দাঁতের সুস্থতায় প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা -ডা. আওরঙ্গজেব আরু

21 Dec 2020, 02:22 PM দাঁতের যত্ন শেয়ার:
দাঁতের সুস্থতায় প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা -ডা. আওরঙ্গজেব আরু

প্রতিদিন দাঁত পরিষ্কার করা একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ। কিন্তু আমরা কীভাবে দাঁত পরিষ্কার করব আর দাঁত পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা নিয়ে কেউই ভাবি না। দাঁতের পরিচর্যার প্রথম শর্তটি হচ্ছে দাঁত ব্রাশ করা। প্রতিদিন টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলেও প্রায়শই দাঁতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকেই যায়। আর এসব সমস্যার একমাত্র কারণ হচ্ছে সঠিক নিয়মে টুথব্রাশ ব্যবহার না করা। ২৪ ঘণ্টায় অন্তত দুবার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দাঁত ব্রাশ করার সময় নরম ব্রেসেলযুক্ত টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হবে এবং উপরের ও নিচের চোয়ালের দাঁত লম্বালম্বি ব্রাশ করতে হবে, কোনো অবস্থাতেই পাশাপাশি ব্রাশ করা যাবে না। দাঁতের বাইরের অংশই শুধু নয়, ভেতরের দিকেও একই নিয়মে ব্রাশ করতে হবে। মাঢ়ির শেষদিকের দাঁতগুলো খুব ভালোভাবে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করি। এসব খাদ্যকণা দাঁতের ফাঁকে আটকে থেকে তৈরি করে ডেন্টাল প্ল্যাক। যা দাঁতের বাইরে ব্যাকটেরিয়ার এক ধরনের পাতলা আবরণ তৈরি করে। ফলে দেখা দেয় দন্ত্যক্ষয় রোগ, মাঢ়ির সমস্যা ইত্যাদি।

প্রতিদিন নিয়মমতো দু’বার অর্থাৎ সকালে নাস্তার পর এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে যাতে ডেন্টাল প্ল্যাক তৈরি করতে না পারে সেজন্য টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। অনেকে টুথ পাউডার ও আঙুল দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে থাকেন। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। আপনি কোনো ভালো অর্থাৎ ফেনা সৃষ্টিকারী টুথ পাউডার ব্যবহার করতে চাইলে তা টুথব্রাশ দিয়েও ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই আঙুল ব্যবহার করবেন না। কারণ আঙুল দিয়ে কার্যত মুখ ও দাঁত সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করা যায় না। আবার অনেকে ছাই, কয়লা, মাটি ইত্যাদি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে থাকেন। এটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষার পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। দাঁতের যতœ নিতে গিয়ে অনেকে আবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেন। মনে রাখবেন, দিনে অন্তত দুবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত হলেও তিনবারের বেশি দাঁত ব্রাশ করা কোনোভাবেই ঠিক নয়।

দাঁতের পরিচর্যায় টুথব্রাশ ছাড়াও ব্যবহার করা হয়ে থাকে ডেন্টাল ফ্লস। এটি একটি মোমমিশ্রিত সুতা। যা দিয়ে সহজে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা বের করে আনা যায়। টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলেও কিছু খাদ্যকণা দু’দাঁতের মাঝখানে আটকেই থাকে। আর এগুলো পরিষ্কারের জন্যই ব্যবহার করতে হবে ডেন্টাল ফ্লস। অর্থাৎ শুধু টুথপেস্ট টুথব্রাশ কিংবা শুধু ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা মানেই দাঁতের সার্বিক পরিচর্যা নয়। তাই সঠিক পরিচর্যায় টুথব্রাশের পাশাপাশি ডেন্টাল ফ্লসও ব্যবহার করতে হবে। ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা খুবই সহজ। দু’হাতের আঙুলে ফ্লসটি ধরে দু’দাঁতের মাঝের ফাঁকে ঢুকিয়ে উপর-নিচ টেনে ভালোভাবে খাদ্যকণাগুলো বের করে ফেলবেন। যাদের দাঁতে খাদ্যকণা জমে থাকার প্রবণতা বেশি অর্থাৎ কিছু খেলেই তা দাঁতের ফাঁকে আটকে যায়, তাদের জন্য ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা অপরিহার্য। প্রতিদিন একবার ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা ভালো। তবে এক কিংবা দু’বারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

আমাদের মুখে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু অর্থাৎ ওরাল ব্যাকটেরিয়া থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণার সংস্পর্শে এসে আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে দাঁতের স্থায়িত্ব অনেকাংশেই কমে যায়। মনে রাখবেন, একইধরনের টুথপেস্ট দীর্ঘদিন ব্যবহার করা ঠিক নয়। অবশ্যই বাজারে পাওয়া যায় গুণগতমানের ভালো এমন সব টুথপেস্ট বদল করে করে ব্যবহার করতে হবে আপনাকে। কেননা, একই টুথপেস্ট ব্যবহারে জীবাণুরা ওই টুথপেস্টের প্রতি সহনশীল হয়ে পড়ে। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করার পাশাপাশি আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে টুথব্রাশ ও ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করার পরও ডেন্টাল প্ল্যাক কিংবা গাম বি¬ডিং সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি না। প্রয়োজনে আপনি একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। আপনার মুখ ও দাঁতের সুস্থতার দায়িত্ব আপনারই। ¡

লেখক

ডা. আওরঙ্গজেব আরু

সাধারণ সম্পাদক

বাংলাদেশ ডেন্টাল হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন

চিফ কন্সালটেন্ট

ইলাহী ডেন্টাল কেয়ার

মেরুল বাড্ডা প্রধান সড়ক, ঢাকা।

ফোন : ০১৭১১১১০৬৭৯