চূড়ান্তপর্বে ‌‘নতুন কুঁড়ি’

04 Nov 2025, 03:51 PM খবর শেয়ার:
চূড়ান্তপর্বে ‌‘নতুন কুঁড়ি’

আমরা নূতন, আমরা কুঁড়ি, নিখিল বন-নন্দনে,

ওষ্ঠে রাঙা হাসির রেখা, জীবন জাগে স্পন্দনে।

লক্ষ আশা অন্তরে

ঘুমিয়ে আছে মন্তরে

ঘুমিয়ে আছে বুকের ভাষা পাঁপড়ি-পাতার বন্ধনে।



দীর্ঘ দুই দশকের বিরতির পর আবারো জমজমাটভাবে পর্দায় ফিরছে শিশু-কিশোরদের নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং দেশের শিশুদের সৃজনশীলতা, মেধা ও আত্মবিশ্বাস বিকাশের এক অনন্য মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হয়। এখান থেকেই উঠে আসে ভবিষ্যতের শিল্পী, সংগীতশিল্পী, আবৃত্তিকার, নৃত্যশিল্পী ও অভিনেতারা।

২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বাছাই পর্ব। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, প্রতিটি শাখা ও বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ১০ জন করে প্রতিযোগী এবার অংশ নেবেন ‘সেরা দশ’ পর্বে। তবে একই নম্বর প্রাপ্ত একাধিক প্রতিযোগী থাকলে সবাইকেই অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয়।

‘সেরা দশ’ পর্বের অডিশন অনুষ্ঠিত হয় ২৪-২৯ অক্টোবর পর্যন্ত, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ঢাকা কেন্দ্র, রামপুরায়। 

এ পর্বে যারা উত্তীর্ণ হবেন, তারা অংশ নেবেন গ্রুমিং সেশন ও ফাইনাল পর্বে, যেখানে প্রতিযোগীদের পারফরম্যান্স আরো নিখুঁতভাবে গড়ে তোলা হবে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে। চূড়ান্ত বাছাইয়ের ফলাফল প্রকাশ করা হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে।

এ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই অনুষ্ঠিত হয় সারা দেশকে ১৯টি অঞ্চলে ভাগ করে। প্রতিটি অঞ্চলের বাছাই পর্বে অংশ নেয় শত শত প্রতিযোগী, যারা নিজেদের প্রতিভা দিয়ে বিচারকদের মুগ্ধ করেছে।

আসছে ২ থেকে ৬ নভেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ‘নতুন কুঁড়ি’র চূড়ান্ত ফাইনাল প্রতিযোগিতা। এ আয়োজনে অংশ নেয়া প্রতিটি শিশু তাদের স্বপ্ন, পরিশ্রম ও প্রতিভার অনন্য পরিচয় দিতে প্রস্তুত।

১৯৭৬ সালে জাতীয় টেলিভিশন প্রতিযোগিতা হিসেবে 'নতুন কুঁড়ি' বাংলাদেশ টেলিভিশনে যাত্রা শুরু করে। অনুষ্ঠানটির নামকরণ নতুন কুঁড়ি' করা হয়েছিল কবি গোলাম মোস্তফার 'কিশোর' নামক কবিতা থেকে। উপমহাদেশের প্রথম রিয়েলিটি শো প্রতিভা অন্বেষণের এই সিগনেচার ইভেন্ট শুরু থেকেই নতুন প্রজন্মসহ সকল শ্রেনির দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্রেগ্রাাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রার শুরু থেকেই 'নতুন কুঁড়ি' নামে এই ইভেন্টটি দেশ-বিদেশে প্রচুর সুনাম ও দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করায় এবং এই ইভেন্টের মাধ্যমে দেশে অনেক খ্যাতিমান শিল্পী তৈরী হওয়ায় দেশব্যাপী প্রতিভা অন্বেষণ ও বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির জন্য অরিজিনাল থিমসংসহ 'নতুন কুঁড়ি' ইভেন্ট ভিত্তিক অনুষ্ঠানটি চলতি বছরে পুনরায় শুরু করা হয়।


পুনরায় নতুন কুঁড়ি শুরু হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহা-ব্যবস্থাপক নূরুল আজম বলেন, একটি প্রতিযোগিতা যখন চলে, সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন সেই প্রতিযোগিতা আবার নতুন কবে শুরু হবে।

প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে প্রতিযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে চর্চা করেন- এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য। দীর্ঘদিন এই প্রতিযোগিতা না হওয়ায় হয়ত চর্চাটাও বন্ধ ছিল। আমরা আশা করেছিলাম এই প্রতিযোগিতাটা আবার শুরু হলে সারাদেশে এক ধরনের সুস্থ একটা সাংস্কৃতিক চর্চার ডামাডোল শুরু হবে, প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সাড়া ফেলবে। ফলে আগামী দিনে শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন শাখায় যারা বিচরণ করবে, তাদের মধ্যে একটা প্লাটফর্ম তৈরি হবে। তাদের চর্চার একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। সেদিক থেকে বলতে পারি আমরা অনেকটা সফল। এবারের প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে প্রায় ৪৫ হাজার প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছেন। সেখান থেকে আমরা পাঁচটি রাউন্ড করছিলাম। এখন চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রতিযোগিতা চলছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের বর্তমান সক্ষমতা প্রসঙ্গে নূরল আজম বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়েছি আমরা। একসাথে লাইভ কাভারেজ করতে পারি। বাংলাদেশ টেলিভিশনের যে ঐতিহ্য ছিল, দেশীয় সংস্কৃতিকে লালন করা, বহির্বিশ্বে দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, আমরা সেই ধারায় এগিয়ে যাচ্ছি।

নতুন কুঁড়ি প্রসঙ্গে বিচারক খুরশীদ আলম বলেন, প্রায় ১৭ বছর পর বাংলাদেশ টেলিভিশন আবার নতুন কুঁড়ি ইভেন্টটি শুরু করেছে। আমি সাধুবাদ জানাই। এই প্রতিযোগিতা আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেক উপকারে আসবে। এই প্রতিযোগিতা থেকে অনেক শিল্পী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন যারা আসছেন, আমার মনে হয়েছে তারা আগের চেয়ে আরো মেধাবী। কারণ এখন অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে, যখন যা প্রয়োজন ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত পেয়ে যাচ্ছেন। যারা অংশগ্রহণ করছেন, তারা খুবই ভালো করছেন, সমস্যা হলো সংগীত শাখার বিচারক আমি, একজন রংপুরের প্রতিযোগিকে জিজ্ঞেস করলাম রংপুরের রবীন্দ্র সঙ্গীতের সেরা শিল্পীকে, অজিত রায়ের নাম জানে না, গাইছেন রথীন্দ্রনাথ রায়ের গান, জিজ্ঞেস করলাম হরলাল রথীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কী? বলতে পারল না। আমি সব প্রতিযোগীর অভিভাবক ও শিক্ষকদের অনুরোধ করব, যারা প্রতিযোগিতায় আসছেন তাদেরকে গীতিকার, সুরকার ও মূল শিল্পীর নাম শিখিয়ে নিয়ে আসবেন। অন্য শাখায় যারা প্রতিযোগিতা করছেন, তাদের কাছেও অনুরোধ থাকবে তারা যেন সেই বিষয়ে জেনে আসেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ এটা আবার শুরু করার জন্য। আমি আশা রাখব এটা এখন থেকে আবার নিয়মিতভাবে হবে। 

লেখা : শেখ সেলিম

ছবি : জাকির হোসেন