হাইপারপিগমেন্টেশনে আক্রান্ত হলে যা করবেন -ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন

28 Jul 2024, 01:00 PM ত্বকের যত্ন শেয়ার:
হাইপারপিগমেন্টেশনে আক্রান্ত  হলে যা করবেন  -ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন

আজকের এক্সপার্ট অ্যাডভাইসে আমরা ত্বকের খুব সাধারণ কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো। আর তা হলো হাইপারপিগমেন্টেশন। হাইপারপিগমেন্টেশন বলতে আমরা কী বুঝি, কী কারণে এটি হয় এবং এর কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা...


হাইপারপিগমেন্টেশন কী

আমাদের ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় যে স্বাভাবিক রং থাকে ঠিক তার পাশেই দেখা যায় একটু ডার্কার কালার বা টোন। একে বলা হয় হাইপারপিগমেন্টেশন বা গাঢ় দাগ। আমাদের ত্বকের রং তৈরি করে যে মেলানিন, এটি যদি বেশি উৎপাদন হয় তাহলেই হাইপারপিগমেন্টেশন দেখা দেয়।


এর কারণগুলো কী

প্রথমেই সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে আসা। সূর্যরশ্মি যখন সরাসরি আমাদের ত্বকে আসে তখনি মেলানিন বেশি তৈরি হয়। এছাড়া আরেকটি সাধারণ কারণ হচ্ছে হরমোনের পরিবর্তন, যেমন গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন-প্রজেস্টেরনের অতিরিক্ত উৎপাদনের জন্য আমাদের হাইপারপিগমেন্টেশন তৈরি হয়। এছাড়াও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল হাইপারপিগমেন্টেশনের জন্য দায়ী। কিছু ওষুধ যেমন এন্টি-ম্যালেরিয়াল, এন্টি-সাইকোটিক, এন্টি-এপিলেপ্টিক এবং ব্যথানাশক ওষুধের কারণেও মেলানিন বেশি তৈরি হয়, দেখা দেয় হাইপারপিগমেন্টেশন। কিছু হাইপারপিগমেন্টেশন বংশগত, আমাদের জেনেটিক মেকআপ এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেকোনো ধরনের প্রদাহ যেমন ব্রণ, একজিমা, কনটাক্ট ডার্মাটাইটিস, কোনো জায়গা কেটে গেলে, পুড়ে গেলেও সেখানে পোস্ট ইনফ্লামেটোরি হাইপারপিগমেন্টেশন তৈরি হয়।

হাইপারপিগমেন্টেশনের ধরনগুলো খুবই কমন, যেমন মেছতা, পোস্ট ইনফ্লামেটোরি হাইপারপিগমেন্টেশন, এইজ স্পট, সান স্পট।

চিকিৎসা

আমি রোগীর ত্বক পর্যবেক্ষণ করে তার পিগমেন্টেশনের ধরন এবং তীব্রতা বুঝে ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা করে থাকি।

প্রথমত আমরা ত্বকের যত্নে যে রুটিন তৈরি করি সেখানে আমাদের যে পণ্যগুলো দেওয়া হয় সেগুলোর উদ্দেশ্য থাকে হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে আনার পাশাপাশি এটি যেন ত্বককে ময়েশ্চারাইজড, হাইড্রেটেড এবং প্রোটেক্টেড রাখে। এজন্য যে উপাদানগুলো দেখি তা হলো, আরবিউটিন, লিকোরাইস, প্ল্যান্ট বেইজড প্রোটিন, পেপটাইড এবং এজিলিক অ্যাসিড বা কোজিক অ্যাসিড।

তবে পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের ত্বকের ধরন দেখি। কেননা, একেক ত্বকে একেক ধরনের হাইপারপিগমেন্টেশন হয়। যেমন কারো হাইপারপিগমেন্টেশনের সাথে বয়সের ছাপ বা বলিরেখা থাকতে পারে আবার অনেকের হাইপারপিগমেন্টেশনের সাথে পিম্পল বা ব্রনও থাকতে পারে। সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। টপিক্যাল ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে হাইব্রিড ট্রিটমেন্টও আমরা দিয়ে থাকি। সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে আমরা যে উপাদানগুলো দেখি তা হলো ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার এক্সট্রাক্ট, সি উইড, এন্টি-অক্সিডেন্ট। কারণ, এগুলো ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে আনার পাশাপাশি ত্বকের ব্যারিয়ারও রিপেয়ার করে।

যে পদ্ধতিগুলো আমরা সাধারণত করে থাকি এদের মধ্যে গ্লো কোড পিল যেটি ত্বকের পিগমেন্টেশন শেডিংয়ে এবং এক্সফোলিয়েশনে সাহায্য করে আর সেই সাথে হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে আনে। সাধারণত অন্য যেকোনো পদ্ধতির চেয়ে ফেসিয়াল খুব জনপ্রিয়। এটিও আমাদের ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। কেননা এখানে স্কিন গ্লোয়িং সেরাম ব্যবহার করা হয় যা একটি যন্ত্রের মাধ্যমে ত্বকে প্রয়োগ করা হয়।

এছাড়া আরেকটি বেশ জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি হলো পিগমেন্টেশন রিডাকশন লেজার। লেজার টার্গেট করে মেলানিনকে, এগুলো ব্রেক ডাউন করে প্রাকৃতিকভাবে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। লেজারের ক্ষেত্রে এর রশ্মি তাপশক্তিতে পরিবর্তিত হয়, এজন্য একে ভার্সেটাইল ট্রিটমেন্ট বলা হয়। কারণ এটি ত্বকের লাল ভাব কমিয়ে আনে, ওপেন পোরকে কমিয়ে আনে এবং কোলাজেন-ইলাস্টিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বকের টেক্সচার, টোন উন্নত হয় সেই সাথে পিগমেন্টেশনও কমে আসে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যে চিকিৎসা পদ্ধতিটি খুব পছন্দ করি সেটি হচ্ছে ইন্ট্রাভেনাস এন্টি-অক্সিডেন্ট, যেখানে ভিটামিন সি, গ্লুটাথায়ন এবং আলফা লিপোয়িক এসিডের সাথে আরো এন্টি-অক্সিডেন্ট, পেপটাইড আমরা কাস্টোমাইজ করে দিয়ে থাকি রোগীর বয়স, ত্বকের ধরন এবং হাইপারপিগমেন্টেশনের ধরন ও তীব্রতা অনুযায়ী। সাধারণত এগুলোকে মাল্টিটাস্কার বলা হয়। কারণ, এটি আমাদের পিগমেন্ট তৈরি করে যে টাইরোসিনেজ এনজাইম সেটিকে কমিয়ে আনে বা ব্লকার হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে কমিয়ে দেয়, ফ্রি রেডিক্যালকে নিউট্রালাইজ করে, আমাদের স্লিপ হরমোন মেলাটোনিনকে বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরকে ডিটক্সিফাই করে।

আমি সবসময় বলেছি যে, আমাদের যেকোনো চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি একটি হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ অ্যাডাপ্ট করতে হবে। প্রথমেই ব্যালেন্স ডায়েট যেখানে এন্টি অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার থাকবে। এন্টি-অক্সিডেন্ট এর মধ্যে লাইকোপেন, এস্ট্রাজেনথিন, লুটেইন, ট্যানিনÑ এগুলো আমাদের অতিবেগুনি রশ্মি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে কোষগুলো সেগুলোর রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয় অর্থাৎ আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। একই সাথে আমরা যদি লাইফ স্টাইল মডিফিকেশনের কথা বলি সেক্ষেত্রে ব্যালেন্সড ডায়েটের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং নিয়মিত এক্সারসাইজ করার কারণে এটি আমাদের স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলকে কমিয়ে আনে যা মেলানিন-এর উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখে।

সবশেষে একটি এফারমেশন দিয়ে থাকি, আজকের এফারমেশন হলো ‘consistency is the key’-এর অর্থ হলো আমরা যদি ত্বকের যতেœ নিয়মিত হই এবং পদ্ধতিগুলোর ধারাবাহিকতা মেনে চলি তাহলে আমাদের ট্রিটমেন্টগুলোর স্থায়িত্ব বেড়ে যাবে এবং কমিয়ে আনবে আমাদের হাইপারপিগমেন্টেশন। 

লেখক : কনসালটেন্ট ডার্মালোজিস্ট

শিওরসেল মেডিকেল [বাংলাদেশ] লিমিটেড, গুলশান, ঢাকা