নজর কাড়া আঁখি আর ভুবন ভোলানো হাসি, সঙ্গে দুধে-আলতা গায়ের রং। বলছিলাম লাক্স তারকা ফারিয়া শাহরিনের কথা। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে লাক্স সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শোবিজে পা রাখেন তিনি। খুব অল্প সময়ে তারকাখ্যাতিও পেয়ে যান। পরে অবশ্য কিছুটা বিরতিও নেন। বর্তমানে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। লিখেছেন ফাতেমা ইয়াসমিন
নোয়াখালি জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ নভেম্বর জন্ম নেন ফারিয়া শাহরিন। বাবা মো. শাহাব উল্লাহ একজন ব্যবসায়ী। মা এসএ জাহান একজন গৃহিণী। মা-বাবার আদরের সন্তান বলতে যা বোঝায় ফারিয়া তা। মেধাবী ও প্রতিভাবান হওয়ায় সকলের ভালোবাসা পেয়েছেন অনেক। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বেশ দখল ছিল তার। স্বাধীনচেতা ও স্পষ্টভাষী হিসেবে তিনি সুপরিচিত সকলের কাছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে লাক্স সুপারস্টার হন সেটা ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের কথা। এরপর অনেক নাটকে কাজ করেছেন। তবে বাংলালিংক-এর ‘কথা দিলাম’ টিভিসি দিয়েই তার পরিচিতি। এর পরেই মূলত ফারিয়া মিডিয়া জগতে পরিচিতি পান।
এরপর স্যান্ডালিনা বিউটি সোপের বিজ্ঞাপনটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। অনেক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ডে ফারিয়া বেশ পরিচিত মুখ। ফারিয়ার প্রথম নাটক ‘ছেলেটি’ যা বেশ প্রশংসিত হয়। তার অসাধারণ অভিনয় দিয়ে তিনি বেশ ভরসার একটি জায়গা করে নেন। বর্তমানে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ফারিয়া। ২০০৭-এ লাক্স সুপারস্টার খেতাব জয়ের পর অল্প কিছু কাজ করেছিলেন। রাতারাতি তারকাখ্যাতিও পেয়েছিলেন। তবে, পরবর্তীসময়ে তিনি অভিনয় থেকে একটু দূরেই সরে গিয়েছিলেন। পড়াশোনার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন মালয়েশিয়া। মিডিয়া মার্কেটিং-এ পড়াশোনা শেষ করে তিনি দেশে ফিরেছেন ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ও ‘যমজ’ নাটকের কাজ করছেন তিনি। ঈদের বেশ কয়য়েকটি নাটকের কাজ শেষ করেছেন, বিভিন্ন চ্যানেলে তা প্রচার হবে। ফারিয়ার ভাষ্য মতে, নাটকের মান আগের নাটকের সমতুল্যই বরং এখনকার সময়ের নাটকই বেশি ভালো। এখন হয়তো নাটকের গল্পগুলো তখনকার মতো নয়, তবে বেশ ভালো ভালো নাটকই তৈরি হচ্ছে এখন। ফারিয়ার আগে যারা কাজ করেছেন যেমন শমী, বিপাশা, মিমি, দীপা খন্দকার আরো অনেকে। তাদের নাটকে অভিনয় দেখেই মূলত শৈশব কেটেছে ফারিয়ার। তাদের মধ্যে বিপাশা হায়াত ও শমী কায়সারকে বেশ ভালো লাগত। খুব ইচ্ছে হতো তাদের মতো জনপ্রিয়তা পাওয়ার কিন্তু তখনো নিজে অভিনেত্রী হবেন এমনটা ভাবেননি। নিজের অভিনয়ের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন। তবে তিনি মনে করেন যারা শিখে আসছে তারা নিঃসন্দেহে ভালো। তবে কাজ করতে করতে শেখাটাও ভালো। যে যত কাজ করবে সে ততই অভিনয় শিখবে বলে মনে করেন এই অভিনেত্রী।
বর্তমানে যারা কাজ করছে তাদের সকলেই নিজ নিজ যোগ্যতাবলেই করছেন এবং ভালোই কাজ করছেন। তবে পায়েলের অভিনয় বেশ মুগ্ধ করে ফারিয়াকে। নতুনরা যেন অভিনয়টা ভালোবেসে করে আর অবশ্যই অভিনয়ে ভালো করতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এই বার্তাই তিনি দিতে চান নতুনদের। চলচ্চিত্রে খুব একটা কাজ করা হয়নি ফারিয়ার। সামিয়া জামানের ‘আকাশ কত দূরে’ সিনেমায় অভিনয় করেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রæয়ারি বিশ্ব ভালোবাসাদিবসে মুক্তি পায় সিনেমাটি। এই সিনেমাটিতে ফারিয়ার অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়। কিন্তু পরবর্তীসময়ে তাকে আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি।
ফারিয়া জানান, ভালো গল্প পেলে অবশ্যই তিনি চলচ্চিত্রে কাজ করবেন। চলচ্চিত্রে কাজ করার স্বপ্ন তো সব শিল্পীরই থাকে। ফারিয়া সবসময়ই বেশ স্পষ্টভাষী ও সাহসী, তার এ স্বভাবের জন্য অবশ্য একবার অনেকের রোষাণলেও পড়তে হয়েছে তাকে। তিনি বলেছিলেন লাক্স-স্টার হওয়ার পর অনেক নাটক ও সিনেমার অফার পেয়েছিলেন কিন্তু অনেক পরিচালক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কাজের বাইরেও তার সঙ্গে সময় কাটাতে চাইত। ফারিয়া সবসময় আত্মবিশ্বাসী, তিনি বিশ্বাস করতেন প্রতিভা ও পরিশ্রম থাকলে সফলতা একদিন আসবেই। আপাতত তিনি অভিনয় নিয়েই থাকতে চান। সবকিছু প্ল্যান করে হয় না তাই তেমন কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও নেই তার অভিনয় নিয়ে। যতদিন ভালো লাগা থাকবে দর্শকরা চাইবে তিনি কাজ করে যাবেন।