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল ...
বাবার অনুপ্রেরণা থেকেই শুরু
তানিয়ার বাবা সংবাদ দেখার একজন বড়ো ভক্ত ছিলেন। সেই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার এতো বিস্তার ছিল না, টেলিভিশন সংবাদই ছিল মানুষের তথ্য জানার প্রধান মাধ্যম। বাবা মজার ছলেই বলতেন, ‘নিউজ প্রেজেন্টেশন খুব প্রেস্টিজিয়াস একটা প্লাটফর্ম।’ বাবার সেই কথাগুলোই ধীরে ধীরে তানিয়ার মনে স্বপ্ন জাগায় সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি ভর্তি হন জবস এ-১’র তিন মাসের একটি কোর্সে। এরপর দীর্ঘদিন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সিভি জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন অডিশন কলের জন্য। টানা চার বছর চেষ্টা করার পর অবশেষে একটি বেসরকারি চ্যানেলে সুযোগ পান। সেখানে আরো কয়েকজনের সঙ্গে কঠিন ট্রেনিংয়ে অংশ নেন তিনি। ছয় মাস দিন-রাত অনুশীলনের পর অবশেষে সংবাদ পাঠের সুযোগ আসে তার সামনে। তানিয়া প্রথম যোগদান করেন নাগরিক টেলিভিশনে। এরপর দীর্ঘ চার বছর ছিলেন নিউজ ২৪-এ। বর্তমানে তিনি ডিবিসি নিউজে কর্মরত। পাশাপাশি করপোরেট জবও করছেন।
প্রথম সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা
প্রথমবার সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা আজও মনে আছে তার। সন্ধ্যা ৬টার বুলেটিনে দাঁড়িয়ে সংবাদ পড়তে হয়েছিল তাকে। সেই মুহূর্তে পা কাঁপছিল, গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। টকব্যাকে কাউন্টডাউন শুরু হতেই ভেতরে ভয় কাজ করছিল। তবুও দৃঢ়তার সঙ্গে সংবাদ শেষ করেন তিনি। পরে বুঝলেন, এটাই তার জীবনের পথচলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
পরিবার পাশে থাকায় এগিয়ে যাওয়া
তানিয়া মনে করেন, পরিবার থেকে সহযোগিতা না-পেলে দীর্ঘ আট বছর সংবাদ উপস্থাপনার সঙ্গে থাকতে পারতেন না। পরিবারের সবার সাপোর্ট আছে বলেই তিনি এখনো পর্যন্ত এই পেশার সঙ্গে জড়িত থাকতে পেরেছেন। বাবা-মা, ভাইবোন, এমনকি এখন তার স্বামী- সবাই সবসময় তাকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। তার ভাষায়, ‘আমার পরিবার সবসময় মেরুদন্ডরে মতো আমার পাশে থেকেছে, আগামীদিনেও থাকবে।’
পেশার প্রতি ভালোবাসা ও চ্যালেঞ্জ
তানিয়ার কাছে সংবাদ উপস্থাপনা শুধু একটি চাকরি নয়, বরং ভালোবাসার পেশা। তিনি বলেন, ‘নিউজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে শুধু ফেমের জন্য এ পেশায় আসা উচিত নয়। কারণ এই জায়গায় টিকে থাকতে হলে একে নেশার মতো ভালোবাসতে হয়।’
খবর পড়তে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থা
টেলিভিশনে সংবাদ পাঠ করতে গিয়ে অনেকেই কমবেশি বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। তানিয়াও তার ব্যতিক্রম নন। লাইভ নিউজ পড়ার সময় বিব্রতকর মুহূর্তও এসেছে তার জীবনে। একবার লাইভ চলাকালীন নাকের ওপর প্রায় দুই মিনিট ধরে একটি মাছি বসে ছিল। কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি। দর্শকও সেটি লক্ষ্য করেছিলেন। তবুও পেশাদারিত্বের সঙ্গে খবর পড়া শেষ করেছিলেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সংবাদ উপস্থাপনায় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তানিয়ার ভাবনা খুব সরল। তিনি বলেন, ‘যতদিন বেঁচে আছি, সংবাদ নিয়েই বাঁচতে চাই। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’
ব্যক্তিজীবনের খানিকটা...
সংবাদ উপস্থাপনা এবং চাকরির ব্যস্ততার ফাঁকে অবসর সময় খুব একটা পান না তানিয়া। সময় পেলেই বাবা-মায়ের বাসায় যান। না হলে নিজের ঘরেই সময় কাটান। চা খেতে খেতে মুভি দেখা, পরিবার নিয়ে আড্ডা দেওয়াতেই আনন্দ পান তিনি। ভ্রমণ করতেও পছন্দ করেন, বিশেষ করে, যেখানে পাহাড়, সমুদ্র আছে, সেই জায়গাই তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তার প্রিয় রং কালো, আর প্রিয় খাবার পাস্তা।
তানিয়া হারুনের সংবাদ উপস্থাপনার যাত্রা শুধু একটি পেশাগত সাফল্যের গল্প নয় ; এটি এক নারীর স্বপ্ন, পরিশ্রম এবং দৃঢ় প্রত্যয়ের গল্পও বটে। আর তিনি নিজেই যেমন বলেন, ‘যতদিন বাঁচি, সংবাদ নিয়েই থাকতে চাই।’