বহুগুণে গুণান্বিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী অভিনেত্রী রুনা খান ৪০ পেরিয়ে গেলেও এখনো সৌন্দর্যের আলোয় আরো আলোকিত হচ্ছেন, শুধু রূপেই নয়, দ্যুতি ছড়াচ্ছেন অভিনয়েও। অভিনয়শিল্পী হিসেবে রুনা খান সবসময় নতুন নতুন চরিত্রের জন্য নিরন্তর ছুটে চলেন। ব্যতিক্রমী গল্প তাকে টানে সবসময়। এবার এমনই একটি ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন তিনি। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
রুপালি পর্দার মানুষের জীবনের অজানা গল্প নিয়ে নতুন সিনেমা নির্মাণ করছেন আলী জুলফিকার জাহেদী। নাম দিয়েছেন ‘চলচ্চিত্র : দ্য সিনেমা’। এই সিনেমায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করবেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রুনা খান।
নতুন চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে রুনা খান বলেন, গেল বছরের শীতেই সিনেমাটির গল্পটি শুনেছি। চরিত্র ও চিত্রনাট্য পছন্দ হওয়ায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। ‘একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। বিশেষ করে বাস্তবতার ছোঁয়া থাকা চরিত্রগুলো আমাকে টানে। এই ছবির চরিত্রও তেমনই।’
অভিনেত্রী আরো বলেন, ‘নায়িকাদের শুধু পর্দার সাজানো দিকই মানুষ দেখে। কিন্তু তাদেরও ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে। এই সিনেমায় সেই আড়ালের গল্পই উঠে আসবে।’
এর আগে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি টেলিফিল্মে যাত্রাপালার অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রুনা খান। তবে এবারই প্রথমবারের মতো সিনেমায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি।
আগামী শীতে ছবিটির শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে, প্রস্তুতির কারণে সময় কিছুটা পিছিয়েও যেতে পারে।
এদিকে রুনা খান অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরো তিনটি সিনেমা। সেগুলো হলো মাসুদ পথিকের ‘বক’, কৌশিক শংকর দাসের ‘দাফন’ এবং জাহিদ হোসেনের ‘লীলা মন্থন’।
আলোচিত এই অভিনেত্রী কাজের পরিধি কমিয়ে দিলেও, বছরে যে দু-একটি কাজ করছেন, সেই কাজগুলো প্রশংসিত হচ্ছে। রুনা খান মূলত টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে নেন। একটা সময় ছিল টেলিভিশন খুললেই দেখা যেত তাকে, তবে এখন আর গদবাঁধা কাজে নিজেকে জড়াতে চান না তিনি। বছরে একটি হোক, সেই কাজটি হবে তার মনের মতো, আর এই জন্যই পর্দায় এখন তাকে কম দেখা যাচ্ছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব রুনা খান। মাঝে মাঝেই সাহসী লুকের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে ভক্তদের চমকে দেন।
অভিনেত্রী রুনা খান ছোটোপর্দার পাশাপাশি বড়োপর্দায় অভিনয় করেও বেশ প্রশংসা কুড়ান। নির্মাতা তৌকির আহমেদের পরিচালনায় ‘হালদা’ সিনেমায় অভিনয় করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
সিনেমার পাশাপাশি ওয়েবফিল্মে কাজ করেও নতুনভাবে এসেছেন আলোচনায়। অভিনয়ের প্রয়োজনে নিজের ওজন কমিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
রুনা খান ‘হালদা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ‘ছিটকিনি’ [২০১৭] ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। ‘ছিটকিনি’ ছবিতে তার কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর জন্য মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।
এছাড়াও ওয়েব সিরিজ ‘বোধ’-এ অভিনয়ের জন্য ‘ময়ূরপঙ্খী স্টার অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’-এ সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে আহত পাখির গান টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের জন্য একঘণ্টার নাটক ও টেলিফিল্মে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী [প্রধান চরিত্র] বিভাগে আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
তার প্রথম ওয়েব ফিল্ম ‘কষ্টনীড়’ হইচইয়ে মুক্তি পায়। আর সে ওয়েব ফিল্মের জন্য ‘ডেইলি স্টারের’ সেরা অভিনয়শিল্পীর নমিনেশন পান তিনি। এছাড়াও আলোচনায় ছিলেন আশফাক নিপুণের ওয়েব ফিল্ম ‘কষ্টনীড়’, গৌতম কৈরির ওয়েবফিল্ম ‘আন্তঃনগর’, আবু হায়াত মাহমুদের ওয়েবফিল্ম ‘মার্ডার ৯০’, কাজল আরেফিন অমির ওয়েবফিল্ম ‘অসময়’।
রুনা খান ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কাটে টাঙ্গাইলের সখিপুর শহরে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা আসেন। তার পিতা ফরহাদ খান ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী। মা আনোয়ারা খান। তার স্বামীর নাম এষণ ওয়াহিদ। তাদের একমাত্র কন্যার নাম রাজেশ্বরী। রুনা খান টাংগাইলের একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ঢাকার বদরুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ইডেন কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে কর্মী হিসেবে যোগ দেন। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে অভিনয়জীবন শুরু করেন। ছোটোদের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’-এ সুমনা চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর টেলিভিশন নাটকে নিয়মিত কাজ শুরু করেন। কাজ করেছেন সিনেমা, ওয়েবফিল্ম ও বিজ্ঞাপনচিত্রে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের ‘নাম গোত্রহীন’ নাটকের মঞ্চায়নে তিনি অপি করিমের স্থলাভিষিক্ত হন। এছাড়া তিনি আসাদুজ্জামান নূর নির্দেশিত নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ নাটকে অভিনয় করেন। অভিনয় করেন সারা যাকেরের নির্দেশনায় ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ নাটকে।
রুনা খান হুমায়ুন ফরিদী নির্দেশিত ‘ছায়াবিথী’, গোলাম সোহরাব দোদুল নির্দেশিত ‘মামাভাগ্নে’, ‘সংসার’, ‘সাতকাহন’, আলভী আহমেদ নির্দেশিত ‘আড্ডা’, দিপংকর দীপনের ‘মায়ের দোয়া পরিবহণ’, সোহেল আরমান নির্দেশিত ‘জলরঙ’, মাতিয়া বানু শুকু নির্দেশিত ‘একটা কিনলে একটা ফ্রি’, মাসুদ সেজানের ‘লংমাচর্’, আবু হায়াৎ মাহমুদ নির্দেশিত ‘বৃষ্টিদের বাড়ি’, রায়হান খানের ‘প্রেসিডেন্ট সিরাজ-উদ-দৌলা’, মাহফুজ আহমেদের ‘আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে’, ‘মাগো তোমার জন্য’, মোস্তফা কামাল রাজের ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিকগুলোয় অভিনয় করে প্রশংসা অর্জন করেন।