দিবা-নিশি এক ও আলাদা

21 Sep 2021, 12:13 PM আকাশলীনা শেয়ার:
দিবা-নিশি এক ও আলাদা

ফাহমিদা দিবা ও ফারজানা নিশি তারা দুই বোন। নাম ভিন্ন হলেও তাদের চেহারা এক। কে দিবা আর কে নিশি দেখে আলাদা করার উপায় নেই। এই নিয়ে আছে তাদের মজার মজার গল্প। দুই বোনই যুক্ত আছেন মিডিয়ার কাজের সঙ্গে। চেহারা এক এবং দেখতে সুন্দর হওয়ায় বিজ্ঞাপন বা নাটকে তাদের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। এবারের আকাশলীনায় নতুন প্রজন্মের শিল্পী জমজ এই দুই বোনের গল্পে সাজিয়েছেন নিথর মাহবুব...

দিব-নিশি দুই বোনের সঙ্গে আলাপের শুরুতেই জানা গেল, তাদের মধ্যে দিবা কিছু সময়ের বড়ো। জন্ম ঢাকায়, জন্মদিন ১৭ অক্টোবর। দুজনেরই বেড়ে ওঠা ঢাকা ও গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। প্রয়াত বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবউদ্দিন পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী। দুই বোনই পড়ালেখা করেছেন ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকাতে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দুইবোন দুই জায়গায় অবস্থান করছেন। বর্তমানে দিবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ও নিশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স পড়ছেন। পড়ালেখায় দুই বোনই মেধাবী। স্কুলজীবনে তারা বিভিন্ন মেধাবৃত্তিগুলোতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষাতেও মেধা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরাদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন দিবা-নিশি। পড়াশোনার পাশাপাশি দিবা উপস্থাপনা ও ভয়েজ-ওভার আর্টিস্ট হিসেবে আর নিশি অভিনয় ও মডেলিংয়ে বেশি কাজ করছেন। মিডিয়াতে কাজের ক্ষেত্রে দিবা-নিশি’র পছন্দ আলাদা হলেও নির্মাতাদের চাহিদার কারণে দুইবোন একসঙ্গে একাধিক কাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

মিডিয়াতে কাজ করার আগ্রহ প্রসঙ্গে তারা জানালেনÑ সাংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী দিবা-নিশি গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি সবই শেখেন ছেলেবেলায়। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন তারা। জেলাপর্যায়ে বেশ কয়েকবার প্রথম স্থান অর্জন করেন। মূলত সেই সুবাদেই দিবা-নিশির মিডিয়াতে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে মিডিয়ার কাজে নিয়মিত হয়ে ওঠেন তারা। দুই বোনের চেহারা সুন্দর এবং একইরকম হওয়ায় কাজের ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ চাহিদাও তৈরি হয়। তবে দিবা-নিশি নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য প্রথমে থিয়েটারে যুক্ত হন। ‘কাকতাড়ুয়া’ থিয়েটার থেকে তাদের অভিনয়ের হাতেখড়ি। আর গান ও নাচ তারা নিজে নিজেই বাসায় অবসর সময়ে অনুশীলন করেন।

নিশি বলেন, শিল্পের ক্ষেত্রে একটা মাধ্যম, আরেকটা মাধ্যমের সহায়ক। তাই শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে এবং নিয়মিত অনুশীলন করলে দক্ষ শিল্পী হওয়া যায়। দক্ষ হলে কাজ দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করা যায়, স্থায়িত্ব পাওয়া যায়। তাই আমি মনে করি, শিল্পের অঙ্গনে কাজ করতে হলে বিভিন্ন শিল্পমাধ্যম সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করা ভালো।

এবার দিবা বলেন, শেখার তো কোনো শেষ নেই, তাই আমরা এখনো শিখছি। নিজেকে তৈরি করার জন্য আগে যা শিখেছি সেগুলো, আর বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য চাহিদা অনুযায়ী আরো শিখতে হচ্ছে।

এবার জানতে চাইলাম, দুই বোনের চেহারা একইরকম হওয়ায় সুবিধা অসুবিধাগুলো নিয়ে। প্রথমেই তারা জানালেন, দুইজনের চেহারা একইরকম হওয়ায় মানুষকে খুব সহজে বোকা বানাতে পারেন তারা। দিবা-নিশি বলেন, আমাদের চেহারা একইরকম হওয়ায় যেমন সুবিধা আছে, তেমন অসুবিধাও আছে। অসুবিধা একটাই যে, সবাই ঠিকমতো আমাদের চিনতে পারে না। কিন্তু এটা অনেক সময় মজারও বিষয় হয়। ছেলেবেলায় আমাদের নিয়ে অনেক মজার মজার ঘটনা ঘটত। যেমন ঈদের মধ্যে দুই বোনকে একইরকম পোশাক পরানো হতো, তখন সবাই নিশিকে দিবা ভেবে বা দিবাকে নিশি ভেবে একজনকেই দুইবার সেলামির টাকা দিয়ে দিত। আর স্কুলে থাকতে ক্লাসে একজন দুষ্টুমি করলে স্যার বা ম্যাম এসে ঠিকমতো চিনতে না পারার দরুন আরেকজনকে বকা দিতেন। অনেক সময় আমরা একজনের ক্লাস আরেকজন করে দিয়েছি, মানে প্রক্সি দিয়েছি। শিক্ষকেরা আমাদের চালাকি বুঝতেই পারতেন না।

জানা গেল, সমবয়সী হওয়ায় ছেলেবেলা থেকে দুই বোন মিলে দুষ্টুমি ও মহব্বত যেমন হয়েছে ; তেমনি ঝগড়াঝাটি মান অভিমানও অনেক হয়েছে। তবে, সেসব স্থায়িত্ব পেত খুবই কম সময়। কারণ তারা একে অপরের সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারত না। এই নিয়ে নিশি বলেন, ছেলেবেলায় টুকটাক জিনিস নিয়ে আমাদের ঝগড়া হতো কিন্তু দেখা যেত কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার দুই বোন মিলে গেছি। তবে, এখন বড়ো হওয়ার পর ওইভাবে তেমন আর ঝগড়া হয় না, মাঝেমধ্যে একটু আধটু মান অভিমান হয়, কিন্তু সেটাও ঠিক হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যে।

এবার দিবার কাছে জানতে চাইলাম, তাদের প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। দিবা বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হিসেবে বিজ্ঞাপন করা হয়েছে। সেটা ছিল হাফ স্টেপ ডাউন-এর সঙ্গে। এটি আমাদের দুই বোনের উল্লেখযোগ্য কাজ। এই কাজটি ছিল মেন্টোস-এর বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনে আমাদের হাতেখড়ি বাংলাদেশের স্বনামধন্য পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী’র পরিচালনায়। তার সাথে কাজ করতে পেরে আমরা এখনো অনেক গর্ববোধ করি।

এছাড়াও তারা গ্রামীণফোন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ বাংলাদেশ, প্রাণ, পুষ্টি, কোকাকোলাসহ আরো অনেক স্বনামধন্য কোম্পানির বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। এছাড়া দিবা ইন্ডিয়াতে টেলি সিনে অ্যাওয়ার্ড, এসএ টিভি, জাতীয় তথ্যচিত্র উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ-এর উপস্থাপনা এবং বাংলাদেশের কিছু টিভি চ্যানেলের রিয়্যালিটি শোতে অংশগ্রহণ করেছেন। ‘সুপার মডেল বাংলাদেশ’ নামক প্রতিযোগিতায় ফাইনালিস্টের স্থান করতে পেরেছিলেন দিবা। বর্তমান কাজের প্রসঙ্গে দিবা জানান, সে আপাতত পড়াশোনার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, পাশাপাশি সময় ও সুযোগ করতে পারলে উপস্থাপনা করছেন বিভিন্ন টিভির অনুষ্ঠানে। অপরদিকে নিশি নিয়মিত অভিনয় ও মডেলিং করে চলেছেন।

অভিনয় মডেলিং উপস্থাপনার বাইরে দিবা-নিশি কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে জানালেন। নিশি এ প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু আমাদের বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেই সুবাদে কিছু সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছি আমরা। এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সামাজিক সেবামূলক কাজ করে থাকি। গ্রামের অসহায় মানুষ এবং সুযোগের অভাবে পড়াশোনার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে ঝরে যাচ্ছে এমন শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করতে চাই। পড়াশোনা করে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে চাই। পাশাপাশি মিডিয়াতে ইতিবাচক ও শিক্ষণীয় কাজ করতে চাই।

এবার প্রশ্ন করলাম মিডিয়াতে কাজ করতে এসে পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় ? উত্তরে দিবা বলেন, মিডিয়াতে কাজ করতে গিয়ে পারিবারিক কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি আমাদের। সবাই অনেক অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছে। সবকিছুরই একটি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে, সবার দেখার দৃষ্টিকোণ ও ধারণা এক নয় ; সেই সুবাদে অনেকে এই ব্যাপারটি সুন্দরভাবে নিলেও আবার অনেকেই একই ব্যাপার নিয়ে অনেক সমালোচনা করে। কথা টেনে নিয়ে এবার নিশি বলেন, সমালোচকেরা সমালোচনা করবে, এটাই সাধারণ ব্যাপার। কোনো কিছু নিয়ে যদি সমালোচনা না হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে সেই জিনিসটি তেমন আকর্ষণীয় নয়। আমরা মানুষেরা সেই জিনিসটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বেশি করি, যেটা আমাদের কাছে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরিবার এবং শিক্ষক সবাই অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছেন আমাদের।

সবশেষে দুই বোনের কাছে জানতে চাইলাম করোনার সময়ে লকডাউনে তাদের কর্মকা- নিয়ে। জানালেন, করোনার এই সময়ে বেশ কিছু জিনিস তাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যার মধ্যে আছে বাগান করা, গাছের  যত্নে নেওয়া। তবে তাদের সবচেয়ে বেশি সময় কাটছে বই পড়ে, পাশাপাশি শখের কাজগুলোর নিয়মিত অনুশীলন করছেন। যার মধ্যে আছে গিটার বাজানো, নাচ গানের অনুশীলন করা।

নিজেদের আরো দক্ষ করে তুলে শিল্পের অঙ্গনে স্থায়ী আসন নিতে চান দিবা-নিশি। তাই থেমে নেই তাদের অনুশীলন ও প্রস্তুতি।