নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে বিয়ের উৎসব। তাই এ সময়টাকে আমরা বিয়ের মৌসুম বলে থাকি। বিয়ের দিনটিকে নিয়ে চলে নানা ধরনের প্ল্যান। কনে এবং কনের আত্মীয়-বন্ধু-বান্ধব ব্যস্ত থাকেন নানা কাজে। নিমন্ত্রণপত্র বিলি, বিয়ের ভেন্যু নির্ধারণ, মেকআপ আর্টিস্ট বুকিং, ফটোগ্রাফি, ড্রেস-জুয়েলারি সিলেকশন আরো কত কিছু। আর বিয়ের আয়োজন, প্রস্তুতি পর্ব চলে অনেকদিন ধরে।
বিয়ের দিনের মূল আকর্ষণ কনের সাজ। সবার চোখ থাকে কনের দিকে। পিকচার পারফেক্ট ব্রাইডাল লুক দিতে গিয়ে একজন মেকআপ আর্টিস্ট তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছেন। সারাদিন ধরে শপিং, পানি না খাওয়া, অতিরিক্ত চা-কফি, কোমল পানীয় পান, নতুন পরিবারে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোÑ এসব কারণে বিয়ের কনে থাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। আর এর প্রভাব পড়ে ত্বকে ও চুলে, দেখা দেয় ডার্ক সার্কেল, ডিহাইড্রেটেড স্কিন, ব্রণ, ত্বকের কালো দাগ, চুলপড়া আরো অনেক কিছু। ফলে এসব সমস্যা আড়াল করতে মেকআপ আর্টিস্টকে ব্যবহার করতে হয় ভারি ফাউন্ডেশন, কনসিলার। তাই বিয়ের আগে ও পরে প্রত্যেক নববধূর মেনে চলা উচিত একটি পারফেক্ট স্কিন ও হেয়ার কেয়ার রুটিন। সহজবোধ্য করার জন্য আমি পুরো রুটিনটি সাতটি ধাপে সাজিয়েছি।
প্রথম ধাপ
ভালোভাবে পুরো মুখ ও শরীরের ত্বক পরিষ্কার রাখা। মুখ ও শরীরের ত্বক যেহেতু ভিন্ন তাই ক্লিনজারও হবে ভিন্ন। আর ক্লিনজার বেছে নিতে হবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী। সপ্তাহে দুবার স্ক্রাবার দিয়ে মুখ ও শরীর এক্সফোলিয়েট করতে হবে। একে আমরা ডিপ ক্লিনজিং বলি। দিনশেষে ঘুরেফিরে মুখে জমে থাকা ধুলোবালি ও মেকআপ, রিমুভার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ
গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ তা হলো ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা। শুষ্ক, তৈলাক্ত, মিশ্র, নাজুক আপনার ত্বক যেমনই হোক না কেন, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি। সপ্তাহে দু’বার ফেসিয়াল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে যা আপনার বিশেষ দিনে ত্বকে এনে দেবে বাড়তি উজ্জ্বলতা। রাতে ঘুমানোর সময় লিপ বাম ও আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
তৃতীয় ধাপ
মুখ, গলা ও শরীরের অনাবৃত অংশ যা সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে আসে এ সমস্ত স্থানে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে এবং দুই ঘণ্টা পরপর।
চতুর্থ ধাপ
পরিমিত বিশ্রাম এবং ঘুম।
পঞ্চম ধাপ
ব্যায়াম : প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট সময় ব্যায়ামের জন্য রাখুন। হাঁটা, ইয়োগা, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ এগুলো বেছে নিতে পারেন। এতে মন ও শরীর ফুরফুরে থাকবে এবং ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
ষষ্ঠ ধাপ
সঠিক খাদ্যাভ্যাস : কনের খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর পরিমাণে মৌসুমি ফল ও সবজি। প্রচুর পানি পান করুন, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, কমপ্লেক্স কার্ব অর্থাৎ যাকে বলে ব্যালেন্সড ডায়েট। এটিই হবে একজন নববধূর মিল প্ল্যান। পরিহার করুন চিনি, কোমল পানীয়, দুধ ও চিনিযুক্ত চা বা কফি।
সপ্তম ধাপ
একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে ত্বকের ধরন অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ত্বকে যদি কোনো সমস্যা বা রোগ থাকে তা আগে থেকেই ত্বক বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দিন। একদম শেষ মুহূর্তে এসে কোনো চিকিৎসা করবেন না। ত্বককে উজ্জ্বল, মসৃণ ও মেকআপের জন্য প্রস্তুত করতে নানা ধরনের এস্থেটিক রিজেনারেটিভ ট্রিটমেন্ট আছে।
চুলের যত্ন
অনুষ্ঠানগুলো এখন বেশ কিছুদিন ধরে হয়। যেমন ব্রাইডাল শাওয়ার, হলুদ সন্ধ্যা, সংগীত, মেহেদি, রিসেপশন, ফিরানি, ওয়ালিমা- এসকল কারণে চুলে অনেক ধরনের স্টাইল করা হয় আর চুলের ওপর চলে নানা ধরনের অত্যাচার। যেমন স্প্রে, হিট টুল, স্টাইলিং, কালার, টিজিং, পাফ এবং আরো অনেক কিছু। সে কারণে হেয়ার ডিটক্স ও হেয়ার পি আর পির মাধ্যমে এসকল ড্যামেজকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
আজ এ পর্যন্তই। নববধূকে শুভকামনা জানিয়ে শেষ করছি।
লেখক : কনসালটেন্ট, ডারমাটোলজিস্ট
সিওরসেল মেডিকেল বাংলাদেশ লিমিটেড, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২