ছোটোপর্দার এক সুপরিচিত অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ। অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত আছেন দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময়। দক্ষ নৃত্যশিল্পী হিসেবেও বেশ পরিচিত তিনি। একসময় নিয়মিত ছিলেন উপস্থাপনাতেও। খুব একটা নিয়মিত নয় এখন ছোটপর্দায়। খুব বেছে বেছে কাজ করছেন তিনি। বর্তমান সময়ের মিডিয়া পরিস্থিতি, নাটক ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আনন্দভুবনের সঙ্গে। লিখেছেন ফাতেমা ইয়াসমিন
শিল্প-সংস্কৃতিঘনিষ্ঠ পরিবারে বিজরী বরকতুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ ছিলেন নাট্য ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। মা জিনাত বরকতুল্লাহ দেশের নামকরা একজন নৃত্যশিল্পী ছিলেন। খুব ছেলেবেলাতেই মায়ের কাছে তার নাচের হাতেখড়ি। মাত্র আড়াই বছর বয়সে বিটিভিতে নাশিদ কামালের উপস্থাপনায় ‘মাকে নিয়ে’ নামে ছোটোদের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে মিডিয়ায় বিজরীর আগমন। সেই ছোটো বয়সেই নাচের প্রতিভার কারণে তিনি হয়ে ওঠেন লিটল স্টার। নৃত্যের প্রতিই বিজরীর আগ্রহ বেশি ছিল কিন্তু বাবার অনুপ্রেরণায়ই তিনি অভিনয়ে আসেন। তবে তিনি বলেন, বাবা নাট্যব্যক্তিত্ব হওয়ার সুবাদেই যে তিনি নাটকে খুব সহজভাবে সুযোগ পেয়ে গেছেন তা নয়। রীতিমতো অডিশন দিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েই তিনি অভিনয়ে এসেছেন। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বিটিভির ‘সুখের ছাড়পত্র’ নামে একটি নাটক দিয়েই তার ছোটপর্দায় অভিষেক। এরপর তো অভিনয়ই হয়ে যায় নেশা ও পেশা। নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ রচিত বিটিভির জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে মূলত বেশ জনপ্রিয়তা পান তিনি। এরপর বলতে গেলে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অনেকগুলো নাটক, ধারাবাহিক নাটক ও খন্ড নাটকে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। অনেক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের মডেলও হয়েছেন। এর কারণে নাচ থেকে কিছুটা দূরেই সরে এসেছেন। বিজরী বলেন, শিল্পচর্চায় বিভিন্ন শাখার মধ্যে নৃত্যেই নিয়মিত চর্চার প্রয়োজন। কিন্তু অভিনয়ের ব্যস্ততার কারণে নাচে তিনি খুব একটা সময় দিতে পারেননি।
টিভি মিডিয়ার পেশাদার সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই কমবেশি সিরিয়াল, মেগামিরিয়ালে অভিনয় করছেন। কিন্তু বিজরীকে খুব একটা দেখা যায় না। এর কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, মেগাসিরিয়ালগুলোর টাইম সিডিউল বেশ মেইনটেইন করতে হয়। আমার পক্ষে সময় হয় না কেননা সংসারকে আমি বরাবরই প্রাধান্য দিই। তবে বর্তমানে অটটি প্লাটফর্মে বেশ কিছু নাটকে কাজ করছি। যার শুটিং প্রায় শেষ। বর্তমান সময়ের নাটক সম্পর্কে বেশ পজেটিভ মন্তব্য করেন তিনি। তিনি মনে করেন, আমরা যাদের নাটক দেখে বড়ো হয়েছি সুবর্ণা মুস্তফা, ফেরদৌসী মজুমদারসহ আরো যারা ছিলেন তাদের সময়টাই অন্যরকম ছিল। গল্পগুলো স্নিগ্ধ ছিল। তবে বর্তমানে নাটকের বাজেটগুলো বেশ কম সেই বাজেটে খুব ভালোমানের নাটক করা সম্ভব হয় না। তবে বাজেট ভালো হলে ভালো মানের নাটক কিন্তু এখনকার পরিচালকেরাও করতে পারছেন। চলচ্চিত্রে খুব একটা দেখা যায়নি প্রসঙ্গে বিজরী বলেন, আমি অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। কিন্তু অনেক অফার পেয়েছি যখন নিয়মিত ছিলাম কিন্তু তখনকার চলচ্চিত্রের অবস্থা যা ছিল তার সঙ্গে আমি খুব একটা অভ্যস্ত হতে পারিনি। তাই চলচ্চিত্রে আমাকে দেখা যায়নি। বর্তমানে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে মেহজাবিন অনেক ভালো করছেন বলে বিজরী মনে করেন। ছেলেদের মধ্যে কমবেশি সকলেই ভালো করছে। অভিনয়ের প্রতি যদি একাগ্রতা থাকে তাহলে সফলতা আসবেই। আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। যারা বর্তমান নাটকগুলোতে আছেন তাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, তাদের হাতেই বর্তমান পরিস্থিতি নির্ভর করছে যে, নাটক শিল্প ভবিষ্যতে কোথায় দাঁড়াবে। বিজরী বেশ পরিবারপ্রিয় মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে তার সুখের পরিবার। নাটক বা সিনেমায় অবশ্যই ভালোভাবে কাজ করার ইচ্ছে আছে যদি ভালো কোনো গল্পে তাকে প্রস্তাব করা হয়। সকলকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিজরী বরকতুল্লাহ।