পুথিগত বিদ্যার সৌখিনতায় কোনো কোনো বাঙালি জনগোষ্ঠী এক অলিক গৌরবে গৌরবান্বিত হয়ে আত্ম অহং-এ ডুবে ডুবে ডুবসাঁতার কাটছে ঔপনিবেশিক গ-ির নোংরা জলে দীর্ঘ এক সময় ধরে। এদের একটা বড়ো অংশ অর্থ বৈভবে এতটাই সম্পদ ও আত্মঅহমের প্রাসাদ গড়ে তুলেছে যে, তার আড়াল থেকে বাকি সব কিছুকেই তুচ্ছ মনে করে। শুধু পুথিগত শিক্ষিতজনেরা একখানা কাগজের সনদের অহং-এ ঘাড়খানা বাম অথবা ডানে ঝুলিয়ে রাখে। কারণ, এই কাগজের সনদটা তাদের কাছে বড়ো সম্পদ বলে বিশ্বাস। শুধু সংস্কৃতিহীন পুথিগতবিদ্যা বলেই এই বিদ্যার জনগোষ্ঠী সনদের অহং করে এবং ভদ্রতার মুখোশে নিজেকে আড়ালে রাখে। এ অন্তরের দৈন্য। এদের ভেতরে অহংকার কাজ করে, এরা অনেকে চোখে চোখ রেখে কথাও বলে না, কিঞ্চিত ডান অথবা বামদিকে ঘাড় কাত করে বা ঘাড় সমান রাখলে ও চোখ দুখানা অন্য দিকে ঘুরিয়ে বিদ্রুপের বাঁকা হাসিতে এলিট, করপোরেট মাপকাঠিতে চলেন। সংস্কৃতিহীন শুধু পুঁথিগতবিদ্যাই সৌখিন বিলাসিতা। অন্যদিকে সাধারণ ও মৌলিক শিল্পী, ভাস্কর, কবি, সাহিত্যিক, নৃত্যশিল্পী আবৃত্তিশিল্পী কোনো অংশেই পুথিবিদ্বানদের চেয়ে কম পড়াশোনা করেন না, বরং ওই সমস্ত বিদ্বানদের চেয়ে এরা ঢেরবেশি পড়াশুনাই করে থাকেন। ওনারা পুথির সনদ নিয়েই মহাখুশিতে জীবন জীবিকার খোঁজে নিজেকে ভাসান। পক্ষান্তরে মৌলিক সৃষ্টিশীল মানুষেরা পুথির সনদ পেয়েও ক্ষান্ত হন না বরং অন্যান্য পড়াশোনা-সহ সাধনার অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে জ্ঞান অর্জনে নিজের প্রতি উদার থাকেন এবং এঁরা জীবন ও জীবিকাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়েই জ্ঞান ও সাধনার কাজে আত্মনিয়োগ করে মানুষের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। নিজেকে বিনয়ী মানুষ করে গড়ে তোলেন। ফলে, জ্ঞান-বিজ্ঞান-সহ অন্যান বিষয়েও নানা শিক্ষা-দীক্ষায় পৃথিবীর তাবৎ বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করে বিজ্ঞ হয়ে ওঠেন ওই তথাকথিত সাধারণ পুথিবিদ্বানদের চেয়ে। কতিপয় সেই পুথিমহানেরা শুধু কবি, শিল্পী, লেখকদের সাথে এমন আচরণ করেন তা নয়, এঁরা তাদের চেয়ে খানিকটা অর্থ ও পদমর্যাদায় কম এমন মানুষদের সাথেও একই আচরণ করে থাকেন। শিল্পী, লেখক, সাংবাদিক এককথায় মৌলিক সৃষ্টিশীলগণের মর্যাদা সবচাইতে উপরের আসনে হওয়াতেও একই সমাজের ওই সকল পুথিবিদ্যাধারী জনগোষ্ঠী মৌলিক শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক ও সাধারণ মানুষদের তুচ্ছ তাচ্ছিলের পর্যায়ে রেখে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ সময়ে শিল্পীমহলেও এমন হীনমানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠেছে অনেকে। তারাও চায় দলবাজি, তারাও চায় একধরনের বাহ্যিক নোংরা ক্ষমতা, তারও একচ্ছত্রভাবে অনৈতিকতার জোয়ারে ভাসছে। এরা সকলেই চায় যে; এদের দেখলেই পথ ছেড়ে দিয়ে সকলে কুর্নিশ করুক, চায় লৌকিকতা, হাততালি আর তেল মর্দন। সাথে যোগ হচ্ছে নিজেকে ক্ষমতাধর করে গড়ে তোলা। কিন্তু তারা কি জানে একজন মৌলিক শিল্পীর কাছে এ সমস্ত বিষয়টাই তুচ্ছ। এগুলো তাদের ধ্যান জ্ঞান নয়। কারণ, মৌলিকরা সাধনা করেন, অর্থ, সম্পদ, খ্যাতি বা প্রচার প্রতিযোগিতার জন্য নয়। শিল্পীরা বাহবা পাওয়ার চেয়ে জয়মাল্য পেতেই পছন্দ করেন। তবে, জাগতিক এসব কোনো কিছুর প্রতিই মৌলিক শিল্পীরা তেমন আগ্রহ দেখান না। কোনো শিল্পী যদি তার কাজের স্টাইলের মায়ায় বা গ-িতে আটকে যায় তবে সেখানেই শেষ। দর্শকদের বুঝে নিতে হবে, শিল্পী বৃত্তে পড়ে গেছেন, আর কিছু নতুন আসছে না, নয়ত আঁকিয়ে ভাবছেন, নতুনত্ব যদি কেউ গ্রহণ না করে, এটা একটা লোভ। মনে রাখতে হবে, একজন শিল্পী সবকিছুর ঊর্ধ্বে। লোভ, মায়া, নেশা, হিংসা, ক্রোধ এগুলো তাকে ছোঁবে না। তার কোনো গ-ি নেই, জাত, ধর্ম, দেশ নেই। আর্টিস্ট-রা বাংলাদেশি, ইংলেন্ডের, ভারতের নেপালের ! না, কোনো দেশের বা দলের নয়। মূলত শিল্পীর তো কোন দেশ নেই। এসব কোনো কিছুর প্রতিই শিল্পীর আগ্রহও নেই। শিল্পী যদি তার কাজের প্রতিও এমন লোভ বা মায়ায় ডুবে যান তবে সেটা ও ঠিক নয়, তিনিও তখন একটা গ-িতে আটকে যান। যিনি শিল্পী তার কোনো গন্ডি থাকে না। তার জাত, ধর্ম, দেশ বলে কিছু থাকে না। যদিও এসব না বুঝেই অনেকে বলে থাকে। যা একজন শিল্পীর জন্য পীড়াদায়ক। অবশ্য তিনি যদি শিল্পী হয়ে ওঠেন তবেই।
ষ একজন মানুষ কখন শিল্পী হয়ে ওঠেন সেটাও জ্ঞান বিজ্ঞান এবং যুক্তিযুক্ত কিছু তথ্য, তত্ত্বে¡র পড়াশোনা এবং সাধনা ও উপলব্ধি দিয়ে উপলব্ধ হতে হয়, তা না পারলে বুঝে উঠবেন না, ওঠেও না, এটাই সত্য। এবার আসি কাকে শিল্পী বলা হয়, এবং একজন মানুষ কখন কোন সময়ের জন্য শিল্পী হয়ে ওঠেন সেকথায়।
ষ একজন মৌলিক আবিষ্কারক [শিল্পী] মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সৃষ্টি করেন না, তিনি তার ইচ্ছে মতোই কাজ করেন। আর কোনো আবিষ্কারক যদি কারোর চাহিদামতো কাজ করেন তবে সেখানেও তার নিজস্বতা রাখেন বা নিজস্বতা থাকে যায় নিজের অজান্তেই [যদিও তিনি বাজারি কাজ করছেন]। যিনি কেউ সম্পূর্ণ মৌলিক কাজ করেন তিনি কত ঘণ্টা বা সময় দিয়ে কী কাজ আঁকলেন, গড়লেন বা লিখলেন, কত টাকায় বিক্রি করবেন এমন ভাবে করেন না। টাকা আর সময়ের কথা মাথায় রেখে কিছুই গড়েন না, করেনও না। এজন্য যিনি শিল্পী হয়ে ওঠেন তিনি ভাবেনই না কে তাকে ভালো বলল কি বলল না। এমন কি শিল্প সমালোচকের কথাতেও তাঁরা বিরক্ত হন না। একজন সমালোচক তিনিও যে একটি আর্ট দেখে হুবহু আটিস্ট (আঁকিয়ে)-এর মনোভাব বলে দিলেন তা নয়, বা আর্ট সম্পর্ক বলে ফেলবেন তাও নয়। যিনি আঁকেন, যিনি গড়েন, যিনি লিখেন তিনিই তার আসল ভাব জানেন, সমালোচকেরা বা সুধিজনেরা সে ভাবের পোশাকি কথা বলেন বা বলতে পারেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের অনুভূতিগুলো একজন আবিষ্কারকের [শিল্পী] হাতে নানারূপে মূর্ত হয়। সেরূপের খবর রূপদক্ষরাই জানেন। রূপদক্ষই-বা কাকে বলে, যিনি ছবি আঁকেন, ভাষ্কর্য গড়েন লিখেন- এরা কি সকলেই রূপদক্ষ ? এখানে মাস্টারমশাই শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ এর একটি উক্তি না বললে নিজেকে অপরাধী মনে হবে। অবনীন্দ্রনাথ রূপদক্ষের বিষয়ে বলেন, ‘বীণা দেখা যায় কিন্তু সুর তাকে দেখা যায় না। দেখা বীণার সাথে না দেখা সুরটি জড়িয়ে থাকে, সেটি বীণার প্রাণস্বরূপ বীণার কাঠামো ধরে আছে’। ব্যাখ্যাটি এমন যে, রূপ সবারই চোখে পড়ে কিন্তু রূপের মাধুরী সবার চোখে ধরা দেয় না। ফুলটা দেখলাম, ফুলের আঘ্রান নিয়ে ফুলের সৌরভ কেমন তাও জানলাম, কিন্তু এই হলেই যে ফুলের মাধুরীটিও পেয়ে গেলাম তা নয়।
ষ রূপের মধ্যে তিনটি জিনিস, একটি তার আকার-প্রকার, আর একটি অন্তর্নিহিত ভাব, এই দুই জড়িয়ে যা হলো সেটিই মাধুরী। রূপদক্ষদের কাছে কিছু পুরাতন হয় না, উদাসীনতা এনে দেয় না। তাদের মনে বারংবার নতুন হয়ে আসে মধুর হয়ে লেগে থাকে। এই পাহাড়, এই নদী, সমুদ্র, জলের ঢেউ, ওই আকাশ, বাযু, গ্রহ-নক্ষত্র-চাঁদ-সূর্যের আলো কখনো তা ফিকে, কখনো উজ্জ্বল এসব, এ সব মানুষ-সহ এই মহাজগতের তাবৎ কিছুই আমাদের কাছে কেয়েকবার দেখলে তা প্রাণহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু রূপদক্ষদের কাছে এসব কিছুই চিরনবীন চিরসতেজ, চিরযৌবনা তা যতবারই দেখা হোক না কেন। তারা রূপ আর ভাবটাই পায় তা নয়, তারা এর মাধুরীটুকু আস্বাদন করে আনন্দে মহানন্দে। প্রকৃতির শোভা, কবিতা গান ছবি ভাষ্কর্য এসবের মধ্যে তারা ঐ মাধুরীটুকু পায়। মাধুরী রূপকে চিরযৌবন দেয়।
ষ যারা শুধু পুথিগতচর্চার গ-িতে নিজেকে প্রতিযোগিতামূলকভাবে তৈরি করে সফলতা আর কেরিয়ারভিত্তিক জীবন গড়ার লক্ষ্যে সময় পার করে বৈষয়িক জীবনের গ-িতে অর্থ-সম্পদের মোহে আত্ম-অহংকে প্রতিষ্ঠিত করার এক মোহজালে নিজেকে আবদ্ধ করে, তারা সংস্কৃতি আর প্রকৃতিকে দেখে আহা কী দারুণ, [অসম, কঠিন, জোস, মারবেলাস, বিউটিফুল] শব্দে। এই সাথে নিজেকে জড়িয়ে লোক দেখানো সংস্কৃতি ও মহান দিবসগুলো উদ্যাপন করে অতি উৎসাহিত বোধ করে, যেখানে অশালীন দৈহিক মজা, ফুর্তি উদগ্র নেশায় মেতে ওঠে। এরা কখনোই জীবনে মাধুরীর সন্ধান পায় না। সৌন্দর্যের সন্ধান পায় না। এই আমরাই হচ্ছি পৃথিবীর ভাগ্যহত মানুষ, যাদের ভেতরে জন্মেছে রুচির দৈন্য। তাই সৌন্দর্যের লেশমাত্র নেই।
* অভাগা।
* এবার বলি মানুষ মানুষ হয়ে কখন সে কিছু কিছু সময়ে শিল্পী হয়ে ওঠেন আর বাকিটা সময় আবিষ্কারক হয়ে থেকে যান।
* আমদের জীবনের নান্দনিক সময়কে আনন্দে না রেখে একটা মিথ্যা সুখ নামের অলিক পাখি হয়ে ওড়ার নেশায় আত্মাহুতি দিয়েছি বারংবার। এখনো দিচ্ছি। জীবন নিয়ে সুখি হওয়াটা কাকে বলে সেটা অবশ্য আমার জানা নেই। এ জায়গায় তথাকথিত সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে যারা সুখি হওয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না, তারাই ব্যর্থ। এদের চিন্তামতে তারাই সফল যাদের কেরিয়ার অর্থ-সম্পদ সব কিছুতেই প্রথম দিকে। এটা সত্য যে, আমরা যতবারই সফল হওয়ায় ব্যস্ত হই ততবারই অন্যকে পরাজিত করে আমার প্রাপ্য স্থানটুকু গ্রহণ করে নিই। এই প্রতিযোগিতা যে একজন মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের বিদ্বেষ তৈরি করে এটা আমরা অনুধাবন করি না, ভ্রুক্ষেপ করি না। এখান থেকেও আমাদের মনকোষে অহং জন্মায়। আমাদের প্রাণ মনোময় হয়ে উঠতে পারে না।
* আমি কখনোই অস্বীকার করবো না যে, মানুষের জীবনে পুথিগত শিক্ষার প্রয়োজন নেই। অবশ্যই আছে, তবে ঔপোনিবেশিক এ শিক্ষাক্রম নয়। আমাদের দেশে শুধু ঔপোনিবেশিক শিক্ষা প্রচলিত তাও নয় ; একে মিশ্রিতশিক্ষা বলা যায়। যাক গে সেদিকে না যাই। পুথিগতবিদ্যা না থাকলে আমিও হয়ত লিখতে পারতাম না। পুথিগতবিদ্যায় বিদ্বান যে মানুষেরা নিজেদের শিক্ষিত ভেবে অন্য শিক্ষায় শিক্ষিতদের তুচ্ছতাচ্ছিল্লের দৃষ্টিতে নিরূপণ করে, তারা যে শিক্ষিতই হোক তারা যে নিরেট মূর্খ এটা বোঝার বাকি থাকে না। কেউ পুথিগত বিদ্বায় বিদ্যান হয়ে বা না হয়েও অন্য বিদ্যাশিক্ষা অর্জন করতেই পারে। এবং সেটা কোনো অংশেই গদবাঁধাপুথির চেয়ে কম নয়। এটা বুঝতে হবে।
* যারা কৃষি কাজ শিখে পৈত্রিকভাবে চাষাবাদ করছে তারাও শিক্ষিত [তবে পদপি থাকা উচিৎ থাকলে মন্দ হয় না]। পৈতৃকভাবেই কৃষি বিষয়ে শিক্ষিত, আবার একজন ব্যাংকার বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তিনি কিন্তু কৃষি বিষয়ে জানেন না ? তাই বলে কি তিনি শিক্ষিত নন ? অবশ্যই শিক্ষিত। তিনি ওই কৃষি বিষয়ে অশিক্ষিত, এরকম প্রতিটা জায়গাতেই। আর সকলকে কেনই বা জোর করে ধরে তথাকথিত পুথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত বানাতে হবে। এমএ বা পিএইচডি করতে হবে। যখন সবাই একই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে, সেখানে নতুন সম্ভাবনাগুলো গ-িবদ্ধ হয়ে পড়বে এতে পরিবেশ, সামাজ রাজনীতি-সহ সকল ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে প্রত্যেকে প্রত্যেকের চেয়ে নিজেকে বড়ো মনে করবে। এ পৃথিবী অসম, একে জোর করে সমান করতে গেলে এর ভারসাম্য নষ্ট হয়, হচ্ছে এবং হবে। সবকিছু সমান সমান করতে থাকলে তাতে অবকাঠামোগত উন্নতি হলেও মানবিক এবং সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ব্যাপক আকার ধারণ করবে। যদিও সমাজের এ প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতির ধারক বাহকেরা প্রায় সকলেই প্রহসনমূলক শিল্পচর্চায় উদ্বুদ্ধ। সুস্থ সংস্কৃতি ও মৌলিক শিল্পচর্চা মানুষের হয় না বললেই চলে। অসুস্থ সংস্কৃতি মানে জীবন বহন করে চলা। ব্যক্তি তার জীবন-কে যাপন করতে পারে অথচ জীবন বয়ে বেড়ায় নিজের অজান্তেই। আমরা চাই, আমাদের বিশ্বাস প্রতিজন মানুষ সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে সৌন্দর্যবোধ ও রুচিমান মানুষ হয়ে সুস্থ সুন্দর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য উৎকর্ষ লাভ করুক। সংস্কৃতির কথা বারবার বলছি এ জন্য যে, সংস্কৃতিহীন জীবন কখনো সুন্দরের খোঁজ পায় না, তৈরি হয় না রুচিবোধ। হিংসাত্মক প্রতিযোগিতামূলক পুথিশিক্ষায় এমএ হোক আর পিএইচডি হোক তা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের কোনো উপকারে আসবে না এই জন্য যে, তা সংস্কৃতি বিবর্জিত। শুধু পুথিগতবিদ্যা মানুষের জন্যে এখন একটা লোভের কারখানা। যেভাবেই হোক একটা সনদ থাকলই হবে, আর এই সনদের জন্য খুব ছোটো থেকেই একটা বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়, ‘তোমাকে প্রথম হতে হবে, তোমাকে অমুক কিছু হতে হবে। এটাই এখন মানুষের সর্বস্ব হয়ে উঠেছে। কিছু একটা হতে হবে। এটা আইডেন্টি ক্রাইসিস [একধরনের মানসিক রোগ]। এখানেই মানুষ আটকে গেছে। হয়ে উঠেছে আত্মকেন্দ্রিক। হারিয়েছে সরলতাও স্বচ্ছ আনন্দ। এর মানে এই নয় যে, পুথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হবো না। না। না। অবশ্যই পুথিগত বিদ্বায় বিদ্যান হবো, শিক্ষিত হবো, তার পাশাপাশি সংস্কৃতির পথটাও মাড়াবো। জীবন একটাই, তাই এটাকে আনন্দে রাখার দায়িত্ব আমাদেরই কাজ।
অলঙ্করণ : লেখক