সপ্তাহের একমাত্র নতুন সিনেমা হিসেবে ৩ জুন শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে অঞ্জন আইচ পরিচালিত ও ইমন অভিনীত বহু প্রতিক্ষীত ছবি ‘আগামীকাল’। ছবিটি মোট ৩০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। সাইকো-থ্রিলারধর্মী এই সিনেমায় ইমন কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দীর্ঘদিন পর সিনেমা মুক্তি, বর্তমান কাজ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা হয় ইমনের সঙ্গে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
করোনা মহামারিতে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও ঝিমিয়ে পড়েছিল। অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আবার সরব হয়ে উঠছে ইন্ডাস্ট্রি। প্রতিসপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে এক বা একাধিক ছবি। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ জুন, শুক্রবার মুক্তি পায় মামনুন ইমন অভিনীত দীর্ঘ প্রতিক্ষীত ছবি ‘আগামীকাল’। ছবিতে ইমনের সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন জাকিয়া বারী মম ও সূচনা আজাদ। এর আগে ইমন ও মম ‘দারুচিনি দ্বীপ’- ছবিতে একসঙ্গে ১৫ বছর আগে অভিনয় করেছিলেন।
দিন যত যাচ্ছে অভিনয়েও বেশ পরিণত হচ্ছেন ইমন। ‘আগামীকাল’ ছবির আগে যারা ইমনের অভিনয় দেখেছেন তারা ‘আগামীকাল’ ছবিটি দেখে অকপটে বলেই ফেললেন সুন্দর ও সাবলীলভাবে অভিনয় করেছেন ইমন। দর্শক ‘আগামীকাল’ ছবিতে নতুন এক ইমনকে আবিষ্কার করেছেন। প্রতিদিনই ছবিটির জন্য প্রশংসা পাচ্ছেন ইমন। এই প্রসঙ্গে ইমন বলেন, একটি কাজ তখনই সার্থক হয়, যখন সেই কাজের ভালো রেসপন্স আসে। আমি সবসময় চেষ্টা করে আসছি, ভালো অভিনয় করার। আমি কখনোই নায়ক হতে চাইনি ; চেয়েছি একজন অভিনেতা হতে। জানি না কতটা পেরেছি, তবে আরো শেখার রয়েছে আমার। আগামীদিনে হয়ত আরো ভালো করতে পারব।
দীর্ঘদিন পর ছবি মুক্তির অনুভূতি জানতে চাইলে ইমন বলেন, অনেক ভালো লাগছে। আমার অভিনীত বেশকিছু ছবির কাজ সম্পন্ন হয়ে রয়েছে। করোনার কারণে ছবিগুলো মুক্তি দেওয়া হয়নি। অনেকে, বিশেষ করে আমার শুভাকাক্সক্ষীরা যারা এতদিন ধরে আমার সিনেমার অপেক্ষায় ছিলেন ‘আগামীকাল’ মুক্তির মাধ্যমে তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হলো। আমি চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিয়ে অভিনয় করতে। নায়ক ইমেজ থেকে বেরিয়ে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে হাজির করেছি।
আপনার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। নিজেকে পরিবর্তনের এই চিন্তাটি কখন থেকে আসছে ? ইমন বলেন, বলতে গেলে প্রথম থেকেই, অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন, যারা অভিনয় দিয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। হয়ত সেই ছবিগুলোর দর্শক কম। কিন্তু মানুষ মনে রাখেন অনেকদিন। অনেক গল্প আছে, যেখানে অভিনয়ের কোনো জায়গা থাকে না, এখন থেকে যেকাজগুলো করব, অবশ্যই অভিনয়ের জায়গা থাকতে হবে। এমন কিছু ছবিতে কাজ করতে চাই যেখানে চরিত্র ফুটিয়ে তোলার সুযোগ থাকবে। আমি তো অনেকগুলো সিনেমায় কাজ করেছি। মানুষ আমাকে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে পেয়েছেন। কিন্তু কিছু অভিনেতা আছেন যারা অল্প কাজ করেন। যে কয়েকটা করেন তার সবগুলোই জনপ্রিয়তা পায়। এটা হলো গল্প ও অভিনয়ের গুণ। আমি আসলে সেটাই বলতে চেয়েছি। এটাই হওয়া উচিত। এটা ছাড়া আমি তো দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে পারব না।
ঈদে আমরা দেখতে পেয়েছি ছবি দেখতে দর্শক সিনেমা হলে এসেছেন। আপনার অভিনীত ছবিটি কি সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে ? ইমন বলেন, আমি তো আশাবাদী, দর্শক আসছেও। ঈদের প্রেক্ষাপট কিন্তু ভিন্ন। ওই সময় সমস্ত মানুষের ছুটি থাকে, মানুষ বিনোদনের জন্য সিনেমা হলে যায়। তাই দর্শক বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া এবার ঈদে করোনার প্রকোপ না থাকায় টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর সিনেমা হল খুলেছে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, ঈদে যাদের ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে শুধু তারাই নয় ; আমরা সবাই সেই সিনেমাগুলোর প্রচারণা করেছি। কারণ, আমরা চেয়েছিলাম দর্শক হলে আসুক। তাদের হলমুখী হওয়ার অভ্যাসটা ফিরে আসুক। দর্শক কিন্তু ঈদের সিনেমাগুলো দেখতে হলে এসেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য তো পরের কথা। এখনো সিনেমাগুলো চলছে। ঈদের পরে ‘পাপ পুণ্য’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটি মানুষ দেখছেন। এবার ‘আগামীকাল’ সিনেমাটি মুক্তি পেল। আমি তো চাই, সবাই হলে গিয়ে সিনেমাটি উপভোগ করুন। তবে একটা কথা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে মানুষ হলবিমুখ ছিলেন। আমার মনে হয় হলমুখী হওয়ার সংস্কৃতিটা ফিরে আসতে একটু সময় লাগবে।
ইমন যখন এই অঙ্গনে কাজ শুরু করেন, অনেকেই তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন। সে আশার কতখানি প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছেন ? ইমন বলেন, আমার শুরুটা কিন্তু অন্যভাবে হয়েছে। শুরুতে আমি মডেল হিসেবে কাজ করি। প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রটির জন্য মানুষের প্রশংসাও পাই। সেই বিজ্ঞাপনচিত্রটি দেখেই আমাকে অনেকে তাদের বড়ো বড়ো কাজের সঙ্গে যুক্ত করেন। আমি অভিনয় শিখে আসিনি। অভিনয় শেখার শেষ নেই, আমি এখনো শিখছি। যত কাজ করছি, ততই অভিজ্ঞতা বাড়ছে। আগে অনেক কিছু বুঝতাম না, এখন কিছু বুঝি। কাজ সম্পর্কে ধারণা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ভালো কাজও করেছি। ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমায় আমার চরিত্রটিতে বেশ ব্যতিক্রম ছিল। আগামীতে আমার বেশকিছু সিনেমা আসছে। ‘কাগজ : দ্য পেপার’, ‘বীরত্ব’ ও ‘কানামাছি’ চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে আমি ‘আগামীকালে’র চেয়েও বেশি আশাবাদী। সিনেমাগুলোতে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ ছিল।মামনুন হাসান ইমনের ক্যারিয়ার শুরু হয় একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হওয়ার মাধ্যমে। প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্রেই নজর কাড়েন সবার। নাম লেখান অভিনয়ে। তার প্রথম অভিনীত ছবি তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে ছবিটি মুক্তি পায়। এরপর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ‘গহীনে শব্দ’ ছবিতে অভিনয় করে আরো পরিচিতি পান। এই ছবিতে সাবলীল অভিনয়ের জন্য তিনি বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেন। ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল, সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভাল এবং সাইলেন্ট রিভার ফিল্ম ফেস্টিভাল। এছাড়াও তিনি ‘লাল টিপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ব্যাপক প্রশংসিত এবং আলোচিত হন। বড়োপর্দার পাশাপাশি কাজ করেন ছোটোপর্দায়ও।