এই বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে

13 Feb 2024, 01:30 PM অন্যান্য শেয়ার:
এই বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে

ভালোবাসা পাওয়ার চেয়ে ভালোবাসা টিকিয়ে রাখা কঠিন। একজন মানুষ যত সহজে প্রেমে পড়েন, সেই প্রেমকে চিরন্তন করে রাখতে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে হয়। এই জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, দু’জনের মধ্যে সম্মানবোধ, আন্তরিকতা, বোঝাপড়া প্রভৃতি। বর্তমান সময়ে ভালোবেসে বিয়ে করলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই শোনা যায় ভাঙনের সুর, ভেঙে যায় অনেক সংসার। আবার এদেরই মধ্যে অনেক তারকা-দম্পতি রয়েছেন যারা নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করছেন। দেশের বিনোদন জগতের সফল প্রেমিক-জুটি এখনো যারা বহাল তবিয়তে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছেন তাদের নিয়ে এই প্রতিবেদন। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...

সৈয়দ হাসান ইমাম-লায়লা হাসান

জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসানের ৫৬ বছরের দাম্পত্যজীবন বিন্দুমাত্র চির ধরাতে পারে নি। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্র-শতবর্ষ উপলক্ষে তিনটি নাটকে অভিনয় করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। সেখানেই লায়লা হাসানের সঙ্গে পরিচয়। এরপর ভয়েস অব আমেরিকায় একসঙ্গে নাটকে কাজ করেন তারা। তবে এর নেপথ্যে ভূমিকা ছিল লায়লা হাসানের পরিবারের। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে এই দম্পতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সংসারজীবনে তিন সন্তানের জনক-জননী তারা। বিয়ের ৫৯ বছর পরও তাদের মধ্যে ভালোবাসার কমতি নেই। নিজেদের ভুবনে ব্যস্ততার পাশাপাশি বিশ্বস্ততায় ভর করে যাপন করছেন সুখের সংসার।

রামেন্দু মজুমদার-ফেরদৌসী মজুমদার

একুশে পদক প্রাপ্ত দুই গুণীজন রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মার্চ ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। একে একে ৫৪ বছর পার করেছেন একসঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটক করতে গিয়ে তাদের প্রথম পরিচয়। রামেন্দু মজুমদারের দায়িত্ব ছিল রাতে ফেরদৌসী মজুমদারকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া। সেখান থেকে শুরু হয় তাদের প্রণয়। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দুইজনের পরিণয় বাস্তব রূপ পায়। তাদের বিয়েতে সাহায্য করেছিলেন ফেরদৌসী মজুমদারের দুই ভাই মুনীর চৌধুরী ও কবির চৌধুরী। দু’জনের ৫১ বছরের সুখী বিবাহিত জীবনে আছে একমাত্র সন্তান ত্রপা মজুমদার।

রফিকুল আলম-আবিদা সুলতানা

দেশের জনপ্রিয় সংগীত জুটি রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা। তারাও প্রেম করে বিয়ে করেছেন। বাংলাদেশ বেতারে তাদের দেখা হয় সত্তরের দশকে। তাদের পরিচয় করিয়ে দেন লাকী আখন্দ। গান গাইতে গাইতে তাদের প্রেম জমে ওঠে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বিয়ে করেন দুই সংগীত তারকা। সেই থেকে ৪৯ বছর ধরে ভালোবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন দু’জন।

নাঈম-শাবনাজ

নব্বই দশকের শুরুতে ‘চাঁদনী’ সিনেমার মাধ্যমে অভিষেক ঘটে অভিনয়শিল্পী নাঈম-শাবনাজের। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন এই জুটি। মাসের পর মাস প্রেক্ষাগৃহে চলতে থাকে ছবিটি। তাদের দর্শকপ্রিয়তা দেখে প্রযোজক ও নির্মাতারা একের পর এক সিনেমা উপহার দেন। তাদের অভিনীত প্রায় ছবিই ব্যবসা সফল হয়। অভিনয় করতে করতেই দু’জন কাছাকাছি আসেন। তাদের প্রেমের গুঞ্জন ছিল দর্শকদের কাছে তখনকার আলোচনার বিষয়বস্তু। তবে, পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে হয় ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর। বিয়ের পর দু’জনেই অভিনয় ছেড়ে সংসারে মনোযোগী হন। তাদের ৩০ বছরের সংসারে আছে দুই কন্যাসন্তান।

জাহিদ হাসান-মৌ

অভিনেতা জাহিদ হাসান এবং মডেল ও নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নব্বই দশকে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। তাদের প্রথম পরিচয় হয় সে-সময়ের বিটিভিতে প্রচারিত সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে। দর্শকের নিশ্চয়ই মনে আছে, জাহিদ হাসান ও মৌ মডেল হন ইত্যাদির একটি গানের চিত্রায়ণে, সেখানে তারা ‘আমার গোরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’... গানের মডেল হয়ে ব্যাপক প্রশংসিত ও আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এই মিউজিক ভিডিওটি করতে গিয়েই তাদের প্রথম পরিচয় হয়। এরপর সেটা ধীরে ধীরে রূপ নেয় প্রণয়ে। তবে তাদের মিলন এত সহজে ঘটেনি। মৌয়ের পরিবার থেকেই বেশি অপত্তি ছিল। অতঃপর দুইজনের একক সিদ্ধান্তে বিয়ে করেন ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে। একসময় পরিবারও মেনে নেয়। তাদের সংসারে এসেছে ছেলে পূর্ণ ও মেয়ে পুষ্পিতা। সেদিনের সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না তা প্রমাণ করে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের ২৭ বছরের সুখের সংসার।

ওমর সানী-মৌসুমী

সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির মাধ্যমে বড়োপর্দায় অভিষেক হয় অভিনেত্রী মৌসুমীর। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন এই শিল্পী। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর তুমুল সাফল্যে তখন সালমান শাহ-মৌসুমী জুটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তাদের জুটি ভেঙে যায়। তখনই ওমর সানীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন মৌসুমী। তারা দু’জনে প্রথমবার দিলীপ বিশ্বাসের ‘দোলা’ সিনেমায় অভিনয় করেই দর্শকদের মন দুলিয়ে দেন। আর পেছনে তাকাতে হয়নি, একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দেন এই জুটি। সিনেমায় কাজের মধ্যেই দু’জনের সম্পর্ক গভীর হয়। তাদের প্রেমের গুঞ্জন ছড়ায়। সেই গুঞ্জনের রেশ না কাটতেই ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এই জুটি। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ঘরে আসে দুই সন্তান। ২৭ বছরের দাম্পত্যজীবনে মাঝে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হলেও পরে তা ঠিক হয়ে যায়।

রিয়াজ-তিনা

‘হৃদয়ের কথা’ সিনেমার একটি গানে নাচের দৃশ্যে কাজ করতে গিয়ে প্রথম পরিচয় হয় রিয়াজ-তিনার। সিনেমাটিতে রিয়াজ নায়ক হলেও তিনা ছিলেন সাধারণ একজন সহকর্মী। তবে সেই গানের দৃশ্যের শুটিংয়ের পর রিয়াজের মনে তিনা নামের মেয়েটি যেন বাসা বাঁধে। তবে তিনার মনে বাসা বাঁধতে রিয়াজকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। এভাবে যখন চলছিল তখন হঠাৎ একদিন রিয়াজ প্রেমের প্রস্তাব দেন তিনাকে। সেসময় তিনা শুটিংয়ের জন্য বিদেশে যাচ্ছিলেন। এয়ারপোর্টে থাকাকালীন রিয়াজ তাকে ফোনে প্রস্তাব করেন। তিনা অবশ্য কোনো উত্তর দেননি তখন। তিনার উত্তর পাওয়ার জন্য ২০ দিন অপেক্ষা করতে হয় রিয়াজকে। যেদিন তিনা বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এলেন ঠিক সেদিন বিকেলেই অবশেষে ভালোবাসার প্রস্তাবে রাজি হন তিনা। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। তাদের ভালোবাসার সংসারে রয়েছে এক পুত্রসন্তান।

মোশাররফ করিম-জুঁই

ছোটোপর্দা ও বড়োপর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ করিম ও অভিনেত্রী জুঁই করিমও ভালোবেসে ঘর বাঁধেন। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের চার বছর আগে থেকে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক শুরু। ঢাকার মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় মোশাররফের এক বন্ধুর কোচিং সেন্টার ছিল। সেখানেই মূলত মোশাররফের সঙ্গে জুঁইয়ের প্রথম পরিচয়। এরপর একটা সময় জুঁইকে ভালো লাগার কথা প্রকাশ করেন মোশাররফ। জুঁইও পছন্দ করতেন তাকে। তারপর থেকেই শুরু ভালোবাসার যাত্রা। তাদের ২০ বছরের সুখের সংসারে রয়েছে এক ছেলে সন্তান।

তৌকীর আহমেদ-বিপাশা হায়াত

নব্বইয়ের দশকের আর এক জনপ্রিয় জুটি ছিলেন তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত। এক বন্ধুর আমন্ত্রণে চারুকলায় আসেন তৌকীর আহমেদ। সেখানে এসে বিপাশার ছবি আঁকা দেখে মুগ্ধ হন অভিনেতা তৌকীর আহমেদ। সেখান থেকেই ভালো লাগা শুরু। এরপর বিটিভিতে প্রচারিত জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘রূপনগর’ অভিনয়ের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়। এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতেই ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুলাই তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। এ জুটির ভালোবাসার সংসারে পূর্ণতা দিয়েছে দুই সন্তান। শোবিজের অন্যতম সুখী দম্পতি তৌকীর-বিপাশা। ২৫ বছরের সংসারজীবনে তারা এখনো অটুট। বেঁচে থাকুক ভালোবাসা।