রাজবাড়ির মেয়ে লাবণ্য লিজা ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে উৎপল দত্ত পরিচালিত ‘টিনের তলোয়ার’ মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু করেন। লাবণ্য লিজা এরই মধ্যে বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন। জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু’র ধারাবাহিক ‘কবুলিয়তনামা’ তার প্রথম টিভিনাটক। নাটকটিতে ‘পরী’ চরিত্রে অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক বহু দর্শকনন্দিত নাটক এবং বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এবারের আকাশলীনা আয়োজনে লাবণ্য লিজাকে নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...
সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী লাবণ্য লিজা বর্তমানে ধারাবাহিক এবং সিঙ্গেল নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল আহমেদ পরিচালিত এবং বৃন্দাবন দাসের রচনায় ‘বিশ্বাস বনাম সরদার বাড়ি’ মেগা সিরিয়ালের শুটিং চলছে। নাটকটি ‘মাছরাঙা’ টিভিতে প্রচার হচ্ছে। এছাড়া ‘মায়ের বাড়ি’ নামে একটি সুন্দর গল্পের সিঙ্গেল নাটক-সহ আরো দু’টি নাটকের কাজ করেছেন। নাটকগুলো কিছুদিনের মধ্যে প্রচারিত হবে। ‘মায়ের বাড়ি’ নাটকটি পরিচালনা করেছেন মনির হোসাইন। স্ক্রিপ্টও তারই লেখা। অপর দু’টি নাটক শামীম হাসান জুয়েলের ‘বউ আবশ্যক’ এবং ‘বউ বদল’। এছাড়া কায়সার আহমেদের ‘বকুলপুর’ সিরিয়ালে কাজ করছেন। সিজন-২ এর কাজ শেষে হয়েছে এখন সিজন-৩ শুরু হবে। এনটিভিতে প্রচারিত হচ্ছে ‘ফাউল জামাই’ নামে একটি সিরিয়াল। এটি পরিচালনা করেছেন তাইফুজ্জাহান আশিক।
সম্প্রতি শামীম জামান পরিচালিত ‘শাদি মোবারক’ নামে আরেকটি নাটকে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ২৮ নভেম্বর থেকে নাটকটির শুটিং শুরু হবে। নতুন এই নাটকে অভিনয় করবেন মোশাররফ করিম, শামীম জামানসহ আরো অনেকেই।
লাবণ্য লিজার প্রথম নাটক জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলুর ‘কবুলিয়তনামা’। এটা ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রচারিত হয়। প্রথম নাটকে অভিনয়ের অনুভূতি সম্পর্কে লাবণ্য লিজা বলেন, “জীবনের প্রথম সবকিছুই একটা অন্যরকম অনুভূতি মানুষকে দেয়। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম নাটকের অভিনয়ের অনুভূতি ডেফিনেটলি অন্যরকম ছিল, জীবনে প্রথম অভিনয় করছি এটা ভেবে। তখন আসলে নার্ভাসনেস বেশি কাজ করছিল। আমার প্রথম কাজটি ছিল সালাউদ্দিন লাভলু ভাইয়ার। তাই নার্ভাসনেস তো একটু থাকবেই। অভিনয়ের ক্ষেত্রে ওটা আমার লাইফের একটি বেস্ট স্কুলিং ছিল। ওনার কাছ থেকেই আমি বেশি শিখেছি। প্রথম কাজটাতেই মোশাররফ করিম, আ. খ. ম. হাসান, রওনক হাসান, বন্যা মির্জার মতো স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পীরা ছিলেন। একদম শুরুর কাজটাই আমি বলব, একজন স্বনামধন্য পরিচালকের হাতে ছিল এবং আমার কোআর্টিস্টরাও মিডিয়া লাইনে অভিজ্ঞ মানুষ ছিল যার কারণে তাদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এটা আমার লাইফের অনেক বেশি প্লাস পয়েন্ট ছিল। প্রথম যখন কাজ করেছি তখন আমি অতটা বুঝিনি যে, এই প্রোডাকশন ভবিষ্যতে এত বেশি জনপ্রিয়তা পাবে। এখন এত বছর পর এসে মনে হচ্ছে, আমার জীবনে প্রথম কাজটিই ছিল একটি বেস্ট কাজ। মানুষের মুখে মুখে আমি এখনো ওই নাটকটির কথা শুনি। এবং অনেকেই এমনও বলেন যে, “আপু আপনার ‘কবুলিয়তনামা’র মতো আবার কবে কাজ পাব। এটা শুনে খুব ভালো লাগে।”
লাবণ্য লিজা প্রথম দিকে গ্রামীণ পটভূমির গল্পের অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। এখন অবশ্য প্রচুর শহুরে গল্পের নাটকেও অভিনয় করছেন। অবশ্য দুই ধরনের গল্পের নাটকেই অভিনয় করতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তিনি যেহেতু অভিনয়ের মানুষ তাই তাকে যে পাত্রে ঢালা হয় সেই পাত্রেরই রং ধারণ করেন। তিনি অভিনয় করতে ভালোবাসেন তাই তাকে যে চরিত্রই দেওয়া হোক না কেন সেই চরিত্রই নির্মাণ করবেন এটাই স্বাভাবিক।
লিজা একযুগেরও বেশি সময় ধরে মিডিয়ায় কাজ করছেন। মিডিয়ায় কীভাবে এলেন জানতে চাইলে বলেন, “মিডিয়ায় আসাটা আমার জন্য একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল। আমার ফুপা ইন্টারেক্টিভ মিডিয়া হাউজের অ্যাডমিনের হেড ছিলেন। আমি একদিন ওনার অফিসে শুটিং দেখতে যাই। আমার মনে আছে সেদিন সম্ভবত চয়নিকা দিদির কোনো একটা কাজের শুটিং চলছিল চ্যানেল আইয়ের জন্য। ওখানে অনেক পরিচালকেরাই আসতেন। একজন পরিচালক আমাকে দেখে ফুপাকে অফার করেন তার নাটকের একটা চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। ফুপা আমাকে বলার পর আমি শুনে খুবই মজা পেলাম। অভিনয় করতে চাইলাম। অবশ্য আমার বাসা থেকে রাজি ছিল না। এরপর আমি থিয়েটারে যোগ দিই। আমি ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে অভিনয় শুরু করি। এই যে গল্পটা বললাম, এটা তার একটু আগের গল্প। থিয়েটারে যোগদান করার কিছুদিন পর থেকে মিডিয়াতে টুকটাক যাতায়াত করতাম। একসময় লাভলু ভাইয়ার সঙ্গে পরিচয় হলো। এভাবেই কাজ শুরু।”
‘গেম রিটার্নস’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পর আর তাকে দেখা যায়নি। আসলে সিনেমায় অভিনয় করার আগ্রহ তিনি দেখাননি। কারণ নাটকের জায়গাই তার কাছে বেশি কমফোর্ট জোন মনে হয়। এই কারণে তিনি নাটক নিয়েই আছেন। তবে ভবিষ্যতে ভালো গল্পের সিনেমায় অভিনয়ের অফার পেলে অভিনয় করার ইচ্ছা আছে তার।
মিডিয়া জগতের অনেকেরই নানা ধরনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকে। আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ? “আসলে মানুষ তো ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলতে পারে না। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এইটুকু বলতে পারি, সেটা হচ্ছে আমার হাসবেন্ড [আরজে নীরব] ও আমার মেয়ে [নিয়া কবীর]-কে নিয়ে। আল্লাহ আমাকে সুন্দর একটা পরিবার দিয়েছে। এই পরিবারকে নিয়েই যেন ভবিষ্যৎ হয় আমার। একসাথে থাকা, আমার মেয়েকে ঠিকমতো বড়ো করে তোলা, একসাথে বেড়ে ওঠা, একসাথে চলা, এটা ছাড়া আমার ফিউচার প্ল্যান বলতে কিছু নেই।”
অবসর কীভাবে কাটে জানতে চাইলে বলেন, “প্রথমত বাড়িতে শিশু থাকলে মানুষের কোনো অবসর হয় না। আর বাসার কাজ করতে যারা পছন্দ করে তারা অবসর সময় পান না। তাছাড়া সময়ের সাথে সাথে মানুষের অনেক পরিবর্তন ঘটে। এটা আমি আমার নিজেকে দিয়ে বুঝি। আগে অনেক অবসর পেতাম এটা ছোটো সময়ের কথা। এখন একটানা সিরিয়ালের কাজ করতে হয়। অভিনয় এবং সংসারের কাজ সামলে যখন একটু অবসর পাই তখনই পাগলের মতো ঘুমাই। তখন মাথায় আর কোনো চিন্তা থাকে না। এর ফাঁকে একটু অবসর পেলে মনে হয় যে, মেয়েটাকে সময় দিই। বাসায় কোথায় কি একটু ঝামেলা হচ্ছে সেগুলো ঠিকঠাক করি। আর টিভি দেখতে সবসময় ভালো লাগে। আমি মুভি ও সিরিজ দেখতে পছন্দ করি, আমি ও নীরব দু’জন মিলেই। এছাড়া একসাথে সময় কাটানো, কোথাও একটু ঘুরতে যাওয়া, খেতে গেলাম এই তো।’
লিজা’র পছন্দের খাবারের তালিকায় রয়েছে বাঙালি সব ধরনের খাবার। প্রিয় ঋতু শীত এবং প্রিয় রং সাদা।
ছবি : সংগ্রহ