...চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্ত‚প
আম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশত্থের করে আছে চুপ ;
ফণীমনসার ঝোঁপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে ;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিল ;
-জীবনানন্দ দাশ
হিজল মাঝারি আকারের চিরহরিৎ গাছ। এর বাকল ঘন ছাই রঙের ও পুরু ; ডালপালার বিস্তার চারদিকে। এই গাছ ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। জলাবদ্ধ জায়গায় টিকে থাকতে পারে। হিজল গাছ দীর্ঘদিন বাঁচে। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে খাল-বিল, নদী-নালার ধারে হিজল গাছ দেখা যায়। হিজলের কাঠ নরম, সাদা বর্ণের, মসৃণ ও টেকসই। পানিতে নষ্ট হয় না বলে নৌযান বানাতে হিজলের কাঠ ব্যবহার করা হয়। সাধারণ মানের আসবাবপত্র তৈরি করতেও হিজলের কাঠ ব্যবহার করতে দেখা যায়। জ¦ালানি হিসেবেও হিজল কাঠের বেশ চাহিদা রয়েছে। হিজলের আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়ায় হলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই বৃক্ষ ব্যাপক বিস্তৃত।
হিজল গাছে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মসে ফুল আসে। গোলাপি রঙের লম্বা পুষ্পদÐের মধ্যে অসংখ্য ফুল ঝুলন্ত অবস্থায় ফোটে। রাত যত গভীর হয় ততই হিজল তার সৌন্দর্য বিকশিত করতে থাকে। সকালের আলোয় ঝরে যায় হিজল ফুল। সকালে হিজলতলা গোলাপি রঙের চাদরপাতা বিছানার মতো দেখায়। ফুল ফোটার কালে রাতে বা ভোরে হিজল গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে হিজল ফুলের মাদকতাপূর্ণ মিষ্টি গন্ধ পথচারীকে মাতাল করে দেয়।
লেখা : শ্যামল কায়া