অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেলেরা ত্বক ও চুলের যত্নে বেশ উদাসীন থাকে। আবার অনেকে লজ্জা পায় এই ভেবে যে, আমি আমার হেয়ার, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনব, সবাই কী ভাববে। কখনো কখনো ত্বকে ব্রন, দাগ দেখা দিলে ভাবে যে, এটা তো এমনি এমনি চলে যাবে। ছেলে হয়ে ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়াটা বেশ লজ্জাকর। বের হয়ে আসতে হবে এ ধারণা থেকে। অনেকে অবশ্য যে সচেতন নয় তা নয়, আমার কাছে অনেকেই আসেন রেগুলার স্কিন কেয়ার জানতে। কোনো উৎসবের আগে গ্রুমিং করতেও আসে। আর যাদের বয়স চল্লিশোর্ধ তারা জানতে চায় কীভাবে ত্বকে বয়সের ছাপ কমানো যায়।
রেগুলার স্কিন কেয়ার
প্রথমে আসি রেগুলার স্কিন কেয়ার নিয়ে। যারা শুরু থেকে আমার সঙ্গে আছেন তারা হয়ত খানিকটা ধারণা পেয়ে গেছেন যে পরিচ্ছন্নতা, যত্ন ও সুরক্ষা এই তিন বাহিনী নিয়েই ত্বক ও চুলের যত্নের যাত্রা। ত্বকের ধরন অনুযায়ী যেকোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে। ছেলেরা সাধারণত ফোমি ক্লিনজার ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সপ্তাহে অন্তত একবার এক্সফোলিয়েটর দিয়ে ডিপ ক্লিনজিং করতে হবে। দুবার করা ভালো, না হলে অন্তত একবার। ছেলেদের যেহেতু শেভিংয়ের বিষয়টি থাকে তারা কিন্তু ত্বকের জন্য অন্যান্য প্রোডাক্ট না কিনলেও শেভিং ক্রিম, জেল, আফটার শেভ ক্রিম এগুলোর প্রতি তাদের খুব দুর্বলতা থাকে। তবে, সতর্ক হবেন এ ধরনের প্রোডাক্টে ; কারণ, এখন যে ধরনের রেজার বা ইলেকট্রিক রেজার পাওয়া যায় সেগুলো এবং সেগুলোর মধ্যে যে ক্রিম ব্যবহার করা হয় তাতে কিন্তু কাটা ছেঁড়ার আশঙ্কা খুব কম থাকে তাই আফটার শেভ ক্রিম বা লোশনের প্রচলন এখন অনেকখানি কমে এসেছে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে আফটার শেভ লোশনে অ্যালকোহল থাকে যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এর পরিবর্তে আপনারা ত্বকের ধরন অনুযায়ী কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। শেভিং রেজার, ট্রিমার সব সময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখবেন।
গোসলের পরেই শেভের জন্য উপযুক্ত সময়। এতে ত্বক আর্দ্র থাকে এবং ত্বকে থাকে না অতিরিক্ত ডেড সেল। বলা হয়, হেয়ার গ্রোথের ডিরেকশনে শেভ করতে হয়। তা না হলে ইনগ্রোন হেয়ার বা হেয়ার বাম্প দেখা দেয়। একে আমরা সিউডো ফলিকুলাইটিস বার্বি বলি। অনেক সময় নোংরা বা পুরনো রেজার ব্যবহারে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনও দেখা দেয়। ছেলেদের ত্বক সাধারণত একটু বেশি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাই প্রোডাক্ট কেনার সময় দেখবেন যে, এগুলো অয়েল ফ্রি কি না।
যাদের ত্বক ড্রাই বা সেনসেটিভ তারা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সেই ধরনের ক্লিনজার এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। ছেলেদের যেহেতু প্রচুর আউটডোর অ্যাক্টিভিটি থাকে, গাড়ি, বাইক চালানো, এ সকল কারণে সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে আসা হয়। আর অফিসে থাকলে ইনফ্রারেড এবং হাই এনার্জি ভিজিবল লাইট থেকেও সুরক্ষা দেবে ব্রড স্পেকট্রাম এন্টি অক্সিডেন্টযুক্ত সানস্ক্রিন।
নাইট কেয়ার রুটিন
স্লিপিং মাস্ক সপ্তাহে তিনদিন এবং বাকি তিনদিন কোনো সেরাম বা ক্রিম ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার করবেন। কারণ, ছেলেরা কোনো প্যাক ব্যবহার করে ১০ মিনিট অপেক্ষা করবে এটা তাদের জন্য একটা বাড়তি ঝামেলার মতো। তাই স্লিপিং মাস্ক একসঙ্গে স্কিন রিপেয়ারিং, ময়েশ্চারাইজিং এবং নারিশিং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট হিসেবে কাজ করে। চোখের নিচে আন্ডার আই ক্রিম এবং ঠোঁটে লিপবাম, চ্যাপস্টিক অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি দিতে ভুলবেন না।
চুল পড়া ও খুশকি
হেয়ার কেয়ারে সচেতন না হলেও হেয়ার ¯েপ্র, জেল, ফোম এগুলো ছেলেরা কিন্তু একটু বেশিই ব্যবহার করে। এর ফলে চুল পড়া, খুশকিও দেখা দেয় বেশি বেশি। যদিও চুল পড়া এবং খুশকির আরো অনেক কারণ আছে। এগুলোর পরিবর্তে কোনো কসমেসিউটিক্যালস, হেয়ার এসেন্স, হেয়ার সেরাম বা লিভ অন কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়মিত সপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। খুশকি থাকলে এন্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু, খুব বেশি চুল পড়ার সমস্যা থাকলে হেয়ার রিগ্রোথ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। সপ্তাহে বা দু সপ্তাহে অন্তত একদিন ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। এটি চুলের গভীর থেকে ময়লা, তেল এবং অন্যান্য হেয়ার প্রোডাক্টকে দূর করে। অনেকের প্রতিদিন শ্যাম্পু করার একটা অভ্যেস থাকে, এতে শ্যাম্পু চুল থেকে কিউটিকল এবং সেবামটাকে শুষে নিয়ে চুলকে রুক্ষ ও প্রাণহীন করে দেয় এবং সেই সঙ্গে স্কাল্পকে ড্রাই করে ফেলে। এতে স্কাল্প ডার্মাটাইটিস ও ইচি স্কাল্প দেখা দেয়। মাথার স্কাল্প হেলদি না থাকলে কখনোই চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকবে না। সুইমিং পুলে হেয়ার ক্যাপ ব্যবহার করবেন যা ক্লোরিন থেকে চুলকে রক্ষা করবে। অথবা পুলে নামার আগে যদি ক্যাপ না থাকে চুলটা একটু হালকা পানিতে ভিজিয়ে নেবেন, একটু কন্ডিশনারও লাগাতে পারেন। তাহলে ক্লোরিনের ঘনত্ব কমে যায়। প্রিম্যাচিউর গ্রে হেয়ারে কলপ বা কালার ব্যবহারে একটু সচেতন হবেন যেকোনো ধরনের কালার ব্যবহার করছেন।
বিশেষ যত্ন ও উৎসবের জন্য প্রস্তুতি
বছরজুড়ে ত্বক ও চুলের নিয়মিত যত্ন নিলে আপনার ত্বক ও চুল থাকবে সুস্থ ও প্রাণবন্ত। উৎসবের আগে খুব একটা বেশি এফোর্ট দিতে হয় না। কারণ, ছেলেদের যেহেতু মেকআপের বিষয়টি নেই এবং মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা পণ্য ব্যবহার করে অনেক কম তাই ছেলেরা কোনো স্কিন কেয়ার রুটিন যদি মেনে চলে তবে মেয়েদের তুলনায় ফলাফলও তাড়াতাড়ি আসে। বিয়ের আগে কনের মতো বরেরও গ্রুমিং প্রথা শুরু হয়েছে। কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে ত্বক বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে সমাধান করুন। প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন তার পরামর্শ মতে।
কোনো অ্যাস্থেটিক ট্রিটমেন্ট ঠিক আগ মুহূর্তে না নিয়ে কিছুদিন হাতে সময় নিয়ে শুরু করুন। তবে, যদি সময় বেশি না থাকে, মাত্র সাতদিন থাকে সেক্ষেত্রে হাইড্রা ফেসিয়াল, ডায়মন্ড ফেসিয়াল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট থেরাপি এই চিকিৎসাগুলো নেওয়া যায়। ধূমপান পরিহার করুন যা ত্বক ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
লেখক : ডার্মাটোলজিস্ট, শিওর সেল মেডিকেল বাংলাদেশ, ওউনার অ্যান্ড ফাউন্ডার রিজুভা কসমেসিউটিক্যালস লিমিটেড