মনোভুবন

06 Jan 2021, 02:13 PM মনোভুবন শেয়ার:
মনোভুবন

জিজ্ঞাসা

আমার ছেলের বয়স ৬ বছর। এই বয়সেই চায়ের প্রতি তার তীব্র আসক্তি তৈরি হয়েছে। বাসায় মোটামুটি সবাই চা পান করে। তবে চায়ের প্রতি তীব্র মাত্রায় কারো আসক্তি নেই। কিন্তু আমার ছেলে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় কাপ চা পান করতে চায়, বিশেষ করে দুধ-চা। নিষেধ করলে বা চা না দিলে সে প্রচুর কান্নাকাটি শুরু করে দেয়, জেদ করে। তখন বাধ্য হয়ে তাকে চা বানিয়ে দিতে হয়। চায়ের প্রতি ছেলের এই আসক্তি দূর করতে কী করতে পারি, জানাবেন প্লিজ।

রেহনুমা খানম

বনানী, ঢাকা


পরামর্শ

চা এমনিতে খুব বেশি ক্ষতিকর নয়। বরং কেউ কেউ বা কোনো কোনো গবেষক চা’কে প্রয়োজনীয় এবং উপকারী হিসেবেই বলতে চেয়েছেন। চায়ের ভেতর যে রাসায়নিক বস্তু আছে তা বরং মানুষকে কর্ম উদ্দীপনা দিতে বা চাঙ্গা করতে সহায়তাই করে। তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ১২ বছরের নিচের শিশুদের যতটা সম্ভব কম চা দেওয়াই ভালো। 

যেকোনো নেশাই মানুষের দুই ধরনের জায়গায়ই প্রভাব ফেলে- শরীরে এবং মনে। চায়ের নেশাতে  শারীরিক প্রভাবের কথা কমই বলা হয়েছে। চায়ের মানসিক প্রভাবই বেশি। সুতরাং এটা ছাড়ানো অন্যান্য নেশা থেকে সহজ। চা না দিলে আপনার ছেলে কান্নাকাটি করে, এর কারণ হতে পারে চা না খাওয়ার কারণে তার ভেতর যে কিছু পরিবর্তন বা সমস্যা হয় সেটা। একবারে বা হঠাৎ করে একেবারে বন্ধ করে দিলে ওর জন্য হয়ত কষ্টকরই হতে পারে। তাই ওর ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে কমানোর পরিকল্পনা করাই ভালো। পাঁচ-ছয় কাপ থেকে, চার-পাঁচ, তারপর আরো কমিয়ে নিয়ে আনা।  

আপনি লিখেছেন আপনারা বাসায় সবাই চা পান করেন। ওর চায়ের নেশা কামানোর জন্য এটাই একটা ভালো দিকে হতে পারে। ওকে একা চা না দিয়ে সবাই যখন চা খাবেন, তখন তাকেও দেবেন। এভাবে কমিয়ে আনতে পারেন। শিশুদের চায়ের সঙ্গে সাধারণত বেশি মিষ্টি ও দুধও দেওয়া হয়। এটা চায়ের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এবং চিনি বা মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাসও অনেক সময় বারবার খেতে চাওয়ার কারণ হতে পারে। তাতে মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তাই ধীরে ধীরে, ওর চায়ে চিনি কমিয়ে দিয়েও অভ্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারেন। ধন্যবাদ।


জিজ্ঞাসা

আমার মা প্রচুর চা পান করেন। তিনি রং-চা পান করেন না, কড়া লিকারের দুধ-চা বা মসলা-চা পান করেন। আমার মায়ের বয়স ৬৫ বছর। এই বয়েসে প্রতিদিন ১৫ কাপের মতো চা তার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তার যেহেতু এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাই ডাক্তার বলেছেন দুই কাপের বেশি চা দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমার মা বলেন, চা না খেলে তার নাকি খুব মাথা ব্যথা হয় এবং অস্বস্তি লাগে। চায়ের প্রতি তার এই নেশা কীভাবে দূর করা যায় জানালে উপকৃত হব।

সুলতানা জামান

কেরানীগঞ্জ


পরামর্শ

এমনিতে চা খুব বেশি ক্ষতিকর নয়। বয়স্কদের জন্যও চা খারাপ কিছু না। বরং চা খেলে শরীর দ্রæত  ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কমে আসে। চা পানে শরীর চাঙ্গা থাকে, মজবুত থাকে, সজীব থাকে। প্রতিদিন তিন চার কাপ চা খাওয়া যেতে পারে। তবে তার চেয়ে বেশি চা খাওয়ার অভ্যাস কামানোই ভালো। অতিরিক্ত সব কিছুই খারাপ।

আপনার মায়ের অতিরিক্ত চা খাওয়ার এই অভ্যাস হয়ত হঠাৎ করে বন্ধ করা কঠিন। তাই ধীরে চলার নীতিই তাঁর জন্য ভালো নীতি হবে। প্রথমে যেটি করতে পারেন, সেটি হলো তাঁকে ঠান্ডা চা খাওয়ানোর অভ্যস করাতে পারেন। তাতে করে এসিডিটির সমস্যাও কমে আসবে। তারপর চায়ের পরিবর্তে অন্যান্য, এমন পানীয় দিতে পারেন যা তাঁর জন্য ক্ষতিকর নয়। যেমন, ডাবের পানি বা দুধ। এসব পানীয় তখন তাঁর নেশার চাহিদা কমিয়ে আনতে 

সহযোগিতা করবে। 


আপনার মানসিক সমস্যা আমাদের লিখে জানান। সমাধান দেবেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার সালাউদ্দিন কাওসার বিপ্লব। অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান মনোরাগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। 


চিঠি লেখার ঠিকানা

বাড়ি # ১৯/সি, সড়ক # ১, ধানমন্ডি,  ঢাকা-১২০৫। পিএবিএক্স : ৫৮৬১২০৪০ এক্স : ১০৩৪৪-৪৮ ফ্যাক্স : ৫৮৬১৩৪৭০ 

মোবাইল : ০১৬৩৩-৩৭২৯১৯. 

E-mail : manobhuban@gmail.com

অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন কাওসার বিপ্লব

সম্পাদক : মনের খবর