ব্রণ ভয়ংকর কিছু না ত্বকের সব থেকে সাধারণ সমস্যা কি ? যা যেকোনো ঋতুতে যেকোনো বয়সে হতে পারে ? উত্তরটি হলো অ্যাকনি, যাকে আমরা বা পিম্পল বলে থাকি। প্রথমে আমরা ব্রণের কারণগুলো জেনে নিই। বংশগত, জেনেটিক, হরমোনাল ইমব্যালেন্স যেমন প্রেগনেন্সি, বয়ঃসন্ধি, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। কিছু কিছু ওষুধ সেবন উদাহরণস্বরূপ স্টেরয়েড, অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ড্রাগ এসব কিছু। এরপর আসে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন-অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির সংস্পর্শ, গ্রিজি মেকআপ ব্যবহার, যানবাহনের দূষণ, গরম আবহাওয়ার আর্দ্রতা- এসব কিছু ব্রণের উদ্রেক বাড়িয়ে দেয়। আর ছেলেদের ব্রণের প্রধান কারণ ধূমপান। তৈলাক্ত ত্বককে অ্যাকনি প্রন স্কিন বলা হয়, অর্থাৎ, যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ব্রণ সহজেই হয়। কিন্তু আপনারা কি জানেন, শুষ্ক ত্বকেও ব্রণ হতে পারে। শুষ্ক ত্বক যদি ঠিকমতো পরিষ্কার করা না হয়, তাহলেও ব্রণ দেখা দিতে পারে।
আমাদের ত্বকে যে ওয়েল গ্ল্যান্ডগুলো থাকে, তা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ওয়েল বা সেবাম সিক্রেশন ত্বকে ব্রণের আবির্ভাব হয়। এই সিবামের সঙ্গে মৃত কোষ যুক্ত হয়ে তৈরি করে হোয়াইট হেডস, যা কিশোর-কিশোরীদের বেশি হয়। হোয়াইট হেড ত্বকে উন্মুক্ত হয়ে যে কালো ডটের আকার ধারণ করে, তাকে বলা হয় বø্যাক হেড। আর ব্ল্যাক হেডে জীবাণুর সংক্রমণে ব্রণ বা পিম্পলের সৃষ্টি হয়। এই জীবাণুর নাম প্রোপিয়নিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনি। একজন ডার্মাটোলোজিস্ট হিসেবে আমার পরামর্শ- যখন ব্রণ হবে তখন আপনি আপনার ডেইলি স্কিন কেয়ারে একটু পরিবর্তন আনবেন অর্থাৎ আপনি দৈনন্দিন যে স্কিন প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করছেন, তা না করে ব্রণের জন্য উপযোগী ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন ; এগুলো হতে হবে ওয়াটার বেজড নন কামভোজেনিক।
যখন অল্প কিছু ব্রণ দেখা দেয় তখন সালফার, জিংক, বেনজয়েল পার অক্সাইড, রেটিন এ অথবা অ্যান্টিবায়োটিক যুক্ত প্রোডাক্ট যেমন ইরাইথ্রোমাইসিন বা ক্লিন্ডামাইসিন লোশন জেল ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ব্রণ বেশি হলে সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক বা সিস্টেমিক রেটিনয়েড থেরাপি লাগে। এসব থেরাপি যখন কাজ করে না তখন একনি লেজার থেরাপি, ডায়মন্ড পিল, লো লেভেল এল-ই-ডি লাইট এসব অ্যাসথেটিক থেরাপির পরামর্শ দিয়ে থাকি। এই প্রোসিডিউরগুলো শুরুতে ব্রণকে নিয়ন্ত্রণেই আনে না, ব্রণের ফলে যে দাগ বা ক্ষত সৃষ্টি হয় সেগুলোও কমিয়ে আনে। ত্বক করে উজ্জ্বল ও দাগমুক্ত। ব্রণ ভয়ঙ্কর কিছু নয়, কিন্তু ব্রণ হলে খোটাখুটির একটা প্রবণতা দেখা দেয়, এর ফলে সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত দাগ বা ক্ষত আর এর প্রভাব পড়ে মনে। লোকজন কী ভাববে এ দাগ নিয়ে, সবার সামনে কীভাবে যাব, কত রকম দুশ্চিন্তা আঁকিবুঁকি করে মনে। দুশ্চিন্তার কিছু নেই, ব্রণের সূচনা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ত্বক ব্রণমুক্ত রাখুন। সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কথা ভুলবেন না।
লেখক : চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ