নিসর্গবাস -দিল আফরোজ রিমা

17 May 2023, 12:56 PM মুক্তগদ্য শেয়ার:
নিসর্গবাস  -দিল আফরোজ রিমা

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]


ননিফল ক্যান্সার নিরাময়সহ আরো নানান ঔষধি গুণে ভরপুর

ননিফলের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘মরিন্ডাসিট্রিফলিয়া’। এটি একটি আফ্রিকান ফল। এছাড়াও এই গাছটি ক্রান্তীয় অঞ্চলে অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশে জন্মায়। আমাদের দেশের যশোর, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় এই ফলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আমাদের দেশেও ননিফলের বাণিজ্যিক চাষ সম্ভব। তাই অনেকেই এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ করতে আগ্রহী।

ননিফল শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির এক মহৌষধ। যদিও এখন পর্যন্ত অনেকের কাছেই এই ফলটি অপরিচিত। তবে, বর্তমানে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ঔষধ নির্মাণকারী সংস্থা ননিফলের জ্যুস বোতল ভর্তি করে বাজারজাত করছেন। যুবসমাজের একটা বড়ো অংশ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর শরীর গঠনের জন্য বর্তমানে এ ফলটির প্যাকেটজাত জ্যুস পান করছেন।

- তাই নাকি। দারুণ ব্যাপার তো ম্যাডাম।

- হ্যাঁ, এই ফলে রয়েছে কিছু অসাধারণ উপকারিতা যেগুলো আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। এমন কিছু গুণ রয়েছে এই ফলের যেগুলো আমরা জানিই না। আধুনিক গবেষণায়ও দেখা যায়, ‘ননীফলের’ রস ক্যান্সার প্রতিরোধেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ননিফলের পুষ্টিগুণ আরো বেশি।

এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই, বি, বি-২, বি-৬, বি-১২, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, প্যান্টোথেনিক এসিড, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, কপার, অন্যান্য মিনারেলসহ প্রায় ১৫০টিরও বেশি ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ ননিফল। ননিফলের রসে উচ্চ রক্তচাপ কমে, শারীরিক শক্তি বাড়ে, প্রতিরোধ করে প্রদাহ ও হিস্টামিন। ননিফলের খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়াও আরো যেসব উপকার মেলে সেগুলো হলোÑ ক্যান্সার প্রতিরোধক।

- ম্যাডাম এ গাছ তো সবার বাগানে থাকা প্রয়োজন।

-হ্যাঁ, কিন্তু সবাইকে আগে জানাতে হবে। কারণ না জানলে গুরুত্ব বুঝবে কি করে ?

যাহোক, বর্তমানে বিভিন্ন স্টাডি বলছে, ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ সমস্যার ক্ষেত্রেও ঔষধের মতো কাজ করে ননী ফল। কারণ এতে আছে ক্যান্সার ফাইটিং নিউট্রিইয়েন্ট এবং টিউমার ফাইটিং উপাদান। বিশেষত ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটা বেশ ভালো ফল দেখিয়েছে। এটি বডি ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। বডির ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করতে ননী ফলের রস অপরিহার্য। প্রতিদিন যদি ননীর রস খাওয়া যায়, তাহলে বিভিন্ন রোগ থেকে থাকবেন অনেক দূরে। কারণ এতে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। শরীরকে যেকোনো রকম ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তার ফলে শরীর থাকে সুস্থ।


স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে ননিফল

শরীরের অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ করার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রেস কমাতেও ননী ফল অসাধারণ কাজ করে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটা দেখা গেছে, ননী ফল মানসিক স্ট্রেস কমাতে বেশ সাহায্য করে। সঙ্গে মানসিক ভারসাম্যকে উন্নত করে। মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনকেও ভালো রাখতে ননী ফল উপকারী।

সর্দি কাশি সারাতেও ননিফলের ভূমিকা অনেক বড়ো। ননিফল খেলে সর্দি-কাশির এই সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে পারবেন। কারণ, এতে আছে অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান। তাই সর্দি, কাশি, জ্ব¡র এসব সমস্যা থেকে অনেকটাই দূরে রাখতে সক্ষম ননী।

হাড়ের সমস্যার ক্ষেত্রে ননী ফলের রস খুব উপকারী। এমনটাই মনে করছেন ফরটিস্ হসপিটালের চিকিৎসক ডক্টর আহুজা। তার দাবি, যারা হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, তাদের ক্ষেত্রে এই ফল খুব উপকারী। তারা যদি রোজ এই ফলের রস বা শরবত খেতে পারেন, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ভালো ফল পাবেন। ব্যথা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবেন। হাঁটুর তীব্র যন্ত্রণায় যারা ভুগছেন, তাদের এই ননী ফলের শরবত খাওয়ার কথা বলেন তিনি। আর্থ্রারাইটিসের সমস্যায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে এই ননিফল কিন্তু আশীর্বাদস্বরূপ।

- ম্যাডাম আমাদের সবারই এই ফল খাওয়া উচিত। আর খেতে হলে গাছ লাগানো জরুরি।

- জি আপা, ঠিক বলেছেন।

অনেকের শরীরেই ইউরিক এসিড বেশি থাকে। অর্থাৎ ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায় যেটার কারণে নানান সমস্যা হয়। হাঁটুতে প্রচন্ড ব্যথা থাকে। এছাড়াও আরো নানান সমস্যায় পড়তে হয়। এই বিরক্তিকর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যে কতটা কঠিন যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তারাই জানেন। সবসময় ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে ননী ফল, যেটা ইউরিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এনার্জি বাড়ায় ননিফল। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। যা নিমিষেই শরীরের ক্লান্তি দূর করতে দুর্দান্ত কাজ করে। এটি শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের ক্লান্তিই কমায়। এনার্জি লেবেল বাড়ায় ও শারীরিক বিভিন্ন ক্রিয়াগুলোকে উন্নত করতে সাহায্য করে, এমনটাই বলছেন বৈদ্যনাথের ক্লিনিক্যাল অপারেশন ম্যানেজার ডক্টর আশুতোষ গৌতম।

স্ক্যাল্পের যেকোনো ইরিটেশন যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, এমনকি খুশকির মতো সমস্যাও কমাতে সক্ষম এই ননী ফল। কারণ এতে আছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ যা স্ক্যাল্পের এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজ করে। তাই স্ক্যাল্পকে ভালো রাখতে খেতেই পারেন ননী।

- ম্যাডাম এবার বুঝতে পারছি আপনি কেন এসব গাছ লাগিয়েছেন।

- জি আপা, সম্পূর্ণটুকু শুনুন তাহলে আরো ভালো বুঝতে পারবেন। আপা, হেলদি স্কিনেও রয়েছেননিফলের ভূমিকা। শরীরের সঙ্গে সঙ্গে স্কিনকেও হেলদি গ্রোয়িং রাখতে সহায়ক ননিফল। এটি স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড ও হাইড্রেটেড রাখে, শুকিয়ে যেতে দেয় না। স্কিনের ময়েশ্চারকে হারিয়ে যেতে দেয় না। এই ফলের রস স্কিনে লাগাতে পারলে খুব ভালো। নাহলে খেলেও একই কাজ হবে। বিশেষত যাদের শুষ্ক ত্বক, তাদের স্কিন ঠিক রাখতে এই ফল খুব ভালো কাজ করে।

এই ফল ত্বকের বয়স ধরে রাখে। স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখার সঙ্গে সঙ্গে ননিফলের আরেকটা খুব ভালো গুণ হলো অ্যান্টি-এজিং হিসেবে কাজ করে। স্কিনকে রাখে টানটান, সতেজ। কারণ, এতে আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই ত্বকের বয়সকে ধরে রাখতে ননিফল খেতে শুরু করুন। 

 [চলবে]