পালংশাকের পুষ্টিগুণ

09 Feb 2023, 02:31 PM অন্যান্য শেয়ার:
পালংশাকের পুষ্টিগুণ


পালংশাক শীতকালীন একটি সবজি। এই সবজিটিতে রয়েছে শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য প্রচুর পুষ্টি উপাদান। বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখ থেকে শরীরকে বাঁচিয়ে রাখতে খাবারের তালিকায় পালংশাক রাখা যেতে পারে। পালংশাক খেতে যেমন মজা তেমনি এর উপকারিতাও অনেক।

পালংশাক শীতের সবজি হলেও সারাবছরই পাওয়া যায়। বহু পুষ্টিগুণে ভরপুর প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে প্রোটিনের পরিমাণ ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস ২০.৩ মি. গ্রাম, নিকোটিনিক অ্যাসিড ০.৫ মি. গ্রাম, অ্যাক্সালিক অ্যাসিড ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা.। এতে আঁশের পরিমাণ ০.৭ গ্রাম। এতে প্রচুর ভিটামিন বিদ্যমান। এতে ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আইইউ, রিবোফ্লোবিন ০.০৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা. ও থায়ামিন ০.০৩ মি. গ্রাম। পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান, তাই শাকটি নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে আমরা সুস্থ এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা পেতে পারি। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক পালংশাকের কিছু উপকারিতার কথা...


* রক্তচাপ কমাতে : পালংশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম। এর ফলে নিয়মিত পালংশাক খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।

* দেহের ওজন কমাতে : পালংশাক একটি কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার। তাই যারা কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে চান তারা পালং শাককে বেছে নিতে পারেন। কারণ, প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে ক্যালোরি রয়েছে মাত্র ৭ কিলোক্যালোরি, যা আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

* কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তাদের ভালোভাবে দৈনন্দিন জীবনযাপন করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই আছেন যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে ভয় পান। পালংশাকে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নির্ভয়ে সবজিটি খেতে পারেন।

* চোখ ভালো রাখতে : সবুজ শাক-সবজিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতি থেকে বাধা দেয়। পালং শাকে উচ্চ মাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকার কারণে চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

* ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে : পালং শাকে থাকা ভিটামিন-এ ত্বকের বাইরের স্তরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রন, বলিরেখা ইত্যাদি দূরীকরণেও খুবই কার্যকর। এছাড়া এটা ত্বকের বয়সের ছাপ পড়ার গতিকে কমিয়ে দেয় এবং ত্বক নরম ও স্থিতিস্থাপক অবস্থা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

* দেহের ক্লান্তিভাব দূর করতে : পালংশাকে রয়েছে অতিউচ্চ মাত্রার আয়রন যা দেহে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ভিটামিন সি এবং ই কে ত্বরান্বিত করে আমদের পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। এতে শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। পালংশাক আমাদের রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

* হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে : পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিনেজা যা সুস্থ কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য খুবই জরুরি। তাই হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য এই সবজিটি আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিতভাবে রাখা দরকার।

* দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে : এই সবজিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রোগ প্রতিরোধী রক্তের শ্বেত কণিকার সঠিক মাত্রা বজায় রাখে। ফলে আমাদের দেহ বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা পায়।

* ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে : পালং শাকে রয়েছে ১০টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড যা জটিল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই পলিনিউট্রিয়েন্টসগুলো দেহের ফ্রি রেডিকেলকে নিরপেক্ষ করে। ফলে দেহ ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকে।

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি থাকা খুবই প্রয়োজন। কারণ, শাক-সবজি ছাড়া সুষম খাবারের ঘাটতি পূরণ হয় না। আমাদের সবারই উচিত প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় শাক-সবজি রাখা। যেহেতু পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান –রয়েছে তাই সুষম খাদ্য উপাদান হিসেবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালংশাক হতে পারে একটি আদর্শ সবজি।