‘আমি বড়োপর্দায় অভিনয় করব না’ -সামিরা

13 Jan 2021, 02:59 PM আকাশলীনা শেয়ার:
‘আমি বড়োপর্দায় অভিনয় করব না’ -সামিরা

রঙিন দুনিয়ার প্রতি সবার দুর্বার আকর্ষণ থাকে। থাকাটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে রুপালিজগৎ ঘিরে একধরনের উন্মাদনা আট থেকে আশি সবাইকে কিছুটা হলেও দোলা দেয়। খুব কম সুন্দরের কাছেই শুনেছি তিনি বড়োপর্দা নয়, অভিনয়ের জন্য ছোটোপর্দাকেই প্রাধান্য দিতে চান! এমন ভাবনার কথাই অকপটে জানিয়ে দিলেন ছোটোপর্দার সুন্দর আদুরে মুখ সামিনা বাশার! ইতোমধ্যে যেখানেই যে নির্মাতা তাকে দেখছেন একটু আগ বাড়িয়ে আলাপ জমাবার চেষ্টা করছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে এ মুহূর্তে পরিচ্ছন্ন সুন্দর অবয়ব আর চটপটে স্বভাবের মেয়ের কিছুটা অভাব থেকেই এই আলাপ জমাবার চেষ্টা। সব নির্মাতার ভাবনায় ধীসম্পন্ন নাচ-অভিনয়ে গুণবতীর দিকে, কিন্তু সবাই ছুটছেন গাড়ি থেকে হাইব্রিড গাড়ি আর ফ্ল্যাট থেকে বনানী-গুলশানের দিকে। এ অবস্থায় নির্মাতারাও তাই দিশেহারা। এই যখন অবস্থা তখন হালের কয়েকজন নির্মাতাকে নিরাশ করেছেন সামিনা বাশার। পাঠকের আগ্রহ বাড়ছে নিশ্চয়ই কে এই সুন্দর রুপালি পর্দায় নয়, নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চান মধ্যবিত্তের বোকার বাক্শে ছোটোপর্দায় ? নাম ইতোমধ্যে বলা হলেও তার পরিচয় দেওয়া হয়নি। সম্ভবত উন্নত নাসিকার এমন মেয়ে খুব কমই দেশের ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে। ইনি এমন কেউ, যাকে প্রথম দেখাতেই আলাদা করা যাবে। বিশেষত্ব এখানেই। কিঞ্চিত দেশ বিদেশ ঘোরা থাকলেও আপাদমস্তক খুলনার সামিনা ঘুরতেও ভালোবাসেন নিজ জেলা শহরে। বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের জবাব আর লুকটা আরও মোহনীয়-কমনীয়। প্রথম দেখাতেই যে কেউ বিভ্রান্ত হবেন, একটু আলাপ জমতেই এটাকিং কাউন্টারের মুখে পড়তে হবে। ওর ভাষায় গুণবিচারে আলোচনায় থাকতে চাই। আর সেটা শতভাগ কাজে লাগিয়েছেন দীপংকর দীপনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিকে ঘিরে। ওর ভাষায়, ‘সাড়ে তিন বছর বয়সে খুলনার আব্বাসউদ্দিন একাডেমি থেকে নাচের তালিম নিয়েছি। নাচ আমার প্যাশন। এরপর খুলনা থেকে স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে পাঞ্জাবে বিবিএ শেষ করেছি। এরমধ্যে নাচটা কিন্তু ছাড়িনি। তাছাড়া ফিটনেস ঠিক রাখতেও এটা জরুরি। সে কাজটা নিয়মিত করে যাচ্ছি। পাঞ্জাবে পড়াকালে ওই সময় স্টার প্লাসে অডিশন দিয়েছিলাম। সাড়ে ৭শ’ প্রতিযোগীর মাঝে নির্বাচিত হয়েছিলাম কিন্তু পড়াশোনা নষ্ট হবে বাবা-মায়ের এমন নিষেধে শেষপর্যন্ত মুম্বাই যাওয়া হয়নি। এই ফাঁকে অবশ্য মাথায় অভিনয় ব্যাপারটা ঢুকে গিয়েছিল। ভাবনায় রঙিন দুনিয়া। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে টুকটাক নাটক করতে শুরু করি। বি ইউ শুভই আমাকে সে সুযোগটা করে দিয়েছিল। তাদের ওখান থেকে ‘প্রেম ও পরীর গল্প’, ‘ক্রস কানেকশন’, মিশু সাব্বিরের সঙ্গে ‘ট্রাই অ্যাঙ্গেল’ করেছি। সেগুলো অন এয়ারের অপেক্ষায়। এর পাশাপাশি অপূর্ব’র বিপরীতে ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ নাটকটি এটিএন বাংলায় প্রচারিত। নাটকটি দর্শকনন্দিত হয়েছিল। মিহানুর রহমান লাবুর পরিচালনায় ‘ফেব্রুয়ারি’ নাটকটটি বাংলা ভিশনে প্রচারিত। প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে ‘পারফেক্ট ম্যাচ’, নিলয়ের বিপরীতে ‘খুনসুঁটি’। ‘সুপার গøু’ নামের একটি নাটক ইউটিউবে প্রচার হয়েছে। মূলত এগুলো সবই একক নাটক। সম্প্রতি তিনটি ধারাবাহিকের [‘ভেড়া পাত্র চাই’, ‘ভ্যাজাইল্লা গ্রাম’, ‘ফুটানি বাজার’] প্রস্তাব এসেছে। আমার সহশিল্পীও বেশ বড়োমাপের, গল্প ভালো লাগায় রাজি হয়ে যাই। তিনটি ধারাবাহিক পরিচালনা করেছেন সোহেল তালুকদার। সব ঠিকঠাক এ সপ্তাহে শুটিং শুরু হবে। হাতে রয়েছে সৌমিত্র ঘোষ ইমনের একটি বিজ্ঞাপনের কাজ [৮-৯ নভেম্বর শুটিং হয়]।  টুলুর পরিচালনায় ‘ভিকো নিম ফেস ওয়াশ’ বিজ্ঞাপন এখনও টিভি খুললেই সামিনাকে দেখা যাচ্ছে।

আপাতত এভাবে একটু হিসেব করে এগুতে চান এই মোহিনী। বলেন ওই এককগুলোর কল্যাণে আমি দীপকংর স্যারের নজরে পড়ি। তিনি আমাকে ডাকেন এবং ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাজের সুযোগ দেন। ভালো গল্প আর নির্মাতা পেলে একথা বলার সুযোগ নেই, ‘আমি বড়োপর্দায় অভিনয় করব না।’ 

ছবি নিয়ে বলতে গিয়ে সামিনা বলেন, দৈনন্দিন যে আমাকে সবাই দেখছেন ছবিতে সেটা কিন্তু না, সেখানে চরিত্রের প্রয়োজনে আমি গ্রামীণ সাধারণ একটা মেয়ে। মুখে সাতক্ষীরা অঞ্চলের ভাষা। গায়ে শাড়ি চড়িয়ে বেড়াই। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিপরীত আমাকে দেখবে দর্শক। 

এতে করে কি গø্যামার ব্যাপারটা প্রশ্নবিদ্ধ হলো কি না জানতে চাইলে সামিনার বুদ্ধিদীপ্ত জবাব, ‘তা হবে কেন, চরিত্রটাই মুখ্য। অভিনয় দেখাতে পারলে সেখানেও গ্ল্যামার ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। তাছাড়া এটা কেন আমরা ভাবি যে, গ্রামীণ পোশাকে মেয়েদের গ্ল্যামার থাকে না, অবশ্যই থাকে চরিত্র ধারণ করতে পারলে সেটাতে যে গ্ল্যামার থাকবে তা দেখে দর্শকও নড়েচড়ে বসতে বাধ্য, সো গ্ল্যামারের পূর্বশর্ত অভিনয় দক্ষতা, সেটা হলে গ্ল্যামার আপনাআপনি এসে ধরা দেয়।’ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করতেই জানিয়ে দিলেন ‘একজন পরিপূর্ণ অভিনয় শিল্পী হওয়া’। সেটা যেকোনো মাধ্যমেই হোক। যদিও ছোটোপর্দায় নাটক আর বিজ্ঞাপন ঘিরেই আপাতত আমার পরিকল্পনা’।

কখনও যদি প্রস্তাব আসে বড়োপর্দার জন্য তবে...? স্মিত হেসে সামিনা জানিয়ে দিলেন অন্তত ছয়জন নির্মাতা আমার সঙ্গে আলাপ করেছেন কিন্তু আপাতত ইচ্ছেটা নেই। তবে হ্যাঁ এফ আই মানিক, বদিউল আলম খোকন, মালেক আফসারী, কাজী হায়াৎ স্যারের মতো কেউ যদি ডাকেন অবশ্যই ভাববো। শাকিব খান আমার জুটি হলে তো ব্যাপারটাই অন্যরকম। অন্যথায় ছোটোপর্দা নিয়ে সুখে থাকতে চাই।

পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার কাজলকালো চোখের সামিনার প্রিয় রং গোলাপি। প্রিয় নায়ক শাকিব খান। প্রিয় নায়িকা আঁচল। প্রিয় পোশাক  শাড়ি, ফতুয়া, শালোয়ার কামিজ। শাড়িতে বাঙালির ঐতিহ্য আর মর্যাদা ধরা দেয়। সঙ্গে খোঁপায় তারার ফুল, কপালে ছোটো একটা টিপ, ঠোঁটে লাল রং। হাতে বাহারি রেশমি চুুড়ি।

প্রিয় চলচ্চিত্রের নাম বলতে চলে গেলেন স্টেফিন স্পিলবার্গের বিশ^নন্দিত ‘টাইটানিক’র কাছে। সিনেমাটির আপাতমস্তক সব চরিত্রই দারুণ টানে।

প্রিয় খাবার- ভর্তা, ভাত, ইলিশ মাছ।

সম্পর্কে জড়িয়েছেন কি না জানতে চাইলে জবাব, আগে তো ক্যারিয়ার নিয়ে একটু ভাবতে দিন। বয়সটা তিরিশের কোঠায় উঠতে দিন তারপর না হয় দেখেশুনে কাজটা সারা যাবে। তাহলে তিরিশ হতে বাকি কত ? সেটা তো বলা যাবে না, তবে ২৪ জুন খুলনায় আমার জন্ম। আমরা তিন বোন, আমি সবার বড়ো।

প্রিয় ব্যক্তিত্ব আমার ‘মা’। 

লেখা : আহমেদ তেপান্তর