বৃষ্টিগাছ

10 Oct 2021, 02:03 PM প্রকৃতি শেয়ার:
বৃষ্টিগাছ

বিশলতার দিকে থেকে বট-অশ্বথের পরেই রেইন ট্রি-র অবস্থান। উচ্চতা ও শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতিতে তরুরাজ্যে সে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমন্তিত। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পথের ধারে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সবুজ পত্র-পল্লবে সজ্জিত বিশালাকায় বৃষ্টিগাছেদের। 

রেইন ট্রি-র কা- বিশাল, শাখা উন্নত, বাকল গাঢ়-ধূসর, প্রায় কালোর কাছাকাছি, অমসৃণ, রুক্ষ, অনেকটা যেন পোড়া কাঠের মতো। এর শাখারাও বিশাল ও ঊর্ধ্বমুখী। তবে, প্রশাখারা আনত আর সে-কারণে এই গাছের শীর্ষদেশ ছত্রাকৃতির। পাতারা ঘন-সবুজ ও ছায়া-সুনিবিড়। শুনতে অবাক লাগলেও, লজ্জাবতীর সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা রয়েছে, যা বৈজ্ঞানিক সত্য। উভয়ের মঞ্জরি ও ফলে দারুণ সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। রেইন ট্রি-র পাতারা লজ্জাবতীর মতো লাজুক ও স্পর্শকাতর না হলেও আলো ও অন্ধকারে সংবেদনশীল। বিকালের ম্লান আলোয় ছোটো ছোটো সবুজ পাতারা ধীরে ধীরে নতমুখী হয়ে ম্রীয়মাণ হয়ে পড়ে। সূর্যের প্রখর ছোঁয়া ছাড়া মুখ তোলে না। পাতাদের এই বৈশিষ্ট্য কেবল রেইন ট্রি-র-ই নয়, শিরীষ পরিবারভুক্ত সব গাছেরই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। শীত এলে এই সবুজ পাতারা ঝরে যায়, বসন্তের শুরুতে এই গাছ একেবারে নিষ্পত্র হয়ে পড়ে। অবশ্য এই বৈরাগ্য বেশিদিন স্থায়ী হয় না ; মৌসুমের প্রথম বর্ষণের ছোঁয়াতেই বৃক্ষ আবার সবুজ রূপে ফিরে আসে। তখন বৃষ্টিগাছকে বিশাল সবুজ ক্যানভাস বলে মনে হয়। 

রেইন ট্রি-র ফুল ও মঞ্জরি আলাদা করা বেশ কঠিন। বৃন্তপ্রান্তে একগুচ্ছ ফুলের গ্রন্থনায় মঞ্জরির বৈশিষ্ট্য প্রচ্ছন্ন। এক একটি মঞ্জরিতে নিদেন পক্ষে কুড়িটি ফুলের সমাহার ঘটে। খুব সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলেই কেবল প্রত্যেকটি ফুলকে আলাদা করে চেনা যায়। মঞ্জরিতে লাল বর্ণের পাপড়ির চেয়ে লালাভ পরাগ-কেশরই বেশি থাকে। পরাগ-কেশোরগুলো উৎক্ষিপ্ত থাকে আর এই উত্তোলিত পরাগ-কেশরেই মঞ্জরির প্রকৃত সৌন্দর্য। এই পুষ্পগুচ্ছের মধ্যমণি হিসেবে যে বিশেষ ফুলটির আয়তান ও আকৃতি সহযোগীদের চেয়ে স্বতন্ত্র, সেটি স্পষ্টতই সবচেয়ে বড়ো ও সজ্জিত। এর ফল চ্যাপ্টা, লম্বা, মংসল এবং আবরণ দৃঢ়। কচি ফল সবুজ, পাকা ফল প্রায় কালো। ফলের ভেতরের শাঁস মিষ্টি এবং কাঠবিড়ালীদের দারুণ প্রিয়। 

বৃষ্টিগাছ বা রেইন ট্রি এদেশের যত্রতত্র আপনা আপনিই জন্মায় বলে একে এ দেশের আপন বৃক্ষ বলেই মনে হয় ; যদিও এর আদি নিবাস বহুদূরে সেই দক্ষিণ ব্রাজিলে। এর কাঠ খুব একটা মূল্যবান নয়, মূলত জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহার করা যায়। তবে ঝড় প্রতিহত করার জন্য এবং ছায়ার জন্য বৃষ্টিগাছ তুলনাহীন। রেইন ট্রি অত্যন্ত দ্রুত বাড়ে। তাই বনায়নের জন্য ইদানীং আমাদের দেশে এর চাষ শুরু হয়েছে। 

লেখা : শ্যামল কায়া