গ্ল্যামার থাকলে মিডিয়া ডাকবে -ফারিয়া শাহরিন

লাক্স সুন্দরী হওয়ার পর থেকেই মিডিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন ফারিয়া শাহরিন। ব্যস্ত থাকলেও কখনোই তিনি স্রোতের জোয়ারে গা ভাসিয়ে কাজ করেন নি কখনো। প্রতিটি কাজের আগে পরিবার ও সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়েছেন। যার কারণে পর্দায় নিয়মিত দেখা যায় নি। আবার পড়াশোনার জন্যেও মাঝে মাঝে বিরতি নিতে দেখা গেছে তাকে। পড়াশোনা শেষ করে এখন আবার নিয়মিত হয়েছেন। পাশাপাশি শুরু করেছেন ব্যবসাও। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...

২০০৭ সালে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হন ফারিয়া শাহরিন। বাংলালিংকের ‘কথা দিলাম’ প্যাকেজের বিজ্ঞাপনচিত্রটি তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেন। ছোটপর্দার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বড়োপর্দায় অভিনয় করেন। এখানেও সফল তিনি। খণ্ড নাটকের পাশাপাশি দুটি ধারাবাহিক নাটকেও অভিনয় করেন। একটি ‘দৈনিক তোলপাড়’ অন্যটি ‘এয়ারকম’।

জনপ্রিয়তা থাকা সত্তে¡ও পড়াশোনার জন্যে দীর্ঘদিন মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন এই অভিনেত্রী। পড়াশোনা শেষ করে আবার অভিনয়ে নিয়মিত হন। পাশাপাশি একটি ব্যবসাও খোলেন। ফারিয়া অভিনীত সবশেষ নাটক ছিল ‘বাট কিন্তু ওয়াট মানে ভালোবাসা’ নাটকটিতে তার সহ অভিনয়শিল্পী ছিলেন জাহিদ হাসান। নাটকটি আরটিভিতে প্রচার হয়। এছাড়াও ফারিয়া অভিনীত এবছরের নাটকের মধ্যে রয়েছে বিয়ে করলেই সব ঠিক, কেয়ারিং ডেয়ারিং, আসল পুরুষ, টাকার মেশিন, জামাই শাশুড়ি, সাদা মানুষ প্রভৃতি। প্রচারিত নাটকগুলোর মধ্যে সুমন আনোয়ার পরিচালিত সাদা মানুষ নাটকটি দর্শক মহলে প্রশংসিত হয়। এরমধ্যে একাধিক নাটকের কাজ থাকলেও পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্যে কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন তিনি।

এরমধ্যে যোগাযোগ ছিল নির্মাতাদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলে বেশকিছু নাটকের ডেটও দেন। বর্তমানে সেই নাটকগুলো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই বছরে প্রচারিত নাটকগুলো প্রসঙ্গে ফারিয়া বলেন বর্তমান সময়ে যেসব নাটকে কাজ করছি সেই নাটকগুলো থেকে এতই ভালো রেসপন্স পাচ্ছি, মনে হচ্ছে এই অঙ্গনে নতুন এসেছি।

ফারিয়ার জন্যে আরো একটি সুখবর হচ্ছে যখন তিনি দেশের বাইরে ছিলেন সেইসময়ে আরটিভিতে প্রচারিত জমজ নাটকের নির্মাতা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে, জমজ নাটকের জন্যে তাকে নির্বাচন করেন। ফারিয়াও সেই সুযোগ লুফে নেয়। খুব শিগগিরই শুরু হবে জনপ্রিয় সিক্যুয়েল নাটক জমজ-এর কাজ। পাশাপাশি আরো কয়েকটি নাটকে অভিনয় করবেন বলে জানান ফারিয়া। অভিনেয়ের পাশাপাশি ফারিয়া শাহরিন ব্যবসাও শুরু করেছেন। ব্যবসা মূলত অনলাইনে পণ্য বিক্রির। নাম ‘কমপ্লিমেন্ট ইয়োর মিরর’। যেখানে শুধুমাত্র মেয়েদের কসমেটিক্স থেকে শুরু করে টি-শার্ট ও জুতা পাওয়া যাবে।

কিছুদিন আগে ফারিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় প্রসঙ্গে ফারিয়া বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝে নিজেকে মূল্যায়ন করতে ভুলে যাই। জীবন নিয়ে হতাশা কাজ করে। অতিরিক্ত চিন্তা করি। কিন্তু নিজেকে মূল্যায়ন করলে যে কেউ নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়! তখন বুঝতে পারে যে সে নিজেও সুন্দর। কাজে পারদর্শী। ‘কমপ্লিমেন্ট ইয়োর মিরর’ মানে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে নিজেকে নিজে মূল্যায়ন করো।’

ফারিয়া জানান, তার চাকরি করাটা খুব বেশি ভালো লাগে না। ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার। সেই ভাবনা থেকেই ব্যবসা শুরু করেছেন। কম মূলধন নিয়ে ছোট পরিসরে ব্যবসা আরম্ভ করেছেন। রেসপন্সের উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির। 

ফারিয়া শাহরিন বলেন, মিডিয়াতে কাজ করি ভালো লাগা থেকে। যতোদিন আমার গ্ল্যামার থাকবে মিডিয়া ততোদিন আমাকে চিনবে, গ্ল্যামার শেষ হলে আর কেউ ডাকবে না আমাকে। এটাই মিডিয়ার কঠিন বাস্তবতা। ব্যবসা শুরুর নেপথ্যে এই ভাবনাও কাজ করেছে।

সাদা মানুষ নাটকে অভিনয় করে ব্যাপক আলোচিত হন ফারিয়া শাহরিন। সেই কাজের প্রশংসা ফারিয়ার মন ছুঁয়ে গেছে। পরে তিনি অভিনয়ে আরও সিরিয়াস হন। তবে তার আক্ষেপও রয়েছে, মনমতো চিত্রনাট্য খুব একটা পান না বলে।

আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অভিনয় নিয়ে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে ফারিয়ার। সেইমতো গল্প, চিত্রনাট্য ও চরিত্র পেলে অবশ্যই ভালো অভিনয় দর্শকদের উপহার দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।

চলার পথে একজন ভালো বন্ধু খুবই প্রয়োজন। পেয়েছেনও। সারাজীবনের জন্যে সেই বন্ধুকে পাশে রাখতে ইতোমধ্যে বাগদানও করে ফেলেছেন। বরের নাম মাহফুজ রায়ান। ধানমন্ডির বাসিন্দা রায়ান একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে এই বাগদান সম্পন্ন হয়। বাগদান প্রসঙ্গে ফারিয় বলেন, ‘আমরা একে অপরকে কয়েক বছর ধরেই চিনি। চার বছর প্রেম করেছি। এরপর দুজনে মিলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের ভালোবাসায় দুই পরিবার পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। আশা করছি, বছরের শেষে আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।’

ফারিয়া জানান, পরিবার থেকে কয়েক বছর ধরেই বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করার জন্য পরিবার থেকে সময় চেয়েছিলেন তিনি। মালয়েশিয়ার এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া মার্কেটিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর আবার অভিনয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

পরিবারের চাপ এবং নিজের তাগিদ থেকে এই সময়ে বিয়ের ব্যাপারে সম্মত হন তিনি। নতুন জীবন শুরুর আগে ফারিয়া বলেন, আমি সবার কাছে দোয়া চাই, সারাজীবন একসঙ্গে যেন থাকতে পারি, সেই চিন্তা থেকে এই মানুষটাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছি।