সৌন্দর্যে পূর্ণতা আনে সুন্দর চুল

06 Jan 2021, 03:19 PM রূপচর্চা শেয়ার:
সৌন্দর্যে পূর্ণতা আনে সুন্দর চুল

নারী সৌন্দর্যে পূর্ণতা আনে সুন্দর চুল। তাই উৎসব ও বিভিন্ন দিনগুলোতে প্রত্যেক নারীই চায় চুল আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে। সুন্দর চুলের জন্য প্রয়োজন চুলের বিশেষ যত্ন। চুলপড়া, চুল ভেঙে যাওয়া, চুল ঠিকমতো বৃদ্ধি না পাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। এই চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের বিকল্প নেই। এটি যেমন নিরাপদ তেমনি কার্যকর। আমাদের হাতের কাছেই এমন অনেক জিনিস রয়েছে যা চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই শীতে ঝলমলে চুলের জন্য কীভাবে যত্ন নেবেন তাই নিয়ে থাকছে বিশেষ আয়োজন....


চুলের যত্নে জোজোবা তেল

ভেষজ উপাদানে রুপচর্চা সব সময়ই কার্যকর। এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো এর কোনো পাশর্^প্রতিক্রিয়া নেই। জোজোবা তেল তেমনি একটি উপাদান। ত্বক ও চুলের যত্নে এর জুড়ি নেই। চুল সুস্থ রাখতে ও খুব দ্রুত লম্বা করতে জোজোবা তেল খুবই কার্যকর। সারাবিশ্বের নারীদের কাছে চুলের যত্নে জোজোবা একটি বিশ^স্ত নাম। 

আমেরিকায় জোজোবা তেলের প্রচুর গাছ দেখা যায়। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়াতে। তা ছাড়া মেক্সিকোতেও রয়েছে এই তেলের গাছ। তবে এর ব্যবহার বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই হয়। জোজোবা এক ধরনের ফল বা বাদাম। এর বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন কোট নাট, পিগ নাট, কফি বেরি ইত্যাদি।

নাম তেল হলেও এটি আসলে জোজোবা উদ্ভিদের ওয়াক্সি। ওয়াক্সি হলো তরল মোমের মতো পদার্থ। অ্যানিমেল ফ্যাটের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। আমাদের প্রতিটি চুলের জন্য সিবাসিয়াস গ্রন্থি রয়েছে যা থেকে সিবাম উৎপাদন হয়, চুলের ত্বক তৈলাক্ত হয়, ময়লা হয় ও চুল পড়ে যায়। জোজোবা তেল সিবাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, ময়লা পরিষ্কার করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এই তেল মাথার তালু ময়েশ্চারাইজার করে ফলে চুল দ্রুত লম্বা হয়। অ্যান্টিফাংগাল উপাদান রয়েছে এই তেলে, যার ফলে চুলে খুশকি হয় না এবং চুল পড়াও কমে যায়। জোজোবা তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ওমেগা ৬ এবং ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড ভকোস্যানাল নামে পরিচিত। চুলে কোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। চুল মসৃণ ও মজবুত হয় নিয়মিত জোজোবা তেল ব্যবহার করলে।


চুলের যত্নে জোজোবা তেল ব্যবহারের উপকারিতা

* মাথার তালুতে প্রাকৃতিক তেল ওঠা জোজোবা তেল নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে চুলের গোড়া ময়েশ্চারাইজ থাকে।

* এই তেল ব্যবহারে বাইরের ধুলোবালি চুলের গোড়ায় টিকে থাকতে পারে না ফলে মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

* এই তেল ব্যবহারে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, ফলে নানা ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ থেকে এটি মাথার ত্বক ও চুল রক্ষা করে।

* এই তেল ব্যবহারে চুল পড়া কমে যায়।

* জোজোবা তেল চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।

* এই তেল ব্যবহার করলে খুশকি দূর হয়।

* জোজোবা তেল ব্যবহারে চুলের চিটচিটে ভাব কমে এবং চুলের ভলিউম বাড়ে।

* রক্ত কও নিষ্প্রাণ চুল দ্রুত ঠিক করতে জোজোবা তেল ব্যবহৃত হয়।

* চুলের সিরাম হিসেবে কাজ করে এটি। এটি ব্যবহারে চুলের উজ্জ্বলতা ও নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়।

* নিয়মিত এই তেল দিয়ে চুলের গোড়া ম্যাসেজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে চুল সঠিক পুষ্টি পায়। যার ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।


ব্যবহারের উপায়

সাধারণ তেলের সঙ্গে এই তেল মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা বাদামের তেলের সঙ্গে জোজোবা তেল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে হালকা গরম করে মাথায় ম্যাসেজ করলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। যাদের চুল খুব রুক্ষ তারা কন্ডিশনারের সঙ্গে জোজোবা তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

জোজোবা তেলের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার পেলে তো কথাই নেই। তা ছাড়া নিজেও বাসায় তৈরি করে নিতে পারেন জোজোবা তেলের শ্যাম্পু। সমান পরিমাণ শ্যাম্পু উপাদান ও জোজোবা তেল মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন প্রিয় জোজোবা শ্যাম্পু। তা ছাড়া শ্যাম্পু করার পর যদি চুল খুব রুক্ষ মনে হয় তা হলে হালকা একটু তেল মাথায় দিয়ে নিতে পারেন এতে রুক্ষতাও দূর হবে আবার চুল চিটচিটে দেখাবে না। তো আজই সুপার মার্কেটগুলোতে খোঁজ করুন চুলের যত্নে অসাধারণ কার্যকর এই জোজোবা তেল। 


দ্রুত চুল ঘন করতে চাইলে... 

নারীর সৌন্দর্যে চুলের গুরুত্ব কতখানি তা বলাই বাহুল্য। এছাড়াও পুরুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রেও চুল অনেকটা ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু প্রতিদিনের নানা ভুলের কারণে এবং অযত্নে-অবহেলায় আমরা এই সৌন্দর্যের প্রতীক নষ্ট করে ফেলি। আগের মতো ঘন কালো লম্বা চুলের অধিকারিণী আজকাল খুব একটা নজরে পড়ে না। আবার পুরুষের টাক সমস্যাও বেড়ে গিয়েছে আগের চেয়ে অনেক। তবে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধির মূল কৌশলগুলো কিন্তু আপনার হাতেই। দ্রুত চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে এই ছোট্ট টিপসগুলো অনেক বেশি কার্যকর।


প্রতিবার গোসলের সময় শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না

চুল পরিষ্কার রাখা জরুরি, তবে প্রতিবার গোসলের সময় চুলে শ্যাম্পুর ব্যবহার মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। অতিরিক্ত শ্যাম্পুর ব্যবহারে চুলের প্রাকৃতিক তেল চলে যায়, যার ফলে চুল সহজে বাড়তে চায় না। তাই অন্তত ১ দিন পরপর চুল শ্যাম্পু করুন।


কাচিকে হ্যাঁ বলুন

অনেকেই ভাবেন চুল লম্বা করতে বা চুলের ঘনত্ব ঠিক রাখতে গেলে চুল একেবারেই কাটা ঠিক নয়। কিন্তু ৬ থেকে ১০ সপ্তাহ পরপর অন্তত ১ ইঞ্চি চুল কাটা চুলের জন্য খুবই জরুরি। এতে চুলের আগা ফাটা দূর হবে যা চুল বাড়তে সহায়তা করবে।

তেলের বিকল্প নেই

চুলের ঘনত্ব দ্রুত বৃদ্ধির জন্য তেলের অন্য কোনো বিকল্প নেই। চুলের বৃদ্ধিতে তেল যতটা কাজ করে অন্য কোনো কেমিক্যাল সমৃদ্ধ উপাদান তা করতে পারে না। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন তেল গরম করে চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করা উচিত। 


খাবারের দিকে নজর দিন

শুধু বাহ্যিকভাবেই নয়, চুলের বৃদ্ধি হয় ভেতরের পুষ্টিগুণ থেকে। আপনি যদি খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর এবং চুল বৃদ্ধিতে সহায়ক খাবার রাখেন তা হলে চুলের বৃদ্ধি দ্রুতই হবে। দ্রুত চুল বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ই, এ, ফলিক অ্যাসিড, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখুন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়।


চুল আঁচড়ানোর সময় মনোযোগ দিন

চুল অনেক জোরে ঘষে আঁচড়ানো, চুলে টান লাগা, চুলের জট একটানে ছাড়িয়ে ফেলার মতো ভুল করবেন না। এতে করে চুলের গোড়া নরম হয়, চুল পড়া বাড়ে এবং চুল ভেঙেও যায়। চুল খুব ভালো করে সময় নিয়ে আঁচড়ান।


ভেজা চুল তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখবেন না

চুল শুকানোর জন্য অনেকেই গোসল শেষে ভেজা চুল তোয়ালেতেই পেঁচিয়ে রাখেন যা চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে চুলের গোঁড়া একেবারেই নরম হয়, যার কারণে চুল পড়া বাড়ে। চুল বৃদ্ধি একেবারেই কমে যায়। গোসল সেরে ফ্যানের বাতাসে চুল ছড়িয়ে শুকিয়ে নিন এবং অবশ্যই চুল ঝাড়ার কাজটিও করবেন না।


সবশেষে একটু ব্যায়াম

প্রতিদিন একটু করে ব্যায়াম করলে শরীর ফিট থাকার পাশাপাশি রক্ত সরবরাহ ঠিক থাকে। যার ফলে চুলও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয় না। 

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন