আজিজ উল্লাহ চৌধুরীর কিছুটা রাগ হতে লাগল!
সকালে তাকে তিনটি জরুরি সভা সেরে তারপর এই কর্মশালায় আসতে হয়েছে। এটি আবার বাঘা বাঘা নারীবাদীদের নিয়ে। নারীদের সভায় যেতে দেরি হবে আর তারা ছেড়ে কথা কইবে না এটি ভাবা যায় না। তাকে নিয়ে কেউ পেছনে কথা বলুক এটা তিনি পছন্দ করেন না। সবসময় তাই নারীদের সামনে অন্তত তার ভাষায় ‘পাংচুয়াল’ থাকার চেষ্টা করেন। তারপরও তার দেরি হয়। আজ তো দুই ঘণ্টা দেরি হয়ে গেল। এখন কর্মশালা শেষ হব হব করছে। কে বিশ্বাস করবে তার এখনো খাওয়া হয়নি। পেটের মধ্যে ছুঁচোয় ডন কষছে। কিন্তু নারী মন্ত্রণালয়ের প্রধান হওয়ার পর এখন আর নারীদের সভা বাদ দিয়ে খেতে বসা যায় না। আজকের সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সব নারীনেত্রীগণ এসেছেন। নারীউন্নয়ননীতি নিয়ে আলোচনা। নারীউন্নয়ননীতি নিয়ে তো তারা জরুরি অবস্থার মধ্যে ফুটকি কাটতে ছাড়ছেন না।
প্রথমে এলেন দেরিতে। তারপর দেখেন অবস্থা ভালো নয়। ইতোমধ্যে কয়েকখানা গরম বক্তৃতা ছেড়েছে কেউ কেউ। এখন স্নিগ্ধ ভাষায় কথা বলে চলেছেন জনৈক লেখিকা। ইনি আবার লেখিকা বললে ক্ষেপে যান। তার ফেমিনিন জেন্ডার চিহ্নিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। কথাবার্তাগুলো ভালো বোঝা যাচ্ছে না। কী বলতে চায় মেয়েরা তা যদি খোদা তুমিও বুঝতে কোনোদিন। কিন্তু একজন প্রকল্প প্রধান সরকারি কর্মকর্তা হলে তাকে বুঝতে হবে। নইলে ডোনেশনের টাকা নিয়ে একটা কেলেঙ্কারী অবস্থা হবে।
হলঘরের দরজা পর্যন্ত এসে কে কথা বলছে শুনবার জন্য তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। পেছনে তার গতির সাথে তাল রেখে হার্ড ব্রেক কষে দাঁড়ালো সহকারী সচিব রোজানা।
-স্যার!
-দাঁড়ান, একটু শুনি আমার অবর্তমানে ওরা কেমন আমার পিন্ডি চটকায়!
রোজানা মুচকি হাসলো।
-নাহ্! ভালো কথাই বলছে স্যার, আপনি দেরির কারণ বলে নেবেন। এখানে যারা এসেছে সবাই ভালো মানুষ।
-ভালো বলতে কী বোঝাচ্ছেন, কামড়ায়, না?
-কী যে বলেন স্যার, মেয়েদের সম্পর্কে আপনার এই ধারণা? আপনি না মেয়েদের ভালোবাসেন, তাদের উন্নয়নের দায়দায়িত্ব আপনার হাতে ন্যস্ত। সবাই বলে আপনার মতো সমানাধিকার সচেতন সরকারি কর্মকর্তা কম আছে।
-কম আছে! হায়! রোজানা জানে না, এই মুহূর্তে আজিজ সাহেব ভাবছেন, কেন যে এই দায়িত্ব নিতে গেলাম! তিনি সততার সাথে রোজানাকে বলেই ফেললেন- জেন্ডার সচেতন হতে গিয়ে কি বদনাম ঘাড়ে নিয়েছি জানেন? কেউ কেউ হাসাহাসিও করে, বলে আজিজ সাহেব বেগম মহলের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
-এদেরই তো বেশি করে জাগাতে হবে। মানুষের ভালো গুণকে যারা হাস্যকরভাবে ব্যাখ্যা করে গুণের অপমৃত্যু ঘটাতে চায় তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। স্যার চলুন। নইলে আরো দেরি হয়ে যাবে।
চৌধুরী কক্ষের ভেতরে পা রাখেন। ঢুকেই ক্ষমা চাওয়ার পর্বটা সেরে ফেলতে বলে ওঠেন- আপনাদের সবার কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থী। কয়েকটা মিটিং সেরে আসতে গিয়ে দেরি হলো। আপনারা আমার জন্য বসে না থেকে কাজ শুরু করেছেন দেখছি। ভালো করেছেন। সত্যিই আমি... এই পর্যন্ত বলে আজিজ সাহেব কী দেখে হঠাৎ যেন একেবারে স্পিকটি নট হয়ে যান!
তিনি কী দেখলেন- হায় খোদা! কী দেখলেন তিনি ? তিনি চোখ দুটো রগড়ে নিলেন ভালো করে। ধীরে ধীরে মুখের হাসি একটু কমতে না-দিয়ে গিয়ে নিজের আসনে বসলেন। নিজের চোখকে বিশ্বাস হলো না তার। কিন্তু শব্দমালা কানে প্রবেশ করে তাকে সচেতন করে তুলল। তিনি বিস্মিত হয়ে দেখলেন প্ল্যাটফর্মের চেয়ারগুলোর একটায় তার জননী গুলনাহার চৌধুরী বসে আছেন।
সভানেত্রী বলছেন- এতক্ষণে আমাদের বিশেষ অতিথি এসে গেছেন। তাকে দিয়ে আমরা কর্মশালার শেষ করতে পারি, কী বলেন।
রোজানা বলে উঠলেন- স্যার সত্যিই দুঃখিত! এত ব্যস্ততার মঝেও যে তিনি আসতে পেরেছেন তার জন্য আসুন সবাই তাকে ধন্যবাদ জানাই। স্যার কিন্তু অত্যন্ত পজিটিভ একজন মানুষ।
-প্লিজ, আপনারা আলোচনা চালিয়ে যান- আজিজ সাহেব অবশেষে কথা বললেন।
মা এখানে ? সকালবেলা অবশ্য গাড়ি ফ্রি আছে কি না জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার একাধিক সভা আছে জেনে তিনি আর কিছু স্পষ্ট করে বলেননি। মা এইসব নারীবাদীদের মধ্যে কী করছেন ? আজিজ সাহেবের মনে হলো দুনিয়াটা ওলট-পালট হয়ে গেছে। তিনি নিজে বাস্তব পৃথিবীতে বসে নেই। তার মা ঘোমটা পরা নন। কিন্তু তারপরও এত স্নিগ্ধ ও ঘরোয়া যে তাকে তিনি এমনতরো একটা বহির্মুখী নারীদঙ্গল পরিবেষ্টিত স্থানে ভাবতে পারেন না। তিনি এমনকি এও জানেন না যে, তার মা তার বাসার বাজারও করে থাকেন।
-নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে আমরা বহুদিন ধরে আলোচনা দেনদরবার করে এসেছি। এতদিনে এর একটা খসড়া হাতে পেয়ে স্যারকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কারণ, তার আমলেই এই এতদিনের স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে- জনৈকা বলে উঠল। জোর হাততালি উঠল।
আজিজ সাহেব এতক্ষণ একটু অপ্রস্তুত ভাবের মধ্যে থাকলেও হাততালির শব্দ তার মনে কর্তব্যবোধ জাগিয়ে তোলে।
মা এখানে কেন ? তার মনে ঘাই মারছে এই জরুরি প্রশ্নটি।
কিন্তু তিনি হেসে বলতে শুরু করেন- আপনাদের ধন্যবাদ। আপনাদেরই বিরতিহীন দাবির ফলে সরকার উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছে যে, নারীউন্নয়ননীতিমালার কাজটি জরুরিভিত্তিতে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। নেপোলিয়ন বলেছেন, যে জাতি মাতাকে সম্মান দেয় না, সে জাতি উন্নত হয় না।
কথাটা বলেই তার মনে হয়, ভুল বললেন কি না ? লোকটা নেপোলিয়ন কি ?
কী হচ্ছে আজ তার ? তার আত্মবিশ্বাস কমে গেছে না কি ? তিনি ভুল বললেও তাকে এখানে চ্যালেঞ্জ করতে যাচ্ছে না কেউ। তবু তিনি হাসিমুখ করে এদিক-ওদিক তাকান।
উপস্থিত অংশগ্রহণকারীগণও নড়েচড়ে বসেন। তার এদিক-ওদিক তাকানোর মানে অনেকেই জানেন। তিনি এবার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবেন।
-তবে এটাও আপনাদের স্বীকার করতে হবে, আমাদের জাতিগত একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমাদের পরিবারগুলো মাকে অসম্ভব সম্মান দেয়। আপনারা যে স্বাধীনতা চাইছেন, এই ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে কোনো উন্নয়নই হতে পারে না। পরিবার আমাদের সংস্কৃতির আসল রূপ ধারণ করে। লোক-পরম্পরায় আমরা যেসব ভালো আচার সংস্কার পেয়েছি, সেসব হারিয়ে ফেললে আমাদের পরিচয়ই হারিয়ে ফেলব। আপনাদের একটা গল্প বলিÑ গল্প নয় সত্য ঘটনা। আমার মায়ের কথা। আমার মা অত্যন্ত স্বল্পভাষী। এই যে আপনাদের সাথেই বসে আছেন। মা কিন্তু বাবার কথা ছাড়া একটা কদম সামনে দিতেন না। দু’জনের বোঝাপড়া এত ভালো ছিল। মানে আমরা ভাই-বোনেরা তাই দেখে বড়ো হয়েছি। আমার মনে আছে, একবার মা উঠানের একপাশে সারি বেঁধে দশটি মেহগনী গাছ লাগান। বিকেলে বাবা এসে দেখে খুব রাগ করলেন যে, তার অনুমতি ছাড়া গাছ লাগানো হয়েছে। আমার মনে আছে, মা রাতের বেলায় গাছগুলো তুলে তার বোনের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। এই যে মা স্বামীর ইচ্ছাকে সম্মান দিলেন এটি দুর্লভ বৈশিষ্ট্য। একমাত্র আমাদের দেশেই পরিবারের দুইজন প্রধান কর্তাব্যক্তি এই অত্যন্ত মার্জিত ব্যবহার দিয়ে পরস্পরকে জয় করে থাকেন। যুগ-যুগ ধরে নারীরাই এমন সব অসাধারণ ভদ্র ব্যবহার লালন করে এসেছেন। তাদের কাছ থেকে আমরা সন্তানেরা পেয়েছি। আমাদের কাছ থেকে আমাদের সন্তানেরা পাবে।
তার কথায় উপস্থিত তরুণীদের মধ্যে কিছুটা চাঞ্চল্য দেখা গেল।
কিন্তু কর্মশালার সঞ্চালক দ্রæত কর্মকর্তা মহোদয়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে পরবর্তী এজেন্ডা উত্থাপন করলেন। এজেন্ডা পাস হয়ে গেল। কবে নারী উন্নয়ন বিষয়ক নীতিমালা সংসদীয় কমিটিতে কীভাবে উত্থাপন হবে সে বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হলো। পরামর্শ লেখাও হলো।
সবশেষে আজিজ সাহেব সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে গর্বভরে মায়ের পাশে এসে তার পদধূলি নিয়ে তার সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কর্মশালা শেষের ভাষণ দিতে সঞ্চালক মাইক হাতে তুলে দিলেন সভার বিশিষ্ট জননীর হাতে।
আজিজ সাহেব দেখলেন তার জননী মাইক হাতে নিয়েছেন, যেমন অনেক নারীনেত্রীকে তিনি অস্বস্তি নিয়ে বহুবার মাইকে কথা বলতে দেখেছেন। মায়ের হাতে মাইক। মা কথা বলবেন। মা কখনো কথা বলেছেন কি মাইকে ? তিনি দেখেননি। মা কি বলবেন ? মা তো বাবার কথাকেই কথা ভাবতেন চিরকাল। আজন্ম তিনি তাই দেখে এসেছেন। তার নিজস্ব কোনো কথা থাকতে পারে, সে অসম্ভব ঘটনাটি তিনি এইমাত্র অবলোকন করতে শুরু করেছেন। তিনি বিস্মিত হয়ে শুনলেন গুলনাহার চৌধুরী অত্যন্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠে মাইকে বলছেন, কর্মশালা শেষের ঘোষণা দেবার আগে আমি দু’-একটি কথা বলতে চাই, মানে যদি আপনারা অনুমতি করেন।
সভার সবাই একযোগে বলে উঠলেন, জি খালাম্মা বলেন!
আজিজ সাহেব আবার অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন। শেষের আগে আর কী কথা থাকে ? মায়ের নিজের কোনো মন্তব্য! তার কি নিজের কোনো মন্তব্য থাকতে পারে ? সাজেশন! তিনি কল্পনায় উপস্থিত নারীনেত্রীদের ভ‚মিকায় দেখার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তার মাথার ভেতর মায়ের তেমন কোনো ছবি নেই।
গুলনাহার খুবই নম্র ভঙ্গিতে মাইক হাতে নিয়ে বসেছেন। উনি যদি এখন কথা বলতে গিয়ে জড়িয়ে যান তাহলে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাবেন আজিজ সাহেব। কিন্তু আজিজ সাহেব এও বুঝতে পারছেন যে, তার কিছু বলা সঙ্গত নয়। তিনি উদ্বেগের সাথে চেয়ে রইলেন।
-দুই একটি যে কথা বলতে চাইলাম এই সভার সবার স্বার্থে। সচিব মহোদয় বললেন, খুব জ্বলজ্বলে উদাহরণ টেনে বললেন তার মায়ের কথা। মা রাতের বেলায় গাছগুলো তুলে তার বোনের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কারণ তিনি তার স্বামীর বিনানুমতিতে গাছগুলো লাগিয়ে যে ভুল করেছেন তা তিনি উপলব্ধি করেছেন। এই মা কি তার স্বামীর ইচ্ছাকে সম্মান দিয়েছেন না কি নিজের ইচ্ছাকে অসম্মানিত হতে দেখে প্রতিবাদ করেছেন ?
কথা ক’টি শুনে আজিজ সাহেব হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন ? মা কি রেগে গেলেন। তিনি কখনো মাকে রাগ করতে দেখেননি। বরং মা বাবার, তার, বোনের, এমনকি পুত্রবধূর রাগও ঠান্ডা মাথায় সামলেছেন। গৃহের সদস্যদের বিচিত্র স্বভাবকে সামলাতে তিনি অদ্বিতীয়।
মঞ্চে গুলনাহার তখনো বলে চলেছেন, তিনি আরো বলেছেন একমাত্র আমাদের দেশেই পরিবারের দুই জন প্রধান কর্তাব্যক্তি এই অত্যন্ত মার্জিত ব্যবহার দিয়ে পরস্পরকে জয় করেছেন। যুগ-যুগ ধরে নারীরাই এমন সব অসাধারণ ভদ্র ব্যবহার লালন করে এসেছেন। তাদের কাছ থেকে আমরা সন্তানেরা পেয়েছি। আমাদের কাছ থেকে আমাদের সন্তানেরা পাবেন। আমি বলব, এ কথা ভুল কথা। ওই মা স্বামীকে জয় করতে মার্জিত ব্যবহার করেননি। স্বামীর অমার্জিতভাবে স্ত্রীর স্বাধীনতা হরণের কাজটি তাকে ব্যথা দিয়েছে, অভিমানী করেছে। আজকের কর্মশালায় অনেক বক্তা উদাহরণ টেনে বলেছেন যে, নারীর হাতে কৃষির আবিষ্কার হয়েছে। সেই নারী একটি চারাগাছ লাগাতে গেলে তার স্বামীর অনুমতির দরকার হয় আজও, নইলে স্বামী তাকে ভর্ৎসনা করবে। এদেশে এমনই জীবন নারীদের। কত তুচ্ছ বিষয়ে এদেশে নারীদের স্বাধীনতা হরণ হয়, আপনারা ভেবে দেখেছেন কি?
আজিজ সাহেবের মাথা ঘুরছে। মা এসব কী বলছেন ? মায়ের দিকে তিনি তাকিয়ে থাকলেন।
ব্যাপারটি যে এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায় তা তো তিনি কখনো ভেবে দেখেননি। হায় খোদা! সব কথারই বিপরীত একটি কথা থাকে। এত লেখাপড়া করেও তিনি সেই বিপরীত দিকের কথাটি বুঝতে পারেননি আজও।
তার কানে এসে ঘা মারছে মায়ের কণ্ঠ।
-সচিব সাহেবের মায়ের সেই নীরব প্রতিবাদ তার স্বামীর কাছে পৌঁছায়নি। এমনকি তার সন্তানের কাছেও পৌঁছেনি। আমি চাই এদেশের প্রত্যেক নারী এ-বার্তা প্রতিদিন তাদের কানে পৌঁছাতে চেষ্টা করে যাবেন। তাদের ভুল ধরিয়ে দেবেন। নারীর নীরবতা আনুগত্য নয়! তার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়া, কখনো কখনো অহিংস প্রতিবাদ! নীরবে নিজের ইচ্ছার গলাটিপে মারা। যে মানুষ নিজের ঘরে ইচ্ছাহীন মেরুদণ্ডহীন অবস্থানে থাকে, তাকে সন্তান কীভাবে সম্মান দেবে ? সে ভাববে মায়ের কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। এমন মায়ের কাছে সন্তান কিছু শেখে না। শিখলেও তা বড়ো হতে হতে সন্তান হারিয়ে ফেলে। একইসাথে হারিয়ে ফেলে তার মনুষ্যত্ব, অন্যের ইচ্ছার মূল্য দেওয়া, অন্যকে স্বাধীন মানুষ ভাবতে শেখা। পরিশেষে আমি মনে করি, নারীউন্ন্য়ননীতিমালার যে খসড়া আমরা পেলাম তা যেন হয় ব্যক্তিত্বময় নারীদের এগিয়ে দেবার হাতিয়ার। তা যেন দেশের নারীসমাজ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হয়ে না ওঠে। এই আশা ব্যক্ত করে আমি আজকের এ কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করছি।
আজিজ সাহেবের পা আটকে আছে মাটিতে। রোজানা তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
-খালাম্মা কী চমৎকার কথা বলেন স্যার! আপনি তো কখনো বলেননি আপনার মা এত সচেতন একজন নারী। চলুন স্যার খেতে চলুন।
সঞ্চালক মাইকে সবাইকে খেতে যেতে অনুরোধ করছেন।
আজিজ সাহেব উপলব্ধি করলেন, মায়ের চোখে জীবনকে দেখার সুযোগ পেলেও, তার কিছুই তিনি গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে তার কোনো ভুল নেই। তিনি দেখলেন, মা এগিয়ে আসছেন তারই দিকে।
বহুকাল পর তার মনে পড়ল শৈশবে সাহিত্য পড়ার সময় তিনি ‘সমারসেট মম’কে উচ্চারণ করতেন ‘সমারসেট মগাম’। মুহূর্তে তার অনুভ‚তিতে শৈশবের সেই মুহূর্তটি হাজির হলো। তার মনে হলো, এতদিন যা কিছু ভুল পড়েছেন, তা শুদ্ধ করতে এগিয়ে আসছেন তার জননী। এই জননীর মুখোমুখি দাঁড়াতে সহকারী সচিব আজিজ সাহেব শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছেন।