দলবল নিয়ে বাংলা ছবি দেখেন আনিকা

19 Dec 2021, 02:41 PM আকাশলীনা শেয়ার:
দলবল নিয়ে বাংলা ছবি দেখেন আনিকা

সানজিদা ইসলাম আনিকার ক্যারিয়ারের বয়েস বেশি দিনের নয়, এই অল্প সময়ে সাবলীল অভিনয় করে একটা অবস্থান তৈরি করেছেন। তার অভিনীত প্রথম নাটক ক্যাটস আই ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে আরটিভিতে প্রচার হয়। প্রথম নাটকেই অভিনয় দিয়ে জয় করে নেন নির্মাতদের মন। এরপর একের পর এক কাজ করে দর্শকের মনও জয় করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হন তিনি। বর্তমানে তার অভিনীত একাধিক ধারাবাহিক নাটক ও তিনটি বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচার হচ্ছে। বিস্তারিত লিখছেন শেখ সেলিম...


সানজিদা ইসলাম আনিকার সুপারহিরো টাইপের সিনেমা খুব পছন্দের। বিশেষ করে ডিসি সিরিজের ছবি তার খুব ভালো লাগে। এরমধ্যে রয়েছে ব্যাটম্যান ও সুপারম্যান। এই সিরিজের প্রত্যেকটি ছবি দেখেছেন তিনি। শুধু হলিউড-বলিউডে সীমাবদ্ধ নন, বাংলা ছবির একজন ভালো দর্শকও তিনি। সময় পেলে দলবল নিয়ে ছোটেন বাংলা সিনেমা দেখতে। সবশেষ দেখেছেন মিশন এক্সট্রিম ও রেহানা মরিয়ম নূর। সিনেমা হলে গিয়ে প্রথম দেখা ছবি এক টাকার বউ।

মডেল ও অভিনেত্রী সানজিদা ইসলাম আনিকার ক্যারিয়ারের বয়েস মাত্র তিন বছর। এই অল্প সময়ে খণ্ডনাটক, ধারাবাহিক-নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছেন। প্রতিযোগিতার এই সময়ে সকলের সঙ্গে দৌড়ে যেখানে টিকে থাকাটাই দুরূহ ব্যাপার সেখানে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তরুণ এই অভিনেত্রী। 

বর্তমানে বিভিন্ন চ্যানেলে একাধিক ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে। এরমধ্যে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে প্রচার হচ্ছে ধারাবাহিক নাটক ‘১০০ তে ১০০’, দীপ্ত টিভিতে ‘মান অভিমান’ প্রভৃতি। এছাড়া খুব শিগ্গিরই আরটিভিতে প্রচার হবে দুটি ধারাবাহিক নাটক। নাটক দুটি হচ্ছে ‘যাদু নগর’ ও ‘পাল্টা হাওয়া’। এছাড়া খণ্ডনাটকও প্রচার হচ্ছে। নাটকের পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে সানজিদা অভিনীত তিনটি বিজ্ঞাপনচিত্র। বিজ্ঞাপনচিত্রগুলো হচ্ছে প্রাণ, নাভানা ও রাঁধুনী সরিষা তেল।

প্রচারিত নাটকগুলোর মধ্যে দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত ‘মান অভিমান’ নাটকে সানজিদা রানু চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে আসন করে নিয়েছেন। নাটকটির প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সানজিদা। এই প্রসঙ্গে সানজিদা বলেন, প্রথমবারের মতো এমন দীর্ঘ সিরিয়ালে দর্শক আমাকে দেখছেন। আমিও দারুণ উৎসাহ নিয়ে প্রতিটি পর্বে অভিনয় করছি।

সানজিদা বর্তমানে কাজ করছেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের ‘কাগজের ফুল’, বিকে আকাশের ‘ক্যাট হাউজ’ নামে এনটিভির দুটি ধারাবাহিক নাটকে।

সানজিদা ইসলাম আনিকার অন্যান্য অভ্যাসের মধ্যে সিনেমা দেখা অন্যতম। সিনেমা দেখা ছাড়া যেন দিনটিই অপূর্ণ থেকে যায় তার। অভ্যাসটির সঙ্গে তার বসবাস সেই ছেলেবেলা থেকেই। প্রায়ই দল বেঁধে কাজিন ও বন্ধুরা মিলে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, সিনেমার বিভিন্ন চমকপ্রদ দৃশ্য দেখে শিসও বাজান। এটা তার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। মাঝে মাঝে সানজিদা সিনেমার চরিত্রেও ঢুকে যান। দর্শকসারিতে বসে পর্দার নায়িকাও বনে যান মাঝে মাঝে।

৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার সানজিদা কখনোই ভাবেননি অভিনেত্রী কিংবা মডেল হবেন। ভালো উচ্চতা ও সুঠাম দেহী হওয়ায় কাছের মানুষেরা সানজিদাকে অভিনয় করার জন্যে উদ্বুদ্ধও করেন। কিন্তু সানজিদা এটাকে কখনো আমলে নেননি। কারণ, সানজিদা জানতেন অভিনয় করাটা খুব কঠিন। তবে হঠাৎ সেই নায়িকা হওয়ার সুযোগটি চলে আসে তার কাছে। সানজিদাও অনেকটা শখের বসে ‘ক্যাটস আই’ শিরোনামের ধারাবাহিক নাটকটিতে অভিনয় করেন। প্রথম দিকে অভিনয় করতে সমস্যা হলেও পরে তা আয়ত্ত করে নেন। নাটকটি আরটিভিতে প্রচার হয়।

শখের বসে কাজটি করলেও এখন এটাই তার ধ্যান-জ্ঞানে রূপান্তরিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সানজিদা বলেন, প্রথম দিকে ক্যামেরার সামনে খুব নার্ভাস ছিলাম। যে দৃশ্যে সংলাপ থাকত, সেই দৃশ্য করতে হাত পা কাঁপত, যে দৃশ্যে সংলাপ থাকত না, সে দৃশ্য করতে বেশি খুশি হতাম।

যেদিন থেকে নাটকটি প্রচার শুরু হলো, সেদিন থেকে এই অঙ্গনের প্রতি একটু একটু করে ভালোবাসা জমতে শুরু করে। ভেতর থেকে জানান দিচ্ছিল, হ্যাঁ আমি তো এটাই করতে চেয়েছি। এইভাবেই এই অঙ্গনের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়।

মানুষের স্বপ্ন প্রতিনিয়ত বদলে যায়। ব্যতিক্রম ঘটেনি সানজিদার ক্ষেত্রেও, সেটা অকপটে স্বীকারও করলেন তিনি। ছেলেবেলায় ঘনঘন স্বপ্নের পরিবর্তন হতো, চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সানজিদা। পরে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখলেন, সেটাও একটা সময় বদলে গেল। একপর্যায়ে কমার্সে ভর্তি হলেন, তখন স্বপ্ন দেখলেন সিএ পড়বেন, চ্যার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হবেন। সেটাও ভেঙে গেল। এরপর স্বপ্ন দেখলেন বিবিএ সম্পন্ন করে ব্যাংকার হবেন। এসএসসি শেষ করে এইচএসসিতে ভর্তি হন মোহাম্মদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে, সেখানকার প্রিন্সিপাল ছিলেন লে. কর্নেল। স্যারকে দেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখলেন আর্মি অফিসার হবেন। যখন আর্মিও হতে পারলেন না তখন স্বপ্ন দেখলেন নায়িকা হবেন। পাশাপাশি মডেলিং করবেন। সেই স্বপ্ন নিয়েই মিডিয়ায় কাজ শুরু।

এই পর্যন্ত আটটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন সানজিদা। পাশাপাশি বেশকিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হয়েছেন। স¤প্রতি পাঁচটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছেন। এরমধ্যে তিনটি বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচার হচ্ছে।

যেহেতু অভিনয়টা নিয়ে এখন তার যত স্বপ্ন, তাই অভিনয়ের সব অঙ্গনেই কাজ করতে চান তিনি। যারা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত সবারই ইচ্ছে থাকে নিজেকে বড়োপর্দায় উপস্থাপন করার। এই ইচ্ছের বাইরে নন সানজিদাও। বড়োপর্দার প্রতি অনেকটাই দুর্বল সানজিদা। ভালো গল্প হলেও বড়োপর্দায় অনায়াসে কাজ করতে চান তিনি। নাটক, বিজ্ঞাপন কিংবা ছবি সব জায়গায়ই অভিনয় জরুরি। তাই অভিনয়ের প্রতি বেশি মনোযোগী এই তরুণী। অভিনয় প্রসঙ্গে সানজিদা বলেন, আমি প্রতিটি নতুন কাজে নতুন স্বাদ পাই। কারণ, আমি সানজিদা থেকে আর একটি চরিত্রে অভিনয় করতে পারছি বা একটি প্রোডাক্টকে উপস্থাপন করতে পারছি, এটার আনন্দ প্রকাশ করার মতো নয়।

সিনেমায় কাজ করা প্রসঙ্গে বলেন, সিনেমার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সব শিল্পীরই কিন্তু একটা স্বপ্ন থাকে বড়োপর্দায় নিজেকে দেখার। আমিও তার বাইরে নই। অবশ্যই বড়োপর্দায় কাজ করব। সিনেমা নিয়ে কথাও হচ্ছে। সবকিছু ব্যাটেবলে হলে জানাব।

ভবিষৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, অভিনয় করতে চাই, অভিনয় দিয়ে মানুষের মন জয় করে নিতে চাই। অভিনয় করে অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। অনেক-কে আমি চিনিও না, কিন্তু আমাকে চেনেন, তারা আমাকে ভালোবাসেন, এই ভালোবাসার মায়া, নেশা, আমাকে এই অঙ্গনের প্রতি আরো দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। একজন শিল্পী হয়ে মানুষের হৃদয়ে থাকতে চাই।