শরীফ হোসেন ইমন, ২০০৪ সাল থেকে যুক্ত আছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ মঞ্চনাটকের সংগঠন নাট্যকেন্দ্রর সঙ্গে। এই দলের হয়ে বেশকিছু নাটকে তিনি অভিনয় করছেন। বর্তমানে মঞ্চের পাশাপাশি টিভিনাটকেও নিয়মিত অভিনয় করছেন। বিটিভির তালিকাভুক্ত অভিনয়শিল্পী তিনি। এবারের রঙ্গমঞ্চের আয়োজন তাকে নিয়ে...
আনন্দভুবন : নাটকের অঙ্গনে এলেন কেমন করে ?
শরীফ হোসেন ইমন : আমার গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর হলেও জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার মগবাজারে। ছেলেবেলায় লুকিয়ে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতাম, সিনেমা দেখা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়। ২০০০ সালের দিকে অভিনয়ের ইচ্ছেটা ভালোভাবেই মনের মধ্যে জেঁকে বসে। শুরু করি বেইলি রোডে নিয়মিত যাতায়াত। জান্নাত আরা বাসনা আপার হাত ধরে ‘ইচ্ছাঙ্গন থিয়েটার’-এর মাধ্যমে নাটকের অঙ্গনে পথচলতে শুরু করি। এই দলের ‘খেল খতম’ নাটকের মাধ্যমে আমার অভিনয়ের শুরু।
আনন্দভুবন : নাট্যকেন্দ্রে যুক্ত হলেন কখন ?
শরীফ হোসেন ইমন : ‘ইচ্ছাঙ্গন থিয়েটার’ দলটি একটু অগোছালো হওয়ায় বড়ো কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা চিন্তা করতে শুরু করি। তারপর যুক্ত হই থিয়েটার আরামবাগে, এখানে প্রথম ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’ নাটকে কাজ করার সুযোগ পাই। এই দল থেকেই সগির মোস্তফার নির্দেশনায় ‘পাংশু’ নামে একটি পথনাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করি, এই পথনাটক করতে এসে পরিচয় হয় নাট্যকেন্দ্রের অবিদ রেহানের সঙ্গে। অবিদ ভাই একদিন তারিক আনাম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেন, প্রথমে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে শুধু দলে আসার সুযোগ পাই। পরে দলের সদস্য হওয়ার সুযোগও পাই।
আনন্দভুবন : দলের হয়ে কোন কোন নাটকে কাজ করছেন ?
শরীফ হোসেন ইমন : ২০০৪ সালে যখন নাট্যকেন্দ্রে যুক্ত হলাম তখন দলে ‘প্রজাপতি’ নাটক তৈরি হচ্ছিল। এই নাটকে নেপথ্যকর্মী হিসেবে কাজ করতে শুরু করি। একবার এই নাটকের শোয়ের আগে একজন অভিনেতা অসুস্থ হয়ে পড়েন, একদিনের নোটিশে ওই চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাই। নাট্যকেন্দ্রের ‘আরজ চরিতামৃত’ নাটকটি পুনরায় মঞ্চে এলে এখানে চিন্তাপতি দফাদারের চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পাই। ইউসুফ হাসান অর্ক ভাইয়ের নির্দেশনায় ‘ডালিম কুমার’ নাটকের মাধ্যমে নাট্যকেন্দ্রের হয়ে প্রথম বড়ো কোনো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আসে। এখানে কৃষাণ চরিত্রটির মাধ্যমে থিয়েটারের অঙ্গনে একটা ভালো পরিচিতি পেয়ে যাই। এরপর তারিক আনাম খান ভাইয়ের নির্দেশনায় ‘দুই যে ছিল এক চাকর’ নাটকে সেলিম জং বাহাদুরের চরিত্রে অভিনয় করি। এরপর মঞ্চে আসে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। এই নাটকে গহর চৌকিদারের চরিত্রে অভিনয়ের পর সাধারণ দর্শকদের পাশাপাশি নাটকের অঙ্গনে অনেক গুণী মানুষেরও প্রশংসা পেয়েছি।
আনন্দভুবন : অভিনয়ের ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা কে ?
শরীফ হোসেন ইমন : আমার অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে নাট্যকেন্দ্র। এই দলের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। এই নাট্যকেন্দ্রের সুবাদে জাপানের মঞ্চে এবং বেশ কয়েকবার ভারতের মঞ্চে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে। তারিক আনাম ভাই আমার গুরু, তারিক ভাইয়ের কাছ থেকে শুধু অভিনয়ই নয়, মানুষ হওয়ার এবং জীবন গড়ার অনেক কিছু শিখেছি এবং শিখছি।
আনন্দভুবন : নাট্যচর্চার পাশাপাশি আবৃত্তি চর্চাও করছেন ?
শরীফ হোসেন ইমন : ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত স্বরকল্পন আবৃত্তি চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ২০১১ থেকে স্বরব্যঞ্জনের সঙ্গে অনিয়মিতভাবে যুক্ত আছি। মঞ্চের কাজের পাশাপাশি এখন মিডিয়াতেও নিয়মিত কাজ করছি। তাই আবৃত্তিতে এখন আর সময় দিতে পারছি না। তবে মঞ্চনাটকে নিয়মিত কাজ করছি। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘসময় ধরে মঞ্চের কাজও আপাতত বন্ধ আছে।
আনন্দভুবন : মিডিয়ায় শুরুর সময়টা কেমন ছিল ?
শরীফ হোসেন ইমন : মিডিয়ায় কাজ শুরু হয় আফসানা মিমির পরিচালনায় ‘কাছের মানুষ’ নাটকের মাধ্যমে। তারপর অনেক ধারাবাহিক ও একক নাটকে অভিনয় করেছি। সম্প্রতি নতুন একটি দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছি কিছুদিনের মধ্যেই এটি প্রচারে আসবে। মানস পালের রচনায় এটি পরিচালনা করছেন শামস করিম।
আনন্দভুবন : অভিনয় করার ক্ষেত্রে পরিবারে সহযোগিতা কেমন পেয়েছেন ?
শরীফ হোসেন ইমন : আমি অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। এর বাইরে অন্যকিছু করছি না। আমাদের সমাজে বেশির ভাগ পরিবারই চায় না তাদের সন্তান শিল্পচর্চাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করুক। কারণ, এখানে অনিশ্চয়তা আছে। অভিভাবকেরা চান তাদের সন্তানেরা চাকরি অথবা ব্যবসা করুক। আমাদের পরিবারে পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোটো। মা এবং বোনদের সহযোগিতা আছে বলেই অভিনয় জগতে এগিয়ে যেতে পারছি। যতদিন সুস্থ আছি ততদিন মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই। এখন নেশাপেশা দুটোই অভিনয়। এই অঙ্গনে কাজ করে খেয়েপরে বাঁচতে চাই। অভিনয়ের পাশাপাশি এখন নাটকও লিখছি। আমার লেখা ছয়টি একক নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হয়েছে। হ
লেখা : নিথর মাহবুব