পপসম্রাজ্ঞী ম্যাডোনার হালফিল

18 Mar 2025, 01:35 PM অন্যান্য শেয়ার:
পপসম্রাজ্ঞী ম্যাডোনার হালফিল

ম্যাডোনা। শুধু এই নামটিই একটি পরিচয়। আর কিছু বলা লাগে না এই গায়িকাকে নিয়ে। তার নামের পাশে জড়িয়ে আছে আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক, মানবিকতা, যৌনতা, বাণিজ্য, ফ্যাশন এবং আরো অনেক কিছু। তিনি একাধারে গায়িকা, গীতিকার, ফ্যাশন আইকন ও অভিনয়শিল্পী। ম্যাডোনা লুইজ চিকন আমাদের আজকের দূরদেশ আয়োজনে...


ম্যাডোনা ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রে মিশিগানের বে সিটিতে ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মায়ের নামের মতো তার নাম হওয়ায় সবাই তাকে ‘লিটল ননি’ বলে ডাকতেন। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা মারা গেলে ম্যাডোনার জীবন বলতে গেলে একদম ওলোটপালট হয়ে যায়। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে গৃহপরিচারিকাকে বিয়ে করেন তার বাবা, যেখানে রয়েছে তার আরো দুই সৎ ভাইবোন। এই বিয়ে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি ম্যাডোনা। তাই বাবার সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরে তার।

ছোটোবেলা থেকে ম্যাডোনা ভালো ছাত্রী হিসেবে যেমন ছিলেন আবার তার বেপরোয়া জীবনের জন্য সমালোচিতও ছিলেন। বাবা তাকে শাস্ত্রীয় পিয়ানো শেখাতে চাইলেও তিনি ব্যালে নাচ শিখবেন বলে জেদ করেন। ব্যালে নাচের শিক্ষকের সহযোগিতায় পরে তিনি হাইস্কুল শেষ করে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নাচের বৃত্তি লাভ করেন এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় পড়াশোনা করেন। বেশ কিছুদিন ব্যাকআপ ড্যান্সার হিসেবে কাজ করেন তিনি। ম্যাডোনা সংগীত ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে। সংগীতশিল্পী প্রেমিক ড্যান গিলরয়ের সঙ্গে ‘ডেট’ করার সময়ে প্যারিসে গান গাওয়ার জন্য সফলভাবে অডিশন দেন। পরবর্তীসময়ে ম্যাডোনা ও গিলরয় তাদের প্রথম ব্যান্ড ‘ব্রেকফাস্ট ক্লাব’ গঠন করেন। ম্যাডোনা গান গাওয়ার পাশাপাশি ড্রামস ও গিটার বাজাতেন।

১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে মিশিগানে ম্যাডোনা ও তার তৎকালীন প্রেমিক স্টিফেন ব্রাই ‘ব্রেকফাস্ট ক্লাব’ ছেড়ে ‘এমি অ্যান্ড এমিজ’ ব্যান্ড গড়েন। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে দু’জন একসঙ্গে গান লিখতে শুরু করেন এবং ওই বছর তারা চারটি গানের ডেমো রেকর্ড করেন। এর পরপরই ম্যাডোনা নিজেকে একক শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় স্টুডিও অ্যালবাম ‘লাইক আ ভার্জিন’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক তারকায় পরিণত হন ম্যাডোনা। অ্যালবামের ‘লাইক আ ভার্জিন’ গানটি তার প্রথম সিঙ্গেল, যা টানা ছয় সপ্তাহ ‘হট ১০০’ চার্টে শীর্ষে ছিল।

এটা যেকোনো নারী সংগীতশিল্পীর প্রথম অ্যালবাম যা যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লাখ এবং বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা [আরআইএএ] এই অ্যালবামকে ডায়মন্ড সার্টিফিকেশন দেয়। এর পর ম্যাডোনার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি হয়ে ওঠেন সংগীতজগতের একচ্ছত্র রানি।

আশির দশকেই অভিনয় ক্যারিয়ারেও নাম লেখান ম্যাডোনা। কম বাজেটের ইন্ডি চলচ্চিত্র ‘আ সারটেইন স্যাকরিফাইস’ থেকে যাত্রা শুরু। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে টেলিভিশনে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে ম্যাডোনার। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘আমেরিকান ব্যান্ডস্ট্যান্ড’ এবং ‘টপ অব দ্য পপস’-এ অভিনয় করেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘ভিশন কোয়েস্ট’-এ একটি ক্যামিও চরিত্রে এবং ‘ডেস্পারেটলি সিকিং সুজ্যান’-এর মধ্যদিয়ে মূলধারায় কাজ শুরু হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের সিনেমা ‘সাংহাই সারপ্রাইজ’-এর জন্য তিনি প্রথম ‘ওয়ার্স্ট অ্যাকট্রেস’-এর গোল্ডেন রাস্পবেরি পুরস্কার পান।

‘ম্যাটেরিয়াল গার্ল’ গানের ভিডিও ধারণের সময় ম্যাডোনা হলিউড তারকা শন পেনের সঙ্গে ডেট করা শুরু করেন এবং ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের দুই বছর পর ম্যাডোনা বিচ্ছেদের আবেদন করলেও কয়েক সপ্তাহ পর তা প্রত্যাহার করেন। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে আবার বিচ্ছেদের আবেদন করেন।

১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রেমিকা নারীর পরিচয় হয় পরিচালক গাই রিচির সঙ্গে, যাকে তিনি ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বিয়ে করেন। এই বিয়ের আগেই তাদের সন্তান রোকো জন রিচির জন্ম হয়। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ভাঙে এই সংসার। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে নেওয়ার পাশাপাশি অনেক রেকর্ড ভেঙেছেন ম্যাডোনা। তিনি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাজ্যের মিউজিক হল অব ফেমের পাঁচ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে যুক্ত হন ‘রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম’-এ। রোলিং স্টোন তাকে সর্বকালের সেরা ১০০ শিল্পীর বিশেষ তালিকায় ৩৬-তম স্থান দেয়। বিলবোর্ড ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তাকে বর্ষসেরা নারীর তকমা দেওয়া হয়। যৌনতা নিয়ে সবসময়ে খোলামেলা থাকার কারণে এই গায়িকা বরাবরই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তার ‘লাইক আ প্রেয়ার’-এর পারফর্মেন্স ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে অভিযোগ ওঠায় এর বিজ্ঞাপন এবং স্পন্সরশিপ বাতিল হয়ে যায়।

কয়েক দশক ধরে তিনি সমান তালে পপসংগীতে রাজত্ব করে আসছেন। যেকোনো প্রজন্মের কাছে তিনি এখনো সমান জনপ্রিয়। সারাবিশে^ তার কোটি কোটি ভক্ত রয়েছে। তিনি আরো অনেক দিন সংগীতজগতকে সমৃদ্ধ করবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা। হ

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন