একজন অভিনয়শিল্পীর যে গুণাবলি জরুরি, সবই রয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস স্নিগ্ধার মধ্যে- মিষ্টভাষী, সুন্দর গঠন, ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা, শিক্ষিত প্রভৃতি। বর্তমানে এই অভিনয়শিল্পীর একাধিক নাটক ইউটিউবে অবমুক্ত করা হয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় আরো কয়েকটি নাটক। এছাড়াও খুব শিগ্গিরই প্রচার শুরু হবে তপু খান পরিচালিত ‘মেজ ছেলে’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটক। অভিনয়ের পাশাপাশি সমানতালে মডেলিংও করছেন তিনি। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
উজ্জ্বল বর্ণের প্রতি যুগ যুগ ধরেই মানুষের একটা আকর্ষণ রয়েছে। আর সেই ঔজ্জ্বল্য যদি হয় একটু বেশি উজ্জ্বল, তাহলে তো অনেকেই সেই রঙের প্রেমে হাবুডুবু খাবেন, এটাই স্বাভাবিক, বলছি তরুণ অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস স্নিগ্ধার কথা। যিনি মডেলিং ও অভিনয় দিয়ে জয় করে নিচ্ছেন তরুণদের হৃদয়। চোখ জোড়া বড়ো বড়ো, চুলে পাহাড়ি ঝরনার ঢল, ঠোঁটজোড়া কমলা লেবুর ফালির মতো, হাসিতে মুক্তা ঝরে, সেই হাসিতে কুপোকাত হাজারো যুবক। এই রকম উপমা প্রায়ই শুনতে হয় স্নিগ্ধাকে।
প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে, স্নিগ্ধাও এর বাইরে নন, তবু সৌন্দর্যের কথা তুলতে স্নিগ্ধা বলেন, মানুষে যতটা বলে, ততটা নই আমি। আপাতত সৌন্দর্য নয়, অভিনয়কেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন এই অভিনেত্রী। অভিনয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও, প্রতিনিয়ত সিনিয়রদের অভিনয় দেখছেন আর রপ্ত করছেন অভিনয়।
স্নিগ্ধা নামের অর্থ কোমল, শান্ত, স্নিগ্ধ বা সুন্দর। নামের সঙ্গে যেন খুব সুন্দরভাবে মিশে গেছে জান্নাতুল ফেরদৌস স্নিগ্ধা।
লাক্স চ্যানেল আই’র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় পথচলা জান্নাতুল ফেরদৌস স্নিগ্ধার। পরিবারের কেউ মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও অনেকটা কাকতালীয়ভাবে এই অঙ্গনে জড়িয়ে যান তিনি।
গল্পটা এমন, একদিন স্নিগ্ধা তার বন্ধুদের নিয়ে গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি দেখতে পান লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারের অডিশন চলছে। স্নিগ্ধার এক বন্ধু বলল, চল আমরা ওখানে যাই, সেখানে বিচারক হিসেবে অভিনেত্রী তারিন ছিলেন। স্নিগ্ধা বলেন, তারিন ম্যাম ভেবেছেন আমি অডিশন দিতে এসেছি, আমাকে দেখেই বলল, তুমি তো অনেক সুন্দর, আমাকে কোনোরকম প্রশ্ন ছাড়াই ইয়েস কার্ড দিয়ে দিলেন, শুরু হলো পথচলা, কিন্তু সমস্যা পরিবার। আমি অনেকটা গোপনে লাক্সের বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে অংশ নিচ্ছি। সেজন্য প্রথম দিকে বাসায় কিছু জানাইনি। কিন্তু বিষয়টি বেশিদিন গোপন রাখা যায়নি। বাসায় পত্রিকা রাখত, পত্রিকায় একদিন মা আমার ছবি দেখতে পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এই তোমার ছবি এখানে কেন ? আমি তখন লাক্স চ্যানেল আই প্রতিযোগিতার কথা মাকে বলি, কিছুটা রাগ করলেন মা। লাক্স প্রতিযোগিতায় ক্যাম্পে থাকতে হতো, পরিবার কিছুতেই বাইরে থাকতে দেবে না, কান্নাকাটি করে তাদের রাজি করাই। এখন পরিবার স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে। মা আমার নাটক দেখেন। নাটক দেখে সমালোচনা করেন। এটা আমার জন্য বড়ো পাওয়া। যারা প্রথমে আমাকে এখানে কাজই করতে দেবেন না, আর এখন আমার কাজের রিভিউ দিচ্ছে। এটা আমার অনেক ভালো লাগে। চলার পথে অনেক বাধা-বিপত্তি এসেই যায়, এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে স্নিগ্ধাকে।
লাক্স প্রতিযোগিতাকালীন স্নিগ্ধার বাবা স্ট্রোকে মারা যান। স্নিগ্ধাও লাক্স থেকে বের হয়ে আসেন। পরিবারের সবাই স্বাভাবিক হলে, আবারও মিডিয়ায় কাজ শুরু করেন স্নিগ্ধা। নাটক, টেলিফিল্ম ও বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করে পরিচিতি পাচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি স্নিগ্ধা অভিনীত ‘গ্যাংস্টার গার্লফ্রেন্ড’ নাটকটি ইউটিউবে অবমুক্ত হয়েছে। কমেডি ধাঁচের নাটকটি দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছে। এছাড়াও খুব শিগ্গিরই মুক্তি পাবে বেশ কয়েকটি নাটক। খ-নাটকের পাশাপাশি প্রচার শুরু হবে তপু খানের পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘মেজ ছেলে’। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফটোসেশনও করেন স্নিগ্ধা। পাশাপাশি একটা ব্যবসাও রয়েছে তার।
অন্যান্য শিল্পীর চেয়ে পর্দায় আপনাকে কম দেখা যাচ্ছে, এই প্রসঙ্গে স্নিগ্ধা বলেন, “কাজ কমই করছি, কারণ বেছে বেছে কাজ করছি। শুরুর দিকে সব কাজই করতাম, এখন বেছে বেছে কাজ করছি। যার কারণে কাজের সংখ্যা কমে গেছে।” একসময় স্নিগ্ধা স্বপ্ন দেখতেন ডাক্তার হবেন, কখনো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ারও স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে, কাজ করছেন মিডিয়াতে। এই প্রসঙ্গে বলেন, “বাস্তবে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার না-হতে পারলেও চরিত্রের মধ্যে দিয়ে সব হয়েছি।”
কোন ধরনের গল্পে কাজ করতে ভালো লাগে ? জানতে চাইলে স্নিগ্ধা বলেন, “কমেডি, রোমান্টিক ও পারিবারিক গল্পে কাজ করতে ভালো লাগে।”
প্রত্যেক শিল্পীরই বড়োপর্দায় কাজ করার একটা স্বপ্ন থাকে। এর বাইরে নন স্নিগ্ধাও। বড়োপর্দায় কাজ করা প্রসঙ্গে বলেন, “ইতোমধ্যে অনেক অফার এলেও গল্প ভালো না লাগায় কাজ করা হয়ে ওঠেনি।” স্নিগ্ধার পছন্দের সিনেমা ‘মনপুরা’। এ ধরনের গল্প পেলে চোখ বন্ধ করে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হয়েছেন স্নিন্ধা। এর মধ্যে ভিশন ফ্রিজ, গ্রামীণ ফোন, বাংলা লিংক, ঈগলু আইসক্রিমসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।
মিডিয়ায় কাজ করতে এসে কখনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে কি না ? স্নিগ্ধা বলেন, “সব সেক্টরেই ভালো-মন্দ আছে, আমার ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করি, সবাই অনেক হেল্পফুল, এখানে কাজ করাটা বাইরের মানুষ অনেকেই পজেটিভভাবে নেন না। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ভালোমন্দ নিজের উপর। আপনি যে সেক্টরেই কাজ করেন না কেন, আপনি যদি ভালো থাকেন তাহলে কেউ আপনাকে খারাপভাবে দেখবে না। আপনি কীভাবে কাজ করতে চাইছেন এটা পুরোটাই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।”
নারীরা কতটা এগিয়ে যাচ্ছে ? স্নিগ্ধা বলেন, “সব সেক্টরেই এখন নারীরা কাজ করছেন। এমন কোনো সেক্টর পাওয়া যাবে না যেখানে নারীরা কাজ করছেন না। একজন নারী হিসেবে আমি প্রাউড ফিল করি।
নামের বিড়ম্বনা বলে একটা কথা রয়েছে। সে বিড়ম্বনায় পড়েছেন স্নিগ্ধাও। মিডিয়াতে আর একজন জান্নাতুল ফেরদৌস স্নিগ্ধা নামের শিল্পী আছেন। দু’জনই একই নামের হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয় নির্মাতাদের। এই বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন স্নিগ্ধা, “একবার একজন নির্মাতা আমাকে তার একটি কাজের জন্য নির্বাচন করে ডেট লক করেন। পরে অনেকদিন যোগাযোগ নেই, হঠাৎ শুটিংয়ের দিনে ফোন করে বলেন, আপা কই আপনি ? এখনো সেটে এলেন না ? আমি তো শুনেই অবাক ! এরই মধ্যে সেটে আরেকজন জান্নাতুল ফেরদৌস স্নিগ্ধা নামের শিল্পী চলে আসেন, আমাকে একটু পর ফোন করবেন বলে রেখে দেন, এরপর পুনরায় ফোন করে বলেন, আপা একটু মিসটেক হয়ে গেছে, আপনার সিডিউলের স্থলে আর এক জান্নাতুল ফেরদৌসের সিডিউল নেওয়া হয়েছে। আমি তখন বললাম, যেহেতু তিনি সেটে চলে এসেছেন, তাকে নিয়ে কাজটি করুন। একজন শিল্পী সেট থেকে ফেরত যাওয়াটা আমার কাছে অস্বস্তি মনে হয়েছে, তাই সে কাজটি আমার করা হয়নি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, “ধীরে ধীরে মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। তাদের ভালোবাসায় আমি এতদূর এসেছি, এই ভালোবাসা ধরে রাখতে চাই, আরো ভালো ভালো কাজ যেন তাদের উপহার দিতে পারি। আমি অভিনয়ে যেন আরো উন্নতি করতে পারি। বর্তমানে আমি নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছি, কিছুদিন পর হয়ত ভাবি চরিত্রে অভিনয় করব, তারপরে দাদির চরিত্রে অভিনয় করব এইভাবে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অভিনয় চালিয়ে যেতে চাই।”