গর্ভবতী মায়ের বিপদচিহ্ন, সতর্কতা এবং খাদ্য তালিকা

16 Aug 2022, 11:43 AM স্বাস্থ্যভুবন শেয়ার:
গর্ভবতী মায়ের বিপদচিহ্ন, সতর্কতা এবং খাদ্য তালিকা

মায়েদের গর্ভকাল অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। এসময় গর্ভবতী মায়ের দেহে আরেকটি নতুন প্রাণ একটু একটু করে বাড়তে থাকে। তাছাড়া জন্মদান প্রক্রিয়াও অনেক জটিল। সবার মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে প্রসবকালে মাতৃ এবং শিশুমৃত্যুর হার বেশি থাকলে আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক কমেছে। তবে এখনো যে পর্যায়ে আছে তাতেও উদ্বেগের বিষয় লক্ষণীয়। গর্ভকালীন মাকে বাড়তি খাবার এবং যত্নে নিতে হবে তার পরিবার থেকে। গর্ভবতী মায়ের এবং অনাগত শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রসূতির বিপদ চিহ্ন, সতর্কতা এবং খাদ্য তালিকা নিয়ে আলোচনা করা হলো

হঠাৎ রক্তপাত হলে করণীয়

প্রসবের সময় ব্যতীত গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় রক্তক্ষরণ বা প্রসবের সময় কিংবা প্রসবের পর অধিক রক্তক্ষরণ এবং গর্ভফুল না পড়া বিপদের লক্ষণ। তাই এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কোনো রকম চিন্তা-ভাবনা না করে পরিবারের উচিত মাকে দ্রæত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। অন্যথায় শিশু এবং মা দু’জনেই ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

 খিচুনি হলে : গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় এবং প্রসবের পর যেকোনো সময় যদি খিচুনি দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রসূতিকে ভর্তি করাতে হবে। খিচুনি একলামসিয়ার প্রধান লক্ষণ। তাই দ্রæত পদক্ষেপ এবং চিকিৎসায় শিশু ও মায়ের জীবনই রক্ষা পেতে পারে। তা না হলে এই রোগে শিশু এবং মা দুজনেই মারা যেতে পারে।

চোখে ঝাপসা দেখা বা তীব্র মাথাব্যথা হলে : গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা পরে শরীরে পানি আসা, প্রচণ্ড মাথাব্যথা এবং চোখে ঝাপসা দেখা পাঁচটি বিপদ চিহ্নের মধ্যে একটি। তাই এ ব্যাপারে মায়েদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় শরীরে সামান্য পানি আসা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। একটু বেশি হাঁটা-চলা করলে এ পানি চলেও যায়। কিন্তু যদি পায়ে অতিরিক্ত পানি আসে এবং প্রচণ্ড অস্বস্তির সৃষ্টি করে, পা ভারি হয়ে আসে তাহলেও ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

ভীষণ জ্বর হলে : গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর তিন দিনের বেশি জ্বর বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব প্রধান বিপদ চিহ্নের একটি। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় যদি কেঁপে কেঁপে জ্বর আসে এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হয় তাহলে সেটা মূত্রনালির সংক্রমণের ইঙ্গিত বলে মনে করলে সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা করালে অল্প সময়ের মধ্যেই এ জটিলতা দূর হয়ে যায়।

 বিলম্বিত প্রসব হলে : প্রসব ব্যথা যদি ১২ ঘণ্টার বেশি হয় অথবা প্রসবের সময় যদি শিশুর মাথা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ বের হয়ে আসে তাহলে বাসাবাড়িতে প্রসব করানোর চেষ্টা না করে সবার উচিত মাকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া।

গর্ভবতী মায়েদের সতর্কতা

 শিশুর নড়াচড়া : গর্ভাবস্থায় মা ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর নড়াচড়া অনুভব করেন। পেটের ভিতর শিশু ঘুমায় ও খেলা করে, যার অনুভূতি মা বাইরে থেকে বুঝতে পারেন। শিশুর নড়াচড়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা এবং সময় রয়েছে যা শুধু মা-ই অনুভব করেন। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে মা সেটা খুব দ্রæত বুঝতে পারেন। শিশুর অধিক নড়াচড়া বা কম নড়াচড়া দুটোই ক্ষতিকর। এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর ডাক্তার দেখানো উচিত।

 তলপেটে তীব্র ব্যথা : গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে সাধারণত তিন মাসের মধ্যে যদি কোনো সময় তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, রক্তক্ষরণ ও পেট শক্ত হয়ে যায় তাহলে দ্রæত ডাক্তার দেখানো উচিত। এক্ষেত্রে জরায়ু ছাড়া নালিতে এবং অন্যান্য স্থানে যেমন, পেটের ভেতর, ডিম্বাশয়ের মধ্যে গর্ভধারণ সেটা একটোপিক প্রেগন্যান্সি নামে পরিচিত। এটি অনেক সময় কেটে গিয়ে মায়ের জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এক্ষেত্রে দ্রুত অপারেশন ছাড়া মাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩৬ সপ্তাহে ন্যূন প্রতি মাসে একবার এবং ৩৬ সপ্তাহের পর প্রতি সপ্তাহে একবার করে মাকে স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তারকে দেখানো উচিত।

মাস অনুযায়ী গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকা

 প্রথম মাস : দুগ্ধজাত পণ্য, বিনস, বাঁধাকপি, লেবু, গোটা শস্যদানা, হাঁস-মুরগির মাংস এবং ডিম, ফলমূল, সবজি, চিজ বা পনির।

 দ্বিতীয় মাস : ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার আলমন্ড ও আখরোট, আয়রনযুক্ত খাবার পালংশাক, ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার বাঁধাকপি, সবুজ শাকসবজি, প্রোটিনজাতীয় খাবার, মুরগি, ডিম, দুধ, জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার মাছ, সবজি, বিনস এবং গাজর।

ষ তৃতীয় মাস : টাটকা ফল, সবুজ শাকসবজি, দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য, বাদাম, মাংস, দানাশস্য।

 চতুর্থ মাস : মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, ছোলা, সবুজ শাকসবজি, গুড়, শুকনো ফল, বাদাম, ছানা।

 পঞ্চম মাস : প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার এবং তাজা ফল।

 ষষ্ঠ মাস : তরলজাতীয় খাবার, ফলিক এসিডসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার, টাটকা শাকসবজি।

 সপ্তম মাস : সবুজ শাকসকজি, মাছ, মাংস, আয়রনসমৃদ্ধ খাবার।

 অষ্টম মাস : কলা, কমলালেবু, দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, রেডমিট, পিনাট মাখন।

 নবম মাস : উচ্চ ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার, ক্যালসিয়াম ও আয়রনযুক্ত খাবার, উচ্চ তন্তুযুক্ত খাবার, উচ্চ ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ-যুক্ত খাবার।