নিয়মিত হাঁটুন সুস্থ থাকুন

15 Sep 2022, 03:33 PM অভোগ শেয়ার:
নিয়মিত হাঁটুন সুস্থ থাকুন

কথায় আছে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। শরীর ভালো রাখার জন্য মানুষের চিন্তার শেষ নেই। নানা অনিয়মের কারণে দিন দিন বাড়ছে নানা রোগবালাই। শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস ও হার্টেরও সমস্যার হার দিন দিন বেড়ে চলছে। রোগ বাঁধিয়ে অনেক ওষুধ না খেয়ে একটু সচেতন হলেই কিন্তু সুস্থ জীবন কাটানো যায়। শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। আবার কর্মব্যস্ত এই নগরীতে এত আয়োজন করে ব্যায়াম করাও হয়ে ওঠে না। ডাক্তারেরা বলেন, হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। শরীরের রোগবালাই অনেকাংশেই কমে যায় নিয়মিত হাঁটার ফলে। তবে হাঁটারও রয়েছে নানা নিয়মকানুন। হাঁটার আগে বেশ কিছু প্রশ্ন আসতেই পারে মাথায়। কখন হাঁটবেন, কত সময় হাঁটবেন ইত্যাদি। সমস্ত বিষয়ের উত্তর নিয়েই এবারের অঁভোগ আয়োজন...


কখন হাঁটবেন !

হাঁটার জন্য ভোরের বেলা বেশ ভালো সময়। দিনের শুরুতে বাতাস থাকে নির্মল। এই বাতাসে হাঁটা শরীর ও মনের জন্য খুবই উপকারী। সকালে যারা সময় পান না তারা বিকেলেও হাঁটতে পারেন। বিকেলে হাঁটাও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে হাঁটতে হবে একটু জোর গতিতে। খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনার শরীর ঘেমে যায়। আস্তে আস্তে হাঁটলে কিন্তু শরীরের কোনো কাজেই আসবে না। প্রতিদিন যত হাঁটবেন শরীর তত ঝরঝরে হবে।


কতক্ষণ হাঁটা উচিত

একজন মানুষের জন্য সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা জরুরি। যারা প্রতিদিন হাঁটেন তারা ৩০ মিনিট করে হাঁটলেই যথেষ্ট। প্রতিদিন হাঁটা সম্ভব না হলে চিন্তার কিছু নেই। পাঁচদিন ৩০ মিনিট করে ১৫০ মিনিট হাঁটলেও আপনি সুস্থ থাকবেন। আপনার শারীরিক অবস্থা যদি খারাপ না থাকে তাহলে এর বেশি সময় ধরেও হাঁটতে পারেন। অনেকের হয়ত শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে আরো বেশি সময় ধরে হাঁটতে পারেন। তবে কখনোই ৩০ মিনিটের কম হাঁটা উচিত হবে না। কারো যদি একবারে ৩০ মিনিট হাঁটার সক্ষমতা না থাকে তাহলে দিনে দুই-তিনবারে সময় ভাগ করে নেওয়া উচিত। তবে বয়স্কদের হাঁটার বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


হাঁটার জায়গা

হাঁটার জন্য অবশ্যই নিরিবিলি পরিবেশ ভালো। দূষণমুক্ত সুন্দর পরিবেশেই হাঁটা আনন্দদায়ক। হাঁটার জন্য পার্ক, বাগান বা সুন্দর খোলা জায়গা বেছে নিতে পারেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় হাঁটা ফলপ্রসূ। সুন্দর, মুক্ত পরিবেশে হাঁটলে মন আর শরীর অনেকটা বদলে যায়।


খালি পা না কি জুতা

খালি পায়ে সবুজ ঘাসে হাঁটলে শরীরের বেশ উপকার হয়। এতে দেহের ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু শহরে এ ধরনের চিন্তা করাটা অনেকটা বিলাসিতা বটে। অনেকেই সকাল বিকেল ফুটপাতেই হাঁটেন। এখন অবশ্যই হাঁটার জন্য অনেক ধরনের জুতাও পাওয়া যায়। সেগুলো পরে হাঁটা বেশ স্বাস্থ্যসম্মত।


হাঁটার জন্য পোশাকও গুরুত্বপূর্ণ

হাঁটতে বের হওয়ার আগে পোশাকের দিকেও যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে। আরামদায়ক ও ঢিলেঢালা পোশাক হাঁটার জন্য বেছে নিন। আজকাল তো ব্যায়ামের জন্য হাঁটার জন্য পোশাকও রয়েছে বাজারে। কিনে নিতে পারেন নিজের মনের মতো পোশাকটি। হাঁটার জন্য আরামদায়ক জুতোর কথা তো আগেই বলা হয়েছে। সঙ্গে অবশ্যই পানীয় জল রাখুন। কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করুন।


যারা নতুন হাঁটাহাঁটি শুরু করেছেন

যারা নতুন হাঁটাহাঁটি শুরু করেছেন তারা প্রথমেই জোশ দেখিয়ে অনেক হাঁটাহাঁটি শুরু করবেন না ! একদিন-দু’দিন পর আস্তে আস্তে হাঁটার সময় ও গতি বাড়াবেন। প্রথমেই যদি জোরে এবং বেশিক্ষণ হাঁটেন তাহলে হঠাৎ মাংসপেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে শরীরে ব্যথা হতে পারে। তাই প্রথম দিকে কিছু নিয়মকানুন মানতে হবেই।


হাঁটা ! খাওয়ার আগে নাকি পরে

যারা খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলেছেন তাদের জন্য হাঁটা খুবই কার্যকরী। অনেকে বুঝে উঠতে পারেন না যে, খাওয়ার আগে হাঁটবেন নাকি খাওয়ার পরে। গবেষণায় দেখা গেছে খাওয়ার পরে হাঁটলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও খাওয়ার পরে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ডায়াবেটিস রোগী যারা তারা খাওয়ার পর দশ মিনিট হাঁটলে শর্করার লেভেল অনেক কমিয়ে আনতে পারেন। হাঁটার সময় শরীরে হার্টবিট বেড়ে যায় এবং মাসল শরীরে জমে থাকা কার্বোহাইড্রেট বা সুগার থেকে অ্যানার্জি সংগ্রহ করে।


কিছু জিনিস মনে রাখা জরুরি

হাঁটার সময় অবশ্যই আপনার হার্টবিট খেয়াল রাখুন। হার্টবিট বেড়ে গেলে হাঁটার স্পিড কমিয়ে দিতে হবে। নিরিবিলি জায়গা নির্বাচন করবেন। পুরো শরীরকে ঠিক ভঙ্গিতে রেখে, হাত ও পা ব্যবহার করে, মন স্থির করে হাঁটতে হবে। তাহলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে। হাঁটা শেষে বাসায় গিয়ে ভালোভাবে গোসল করতে হবে। হাঁটার ফলে যে ঘাম ও ময়লা জমে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আপনি যত বেশি হাঁটবেন, তত বেশি আপনার শরীর ঝরঝরে থাকবে। ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। হৃদরোগ, শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমাণ সবকিছুই ঠিক থাকবে।


হাঁটার উপকারিতা অনেক, হাঁটার কিছু উপকারিতা

হার্টের অসুখ কম হয়

যারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন তাদের হার্টের অসুখ, স্ট্রোক এসবের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। এছাড়া হাঁটার সময় শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিআর কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরল এইচডিআর-এর মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়া শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ও স্থূলতার ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষজ্ঞরা।


সুস্থতা বাড়ে

যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে ডাক্তারের পরামর্শে তারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন। এতে অবশ্য তারা উপকার পান। মজার কথা এতে টাইপ টুসডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যায়। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিয়মিত হাঁটলে ৬০ ভাগ পর্যন্ত কোলন ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। এটা স্বাস্থ্যের জন্যও খুব ভালো।


ভিটামিন ডি পূরণ

দিনের আলোতে, বিশেষ করে সকালে হাঁটার অভ্যাস করলে শরীর ভিটামিন ডি-তে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। দৈনন্দিন খাবার থেকে খুব অল্প পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪ হাজার ৪৪৩ জনের শরীরে ভিটামিন ডি-এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে। দেখা গেছে যাদের শরীরে ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত রয়েছে তারা অন্যদের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ সময় রোগটির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে পারে।


স্মৃতিশক্তি বাড়ে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত মানুষের স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। ৬৫ বা এর বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রতি ১৪ জনের মধ্যে ১ জনের স্মৃতিভ্রম হয়। আর ৮০ বা এর বেশি বয়সীদের ৬ জনের মধ্যে ১ জনের দেখা দেয় স্মৃতি হারানোর রোগ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্কদের মধ্যে যারা সপ্তাহে অন্তত ৬ মাইল পথ হাঁটেন তাদের স্মৃতিশক্তি অটুট থাকে।


জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি নেই

নিয়মিত হাঁটাচলা করলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি কমে যায়। সাধারণত বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের শরীরের বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা করে। শরীরের জয়েন্টগুলোকে সুস্থ রাখতে হাঁটা খুবই কার্যকর ব্যায়াম।


পায়ের শক্তি বাড়ায়

হাঁটলে শুধু পায়ের শক্তিই বাড়ে না পায়ের আঙুলেরও ব্যায়াম হয়। এছাড়া কোমর এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ নড়াচড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ থাকে।


বাড়ে পেশিশক্তি

হাঁটলে শুধু পা চলে না দু’হাতও সমান তালে চলে। এতে হাতের প্রতিটি জয়েন্ট, ঘাড় ও কাঁধের ব্যায়াম হয়। ব্যাকপেইনের সমস্যা কমে যেতে পারে নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে।



মানসিক টেনশন কমে

যাদের নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস, তাদের সঙ্গীর অভাব হয় না। একজন আরেকজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন আনন্দের মুহূর্তগুলো। সামাজিক পরিশ্রমের প্রভাব বাড়ার পাশাপাশি মানসিক চাপ ও টেনশন কমতে শুরু করে।

গ্রন্থনা : ফাতেমা ইয়াসমিন