কাতার বিশ্বকাপ ২০২২

21 Jun 2022, 11:46 AM ক্রীড়াভুবন শেয়ার:
কাতার বিশ্বকাপ ২০২২

বিশ্বকাপ ফুটবলের সবচেয়ে বড়ো আসর এবার বসবে মরুর দেশ কাতারে। এজন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুণছে আয়োজক দেশ কাতারসহ সারাবিশ্ব। কাতার বিশ্বকাপ শুরু হবে ২১ নভেম্বর ২০২২ এবং শেষ হবে ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২। আয়োজক দেশ হিসেবে যখন কাতারের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন থেকেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাদের। এরপরও নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এখন প্রায় সব প্রস্তুতি শেষের দিকে। কাতারে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে জুন-জুলাইয়ে না হয়ে এবার ২১ নভেম্বরে শুরু হতে যাচ্ছে। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতারের ৫টি শহরের ৮টি স্টেডিয়ামে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এবারের বিশ্বকাপ আয়োজনে অংশগ্রহণ করবে ৩২টি দেশ। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে কাতার ভ্রমণে আসে বিশ্বকাপ ফুটবলের স্বপ্নের ট্রফি। এই ট্রাফির জন্য লড়াই করবে বিশ্বফুটবলের নামিদামি ৩২টি দল। তাই এই স্বপ্নের ট্রফিটি একনজর দেখার জন্য কাতারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তের ফুটবলপ্রেমী মানুষ ছুটে আসেন। কাতারের সোক ওয়াফিক, অ্যাসপায়ার পার্ক, মেসোরির ডাউনটাউন দোহা এবং দোহা ফেস্টিভ্যাল সিটিতে মানুষের ঢল নামে। শুধু তাই নয়, ট্রফিকে ঘিরে অনেকেই সেলফি তুলে তৃপ্ত হয়েছেন আবার অনেকেই বিশ্বকাপের স্বপ্নের ট্রফিকে একনজর দেখেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলে যার যার গন্তব্যে ফিরে গেছেন।
জানা যায়, বিশ্বকাপের ট্রফিটি স্বাগতিক দেশ কাতারের বিভিন্ন শহরে ৬দিন ঘুরেছে। তারপর কাতার ভ্রমণ শেষে ট্রফি চলে যায় মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ দুবাইয়ে। ট্রফির সঙ্গে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ছিলেন দুই দেশের দুইজন বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড় ব্রাজিলের কাকা এবং স্পেনের ইকার ক্যাসিয়াস। বিশ্বকাপের ট্রফি এবার প্রথমবারের মতো ৩২টি অংশগ্রহণকারী দেশসহ ৫৩টি দেশে ভ্রমণে যাবে। এই ধারাবাহিকতায় ৮ জুন ৩৬ ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশেও এসেছিল বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি। একটি চার্টার্ড বিমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় ট্রফিটি। তারপর বিমানবন্দর থেকে নেওয়া হয় হোটেল রেডিসনে। ট্রফির সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিলেন ১৯৯৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ান কারেম্বু এবং অফিসিয়াল পার্টনার কোকাকোলার কয়েকজন কর্মকর্তা। ১২ মে স্বাগতিক দেশ কাতার থেকে কোকাকোলার আয়োজনে ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির বিশ্বভ্রমণ শুরু হয়। বিশ্বকাপের উন্মাদনা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতেই এমন আয়োজন করা হয়।
দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই বিশ্বকাপ উন্মাদনায় ভাসছে গোটাবিশ্ব। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও উন্মাদনার কমতি নেই। দেশের ফুটবল ভক্তরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে খেলা দেখার নানা আয়োজন নিয়ে।

যেসব স্টেডিয়ামে খেলা হবে কাতার বিশ্বকাপ
এবার মোট ৮টি স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ অনুষ্ঠিত হবে। স্টেডিয়ামগুলো হলোÑ আল সুমামাহ স্টেডিয়াম, রাস আবু আবুদ স্টেডিয়াম, এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম, খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, আল বাইত স্টেডিয়াম, লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম, আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম এবং আল জানুব স্টেডিয়াম।
আল সুমামাহ স্টেডিয়ামমরুভূমির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা আল সুমামাহ ৮টি স্টেডিয়ামের মধ্যে অন্যতম। এটিকে আল থমামাও বলা হয়ে থাকে। শুধু স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করে মরুভূমিতে গড়ে উঠেছে শহর। আল সুমামাহ স্টেডিয়াম দেখতে অনেক সুন্দর। এই স্টেডিয়ামটিকে টুপির আদলে ডিজাইন করা হয়েছে। স্টেডিয়ামটি কাতারের সুমামা অঞ্চলে অবস্থিত। এলাকার নামানুসারেই এটিকে সুমামাহ বলা হয়ে থাকে। আল সুমামাহ স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার।
রাস আবু আবুদ স্টেডিয়ামকাতার ফুটবল বিশ্বকাপের আরো একটি অন্যতম স্টেডিয়াম হলো রাস আবু আবদু স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামটিতে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলা হবে। দুই পাশে দুটি দৃষ্টিনন্দন লেকে ঘেরা এই স্টেডিয়ামটিরও ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার। ৪০ হাজার দর্শক একসঙ্গে বসে এই স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে পারবেন। লেক দুটি স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামকাতারের আল-রাইয়ান শহরে এডুকেশন কমপ্লেক্সে এই স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। এটি কাতার ফাউন্ডেশন স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। স্টেডিয়ামটি এডুকেশন সিটি কমপ্লেক্সের বিশাল এলাকার পূর্ব-দিকের অংশে অবস্থিত। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে স্টেডিয়ামটিকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। এই স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার। বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটির আসন সংখ্যা ২০ হাজারে কমিয়ে আনা হবে। এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের মোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামখলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামটি অনেক পুরনো। এটি ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই এটি কাতারের প্রধান ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত। এর ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার। এটি কাতারের জাতীয় স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটি কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত। দোহার স্পোর্টস সিটির অংশ খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটি কাতারের সাবেক আমির খলিফা বিন হামাদ আল থানির নামে নামকরণ করা হয়েছে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্টেডিয়ামটিকে জমকালো সাজে সাজানো হয়েছে।
আল বাইত স্টেডিয়ামআল বাইত কাতারের আরো একটি অন্যতম স্টেডিয়াম। এটি আলখোর স্টেডিয়াম নামে অধিক পরিচিত। এর ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হয়। এখানে কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আল বাইত স্টেডিয়ামে। আল বাইত আরবি নাম। এই স্টেডিয়ামটি মস্তবড়ো ঝিনুকের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। আল বাইত নির্মাণে রয়েছে শিল্পীর নিখুঁত তুলির ছোঁয়া। এই স্টেডিয়ামটিকে তাবুর আকৃতিও বলা যেতে পারে।
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামকাতার বিশ্বকাপের অন্যতম প্রধান স্টেডিয়াম হলো আইকনিক স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামটিতেই কাতার বিশ্বকাপ ২০২২-এর ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এর ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার। এটিও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে উদ্বোধন করা হয়। এটি একটি আধুনিক স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে খেলোয়াড় এবং দর্শকেরা অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা পাবেন। লুসাইল স্টেডিয়ামটি রাজধানী থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেহেতু এই স্টেডিয়ামটিতে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে তাই এর গুরুত্বও অনেক বেশি। সবুজ ঘাসে ঘেরা লুসাইল এলাকায় কাতারের অভিজাত শ্রেণির মানুষের বসবাস। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়ামটিতে বিভিন্ন ধরনের দামি এবং চমকপ্রদ লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।

আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম
আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামটি কাতারের রাজধানী থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি উদ্বোধন করা হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। এর ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার। আল রাইয়ান শহরে অবস্থিত বলে এই স্টেডিয়ামটি আল রাইয়্যান নামেও পরিচিত। এটি কাতারের জনপ্রিয় একটি স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপের ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে।
আল জানুব স্টেডিয়ামআল জানুব স্টেডিয়ামটি দেখতে নৌকার মতো। এটিও কাতারের অন্যতম একটি স্টেডিয়াম। এর ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার। আল জানুব স্টেডিয়ামটি বিশ্বকাপ খেলার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি একটি আকর্ষণীয় স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটি আল ওয়াক্রাহ শহরে অবস্থিত।

গ্রন্থনা : শহিদুল ইসলাম এমেল