আরেফিন বাদল-এর ৭৮তম জন্মদিন আজ

25 Sep 2025, 01:05 PM জন্মদিন শেয়ার:
আরেফিন বাদল-এর ৭৮তম জন্মদিন আজ

কথাসাহিত্যিক আরেফিন বাদল জাতীয় পর্যায়ের একজন সফল ব্যতিক্রমি ধারার কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার এবং গুণী গবেষক, প্রাবন্ধিক, সেইসঙ্গে একজন প্রবীণ সম্পাদক ও সাংবাদিক।

ষাটের দশকের শেষ প্রান্ত থেকে অদ্যাবদি তিনি সাহিত্য চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তাঁর রচিত ছোটোগল্প, উপন্যাস ও গবেষণাধর্মী গ্ৰন্থ ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভে সক্ষম হয়েছেন। 

এদেশে বেসরকারিভাবে নির্মিত প্রথম টিভি অনুষ্ঠান—[প্যাকেজ নাটক] ‘প্রাচীর পেরিয়ে’-এর নির্মাতা ও প্রযোজক তিনি [১৯৯৪]। 

আরেফিন বাদল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত জাতীয় পর্যায়ের পাঠক নন্দিত পত্রিকা— পাক্ষিক ‘তারকালোক’, মাসিক ‘কিশোর তারকালোক’, সাপ্তাহিক ‘আগামী’ ও মাসিক ‘তারকালোক ডাইজেস্ট’ পত্রিকাগুলোতে তিনি কম্পিউটারের মাধ্যমে বাংলা বর্ণমালা [DTP]-এর বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু করেন [১৯৯৭]।

কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও সংবাদ সংস্থায় সাংবাদিকতা ছাড়াও সরকারি চাকরিসূত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পত্রিকা পাক্ষিক ‘প্রতিরোধ’ ও বাংলাদেশ স্কাউট-এর মুখপত্র মাসিক ‘অগ্রদূত’-এর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।

আরেফিন বাদল-এর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ : ‘প্রসবোন্মুখ যন্ত্রণাবিদ্ধ’ [১৯৭৮], ‘আগামীকাল ভালোবাসার’ [১৯৮০], ‘Short stories’ [১৯৮১], ‘অন্তুর বর সাজা’ [১৯৯০], ‘নিত্যদিন কালগোনা’ [২০০৪], ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ [২০১০], ‘গল্প সমগ্র’ [২০১৮] ইত্যাদি।

উপন্যাস : ‘নিসর্গের সন্তানেরা’ [১৯৮১], ‘ইমুবাবু’ [১৯৯৮], ‘ঐ আসে আমিরালী’ [১৯৯৯], ‘সারা’র ব্রীজ’ [১৯৯৯], ‘হাকিম উদ্দিন তরফদার’ [২০০১], ‘অতঃপর একটি স্যুটকেস’ [২০১৭], ‘উপন্যাস সমগ্র’ [২০১৮], ‘এবং মাতৃত্ব’ [২০১৯[, ‘বিশ শব্দের গল্প’ [২০২০]।  

কিশোর গল্প : ‘অন্তুর বর সাজা’ [১৯৯০]। 

কথাসাহিত্যের বাইরে তার গবেষণা ও অন্যান্য  গ্রন্থ :  ‘ঐতিহাসিক প্রেমপত্র’ [১৯৭৬], [৩য় সংস্করণ], ‘মওলানা ভাসানী’ [১৯৭৭], [২য় সংস্করণ], ‘রবীন্দ্রনাথের জীবনে নারী’ [১৯৯৯], [২য় সংস্করণ], ‘চাষী-মজুরের মওলানা ভাসানী’ [২০২২], ‘বাংলাদেশ-ভারত কনফেডারেশন : একাত্তরে ইন্দিরাকে ভাসানীর চিঠি’ [২০২৩]।

টিভি নাটক : ‘কাছের মানুষ কাঁদে’ [১৯৮৯], ‘ঐ আসে আমিরালী’ [১৯৮৯], ‘ইমুবাবু’ [১৯৯৭], আপন অস্তিত্বে’ [২০০৭], ‘নেতা ঘেমে যাচ্ছেন’ [২০০৮] ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া আরেফিন বাদল-এর বর্ণাঢ্য ‘জীবন ও কর্ম’ নির্ভর বিচিত্রধর্মী বিভিন্ন গুণীজনের তথ্যবহুল লেখা নিয়ে, টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থগার থেকে সবুজ মাহমুদ-এর সম্পাদনায় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ছয়শত পৃষ্ঠার ‘আরেফিন বাদল সংখ্যা : ‘যমুনা’ গ্রন্থটি। এই বইটিকে বিগত ৫০/৬০ বছরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সমকালীন বিভিন্ন প্রসঙ্গের নির্মোহ বিশাল তথ্যভাণ্ডারও বলা চলে। এবারের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হবে প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার 'তারকালোক, আমি এবং আমরা' নামে একটি স্মৃতিচারণ ধর্মী নিবন্ধ। নিবন্ধটির কাজ প্রায় শেষের দিকে।

আরেফিন বাদল দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সেমিনার ও কনফারেন্সে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আরেফিন বাদল তার নানামুখী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ভাসানী পদক’ [১৯৮৭], ‘ময়মনসিংহ লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতি পুরস্কার’ [২০০৬], বাচসাস কর্তৃক বাংলাদেশে বিনোদন সাংবাদিকতায় ‘বিশেষ সম্মাননা’ [২০১২], চ্যানেল আই কর্তৃক ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’ [২০১৪], ‘বাচসাস চলচ্চিত্র পুরুস্কার : ওবায়েদ-উল হক স্মৃতি পদক’ [২০১৪], ‘টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার’ [২০১৬], ‘আনন্দ আলো সম্মাননা’ [২০১৬], ভাসানী পরিষদ কর্তৃক ‘বিশেষ সম্মাননা পদক’ [২০২২] সময়ের সাহিত্য কন্ঠ কর্তৃক প্রদত্ত সাহিত্যিক-গবেষক- সাংবাদিক হিসেবে 'গুণীজন সম্মাননা' [২০২৩], আজাদ প্রোডাক্ট অ্যাওয়ার্ড 'মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল' [২০২৩- ২৪]সহ দেশি-বিদেশি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। 

আরেফিন বাদল  একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে  মাঠ পর্যায়ের একজন সক্রিয় সংগঠক এবং মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এছাড়া ভাসানী গবেষণা প্রকল্পের  'প্রকল্প প্রধান', বাচসাস-এর জীবন সদস্য, বাংলা একাডেমির ‘জীবন সদস্য’। 

আরেফিন বাদল ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি  ঘাটাইলের পোড়াবাড়ি গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে’ ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। 

আরেফিন বাদল-এর জন্মদিনে আনন্দভুবনের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

লেখা: শহিদুল ইসলাম এমেল