কাবাডি খেলার ইতিহাস ও নিয়মকানুন...

14 Feb 2023, 02:44 PM ক্রীড়াভুবন শেয়ার:
কাবাডি খেলার ইতিহাস ও নিয়মকানুন...


উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা কাবাডি। বর্তমানে এই খেলাটি আন্তর্জাতিকভাবেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কাবাডি সব বয়সের ছেলেমেয়েরা খেলে থাকে। বিশেষ উৎসব বা পালা-পার্বণে বেশ আড়ম্বরপূর্ণভাবে কাবাডি খেলার আয়োজন করা হয়। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। পূর্বে কেবল গ্রামে কাবাডি খেলার প্রচলন দেখা গেলেও বর্তমানে সব জায়গায় কাবাডি খেলার প্রচলন আছে।

১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বার্মার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রæয়ারি মাসে কলকাতায় প্রথম এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে দিন যত যায় আস্তে আস্তে কাবাডি খেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

কাবাডি ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া [কেএফআই] ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের কাবাডি খেলা পরিচালনা কমিটির নাম পাকিস্তান কাবাডি ফেডারেশন।

বাংলাদেশে খেলাটি হা-ডু-ডু নামে পরিচিত এবং কাবাডির সঙ্গে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। হা-ডু-ডু খেলার এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়মকানুন নেই। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নিয়মকানুন দিয়ে খেলা হয়। বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে কাবাডি খেলাকে অফিসিয়াল স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ইরানে কাবাডির স¤প্রদায় গঠিত হয় এবং একই বছর তারা এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনে যোগদান করে। এরপর ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তারা আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনে যোগদান করে। ইরানে অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয় ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে।

কাবাডি নেপালেরও অন্যতম জাতীয় খেলা। বেশিরভাগ নেপালিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন কাবাডি খেলা শিখতে হয়। কাবাডি ভারতীয়, বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানি অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। যুক্তরাজ্যের কাবাডির পরিচালনা কমিটির নাম ইংল্যান্ড কাবাডি ফেডারেশন যুক্তরাজ্য।


খেলার নিয়মাবলি

মাঠ : কাবাডি খেলার বালকদের মাঠ লম্বায় ১২.৫০ মিটার এবং চওড়ায় ১০ মিটার। বালিকাদের কাবাডি খেলার মাঠ লম্বায় ১১ মিটার এবং চওড়ায় ৮ মিটার। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে যাকে মধ্যরেখা বা চড়াই লাইন বলে। এই মধ্য রেখার দুই দিকে দুই অর্ধে দুটি লাইন টানা হয় যাকে বলা হয় কোল লাইন। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে ১ মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে বলা হয় লবি।


সদস্য

প্রতিদলে ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতিদলের ৭ জন খেলোয়াড় একসাথে মাঠে নামে। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক তিনজন খেলোয়াড় বদালানো যাবে।


সময়

৫ মিনিট বিরতিসহ দুই অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে এবং মেয়েদের ২০ মিনিট করে খেলা হয়। খেলা শেষে যে দল বেশি পয়েন্ট পাবে সেই দলই জয়ী হবে। দু’দলের পয়েন্ট সমান হলে দু’অর্ধে আরো ৫ মিনিট করে খেলার জন্য সময় দেওয়া হয়। এরপরও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হয়।


পয়েন্ট

যদি কোনো খেলোয়াড় মাঠের বাইরে চলে যায় তাহলে সে আউট হবে। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট পাবে। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড়কে [একাধিক হতে পারে] স্পর্শ করে এক নিঃশ্বাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলেই, যাদের স্পর্শ করবে তারা সবাই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট করে পাওয়া যাবে।


সতর্কতা

এক নিঃশ্বাসে স্পষ্টভাবে পুনঃপুন কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে ‘দম নেওয়া’ বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হবে। বিপক্ষ কোর্টে একসাথে একাধিক আক্রমণকারী যেতে পারবে না। কোনো আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হবে।


কাবাডি বিশ্বকাপ

আদর্শ পদ্ধতির কাবাডি বিশ্বকাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশন [আইকেএফ] দ্বারা পরিচালিত একটি বহিরাঙ্গন আন্তর্জাতিক কাবাডি প্রতিযোগিতা, যাতে জাতীয় পুরুষ এবং মহিলা দলগুলো প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে। প্রতিযোগিতাটি এর আগে ২০০৪, ২০০৭ এবং ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়। এই টুর্নামেন্টগুলোতে ভারত জয়ী হয়। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে শিরোপা জয়ের জন্য চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার ফাইনালে ভারত ইরানকে ৩৮-২৯ পয়েন্ট ব্যবধানে হারিয়েছিল।

ওয়ার্ল্ড কাবাডি ফেডারেশন নামে একটি নতুন কাবাডি সংস্থা প্রতিষ্ঠার পরে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে মালয়েশিয়ার মালাক্কায় বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়। এটি কাবাডি ইতিহাসের বৃহত্তম বিশ্বকাপ। যেখানে ৩২টি পুরুষ দল অংশগ্রহণ করে এবং পাকিস্তান বিজয়ী দল হিসেবে ঘোষিত হয়।


এশিয়ান গেমস

১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় দল এশিয়ান গেমসে পুরুষ এবং মহিলাদের কাবাডি প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। হ

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট