দেখতে দারুণ সুন্দর হলদে পাখি গাছের ওপরের দিকে বাসা বাঁধতে ভালোবাসে। সারাপৃথিবীতে ৩০ প্রজাতির হলদে পাখি রয়েছে, বাংলাদেশে আছে দুটি প্রজাতি। ‘বেনে বউ’, ‘কৃষ্ণ গোকুল’, ‘ইষ্টিকুটুম’ প্রভৃতি নানা নামে এদের ডাকা হয়। হলদে পাখির চেহারা যেমন সুন্দর, তেমনি মিষ্টি তাদের কণ্ঠস্বর। এদের কণ্ঠ থেকে নানারকম স্বর বের হয়। এরা কখনো ‘চিয়া’ বলে ডাকে, কখনো ‘পিলোল’ শব্দে শিস দেয়। অনেক সময় এরা ঠিক যেন ‘খোকা হোক’ বলে ডেকে ওঠে। তাই অনেকে হলদে পাখিকে ‘খোকা হোক’, নামেও ডেকে থাকে। এদের গা ও ডানার পালকের রং উজ্জ্বল হলুদ আর বুক ও গলার কিছুদূর পর্যন্ত মিশমিশে কালো। ঠোঁট ও চোখের রং টকটকে লাল। এরকম হলুদ ও লালে মিলে পাখিগুলোকে সুন্দর দেখায়। এদের ঠোঁট ভীষণ ছুঁচালো। পা দুটো হালকা কালো।
হলদে পাখি শালিক, চড়–ই, টিয়া, কাকদের মতো কখনো মাটিতে নেমে চরে বেড়ায় না। এরা খুব লাজুক প্রকৃতির। গাছের ডালে পাতার আড়ালে বসে আপন মনে ডাকতে থাকে, মানুষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া মাত্র এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে যায়।
হলদে পাখিরা তুঁতজাতীয় গাছের চওড়া ছাল এনে গাছের দুই ডালে দুই মাথা আটকে তার ওপর শুকনো ঘাস বা গাছের শুকনো শেকড় কুড়িয়ে এনে পেয়ালার আকারে বাসা বানায়। এদের বাসায় কোনো আবর্জনা থকে না। তাদের নিজেদের মতোই বাসাও খুব সুন্দর। বাসাগুলোকে এক একটা দোলনার মতো দেখায়। বাসা তৈরির সময় স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই কঠোর পরিশ্রম করে। এমন পরিচ্ছন্ন ও দোলনাজাতীয় বাসায় বাস করে হলদে পাখিরা বেশ আরাম পায়।
বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এদের প্রজনন মৌসুম। সাদা রঙের বাদামি ফোঁটাযুক্ত ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিমে তা দিয়ে ১৫ থেকে ১৭ দিনের বাচ্চা ফোটায়। হলদে পাখি আকৃতিতে শালিক পাখির মতো। দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম ওরিওলিদি আর ইংরেজি নাম ওরিওল। হ লেখা : শ্যামল কায়া