ঈদের সিনেমার হালচাল

29 May 2022, 02:30 PM মুভিমেলা শেয়ার:
ঈদের সিনেমার হালচাল

দিন যত যাচ্ছে তত কমছে সিনেমা হলের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত যে-ক’টি সিনেমা হল রয়েছে, তার বেশিরভাগ সিনেমা হল গুদাম ঘরের মতো। যার ফলে দর্শক হলমুখী হচ্ছে না। বর্তমানে পরিবেশটা একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারের ঈদে চারটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। সিনেপ্লেক্স ছাড়া ছবিগুলো তেমন একটা দর্শক টানতে পারেনি। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...


একটা সময় ছিল যখন বিনোদনের অন্যতম বড়ো মাধ্যম ছিল সিনেমা হল, তাই পরিবেশ ভালো না হলেও দর্শক বিনোদনের জন্য হলে যেতেন। সেইসময় প্রায় দেড় হাজার সিনেমা হল ছিল। সেখান থেকে এখন মাত্র দেড়শ সিনেমা হল সচল রয়েছে। সেগুলোও আবার নিয়মিত ছবি প্রদর্শন করে না। ঈদ উপলক্ষে কিছু সিনেমা হল চালু করা হয়, ঈদের ইমেজ গেলে আবার কিছু সিনেমা হল বন্ধ রাখা হয়।

এই দিকে করোনার কারণে টানা দুই বছর সিনেমা হলগুলো বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ থাকায় দর্শকও কম। এরমধ্যে সিনেমা হলকে চাঙ্গা করতে এবারের ঈদে বিগ বাজেটের একাধিক ছবি মুক্তি পায়। কিন্তু হতাশ করেছে সিনেমা হলগুলো। তেমন একটা দর্শক টানতে পারে নি মফস্বলের হলগুলো। এই দিক দিয়ে সিনেপ্লেক্সের চিত্রটি ঠিক উল্টো। টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে ঈদের সিনেমাগুলো।

এবার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘শান’, ‘গলুই’, ‘বিদ্রোহী’ ও ‘বড্ড ভালোবাসি’। এরমধ্যে এম এ রাহিম পরিচালিত ‘শান’ ছবির প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ ও পূজা চেরি। এস এ হক অলিক পরিচালিত ‘গলুই’- ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও পূজা চেরি। অন্যদিকে শাহীন সুমন পরিচালিত ‘বিদ্রোহী’ ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও বুবলী এবং জুয়েল ফারসির ‘বড্ড ভালোবাসি’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন নতুন মুখ সুলতানা রোজ নিপা, হাছিব খান শান্ত ও টালিউড অভিনেতা অমিতাভ ভট্টাচার্য।

এদিকে, দেশের প্রায় দেড়শ’ হলে দুই সপ্তাহ ধরে চলছে ঈদের সিনেমাগুলো। এর মধ্যে কিছু হল দর্শক আগ্রহের কথা ভেবে পাল্টাছে সিনেমা। চার সিনেমার মধ্যে ঈদে সবচেয়ে বেশি হল পেয়েছে ‘বিদ্রোহী’। এরপর আছে ‘শান’, ‘গলুই’ ও সবশেষ ‘বড্ড ভালোবাসি’। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন বেশ কিছু হলে প্রদর্শনের জন্য ‘শান’ ও ‘গলুই’ তোলা হচ্ছে। আর পিছিয়ে যাচ্ছে ‘বিদ্রোহী’র হল সংখ্যা। আর তেমন সাড়া নেই ‘বড্ড ভালোবাসি’র।

স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের প্রেক্ষাগৃহে দুটি সিনেমা চলছে ‘শান’ ও ‘গলুই’। ঈদের দিন থেকেই সিনেমা দুটি ভালোই যাচ্ছে। কোনোটা আগে পরে না করে বলা যায়, করোনার ধাক্কা সামলে নতুন আলোর পথ দেখাচ্ছে ঈদের সিনেমাগুলো। কারোনার কারণে আমরা দুই বছর চারটি ঈদে নতুন সিনেমা পাইনি। তবে এবারের চিত্রটা ভিন্ন। আমাদের তিনটি শাখায় দুটি সিনেমারই দুটি করে শো চলছে। দর্শক উপস্থিতিতে আমরা খুশি।

যমুনা ‘বøকবাস্টার’ ৭টি হলে ‘গলুই’, ‘বিদ্রোহী’ ও ‘শান’ চলছে। এর মধ্যে ‘শান’র তিনটি ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’র একটি করে শো হচ্ছে। শোগুলো ভালো দর্শক নিয়েই চলছে বলে জানা যায়।

এদিকে, ঢাকার বাইরের হলগুলোতে ঈদের সিনেমাগুলো খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। মফস্বলের সিনেমা হলের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছু‚ক বলেন, অবস্থা খুব খারাপ। ঈদে প্রথম আমরা মুক্তি দিয়েছিলাম ‘বিদ্রোহী’, আর এই সপ্তাহ থেকে চলছে ‘শান’ কিন্তু কোনো ছবিই দর্শক টানতে পারেনি। চলে না বলে নাইট শো বন্ধ করে দিয়েছি।

বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা আর. এম. ইউনুস বলেন, করোনার পর থেকে এখন একটু ভালো। তবে খুব ভালো, তা কিন্তু নয়। আমরা ঈদের পর থেকে ‘শান’ চালাচ্ছি। এটি যে ধরনের ছবি তার দর্শক হওয়া উচিত ছিল হল ভর্তি। প্রতিদিন চারটি করে শো হচ্ছে কিন্তু হলে আসন কিছুটা ফাঁকা যাচ্ছে। তবে শুক্রবারের শোগুলোয় একটু বেশি দর্শক ছিল। আপাতত খরচটা উঠে আসছে। ‘শান’র একটা ভালো লক্ষণ আমার একটা শোও বন্ধ হয়নি।

দর্শক টানছে সিনেপ্লেক্সগুলো

এবারের ঈদে আবারও প্রমাণিত হলো সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো হলে দর্শক অবশ্যই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখবেন। একসময় মধুমিতা, বলাকা, জোনাকী, আনন্দসহ ঢাকার সিনেমা হলগুলো জমজমাট ছিল। সিনেমার আগে-পরে দর্শকদের ভিড়ে পা ফেলা যেত না। এমনও দেখা যেত, দর্শক টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েই দেখতেন অন্য পাশে হাউজফুল লেখা বোর্ড ঝুলছে। সোনালি দিনের সিনেমার মতো এসবই এখন অতীত। ধুঁকে ধুঁকে কিছু হল চললেও বাকি সিনেমা হলগুলোর কোনোটা বন্ধ, কোনোটা মৃতপ্রায়। এ অবস্থা শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের নানা প্রান্তে এখন হাতে গোনা সিনেমা কয়েকটি হল চালু আছে। একের পর এক যেখানে কমতে শুরু করেছে সিনেমা হল, সেখানে দেশের সিনেমার দর্শকদের জন্য সুখবর নিয়ে আসছে মাল্টি সিনেপ্লেক্সগুলো। এখন দর্শকদের রুচি, চিন্তা, সময়ের রুটিন বদলে গেছে। মানুষ পরিবর্তিত হচ্ছে। সেখানে সমন্বিতভাবে সিনেমা হলকে বদলাতে হবে। তাহলে এর বিকল্প কী ? ভবিষ্যতে সিনেপ্লেক্সগুলোই আশা দেখাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিনেপ্লেক্সের দর্শক রুচি আলাদা। শুরুতে যদিও সিনেপ্লেক্স তাদের মতো করেই বিদেশি ছবির দর্শক ধরার চেষ্টা করেছিল। ধীরে ধীরে চিত্রটা বদলে দেশি সিনেমাকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সফলও হন। এখন তাদেরও ঢাকাই সিনেমার দর্শক তৈরি হয়েছে। সিনেপ্লেক্সে দর্শক আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি। একসময় যে সিনেপ্লেক্সে বাংলা ছবির দর্শক ছিল না, এখন হলিউডের সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দর্শক ভিড় করছে দেশের সিনেমা দেখার জন্য।


আশার আলো

এই দিকে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের পরে একের পর এক নতুন সিনেপ্লেক্স বানিয়ে সুখবর দিচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। স¤প্রতি তারা সিনেপ্লেক্সের পঞ্চম শাখা হিসেবে ১২ মে থেকে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে চালু করেছে নতুন সিনেপ্লেক্স। ১৮৬ আসন নিয়ে চলছে এটি। বরাবরের মতো মনোরম পরিবেশ, আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত সাউন্ড সিস্টেম, জায়ান্ট স্ক্রিনসহ বিশ্বমানের সিনেমা হলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ তিনটি বড়ো শহরে এবছরই সিনেপ্লেক্স চালু হবে। সিনেপ্লেক্সগুলো শুরু থেকেই দর্শকদের জন্য পরিবেশ ও সিনেমাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তাই সেখানে দর্শকও আসছে। তার ফল হিসেবে ঈদেও ‘গলুই’ এবং ‘শান’ দুটি সিনেমা-ই দর্শক টানতে পারছে। সিনেপ্লেক্স ছাড়া, হলে সিনেমা চালাতে প্রযোজকদের গুণতে হয় বাড়তি অনেক টাকা। পাওয়া যায় না আর্থিক কোনো সঠিক হিসাব। বকেয়া অর্থ পাওয়ায় জটিলতা রয়েছে। যে কারণে সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজক এখন মাল্টিপ্লেক্সের ওপর বেশি নির্ভর করছেন।