অভিনয়শিল্পী নাজিয়া হক অর্ষা সাবলীল অভিনয় দিয়ে অনেক আগেই দর্শকের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। কখনো আধুনিকতা, কখনো গ্রামের সহজ সরল মেয়ে, কখনো আবার ভিন্ন চরিত্রে অর্ষাকে দেখেছেন দর্শক। সব জায়গায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন এই অভিনেত্রী। ছোটোপর্দার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে নাম লেখান বড়োপর্দায় সেখানেও প্রশংসিত হন তিনি। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
অর্ষার সঙ্গে যখন কথা হয়, সেই সময়ে তিনি একটি খন্ডনাটকের শুটিংয়ের জন্যে বান্দরবান অবস্থান করছেন। শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় তার নতুন সিনেমা ‘সাহস’ নিয়ে। ছবিটি সম্প্রতি সামান্য সংশোধনী সাপেক্ষে সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ছবিটি দেখেছি। বড়ো ধরনের কোনো ত্রুটি খুঁজে পাইনি। তবে আইনের একটি ধারায় ভুল রয়েছে। তা সংশোধন করে জমা দিতে বলা হবে।’ মূলত একটি সংলাপে আইনের ধারাটি ভুল বলা হয়েছে। ‘সাহস’-এর পরিচালক সাজ্জাদ খান সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ছবিটিতে প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ও অর্ষা। এর আগে অর্ষা অভিনীত দুটি ছবি মুক্তি পায়। সাবলীল অভিনয়ের জন্যে প্রশংসিতও হন তিনি। ‘সাহস’ ছবিটি মুক্তি পেতে পারত অনেক আগেই কিন্তু সেন্সর বোর্ড কয়েকটি আপত্তিকর দৃশ্যের জন্যে ছবিটি আটকে দেয়। তবে আপত্তিকর দৃশ্য কর্তন সাপেক্ষে ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
লাক্স সুন্দরী অর্ষা একদশকেরও বেশি সময় ধরে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে নিজেকে প্রতিনিয়িত ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। নাটকে বেশি কাজ করলেও এখন অনলাইন কনটেন্টেও তাকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে মিজানুর রহমান আরিয়ানের পরিচালনায় ‘নেটওর্য়াকের বাইরে’ শিরোনামের একটি ওয়েব সিনেমা মুক্তি পায়। ছবিতে অর্ষা একজন চিকিৎসকের চরিত্রে অভিনয় করেন।
সিনেমায় ছবিটিতে ডাক্তার তানিয়া চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি এবং তার চেয়ে কম বয়েসি এক তরুণের প্রেমে পড়েন। ছবিতে প্রেম কিংবা ভালোবাসা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অর্ষা নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। এইভাবে প্রতিটি চরিত্রে নিজেকে ভাঙছেন অর্ষা। সেই সুবাদে কাজের পরিধিও বাড়ছে তার।
ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে র্অষা বলেন, আমি চরিত্র অনুযায়ী অভিনয় করতে চেষ্টা করি। ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ ছবিটির গল্প এত সুন্দর যে আমার ভালো কাজের জন্য দারুণভাবে উৎসাহ পেয়েছি। তাই দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এদিকে হৃদি হক পরিচালিত সরকারি অনুদানের ‘১৯৭১-এর সেই সব দিন’ শিরোনামের সিনেমারও কাজ শেষ করেছেন তিনি। বাকি রয়েছে ডাবিং। নাটক-সিনেমায় সমান তালে ব্যস্ততা প্রসঙ্গে অর্ষা বলেন, আসলে দুই মাধ্যমের মজা দুই রকম। যেহেতু সুযোগ পাচ্ছি দুই মাধ্যমেই, কাজ করে যেতে চাই এভাবেই। তবে আগের থেকে একটু দেখেশুনে কাজ করছি। প্রস্তাব পেলেই রাজি হচ্ছি না। সময় নিয়ে স্ক্রিপ্ট পড়ে সবকিছু জানার পর সিদ্ধান্ত নিই। এভাবেই সামনে কাজ করতে চাই। গল্পনির্ভর ও মানসম্মত কাজগুলোতে যুক্ত হয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেওয়াটাই এখন সবচেয়ে বড়ো লক্ষ্য।
মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ ছবিটি সরকারি অনুদানে নির্মিত হচ্ছে। এ ছবির মূল গল্পভাবনায় রয়েছেন ড. ইনামুল হক। সংলাপ, চিত্রনাট্য লিখেছেন নির্মাতা নিজেই। এতে অভিনয় করছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মামুনুর রশীদ, আতাউর রহমান, গ্রীতশ্রী দত্ত, শিল্পী সরকার অপু, লিটু আনাম, হৃদি হক, ফেরদৌস, তারিন জাহান, সজল, সাজু খাদেম, সানজিদা প্রীতি, আনিসুর রহমান মিলন, নাজিয়া হক অর্ষা, মৌসুমী হামিদ, ফারহানা হামিদ, জুয়েল জহুর, আইরিন পারভীন লোপা, শেলী আহসান, জয়িতা মহলানবিশ প্রমুখ। ছবিটি প্রসঙ্গে নির্মাতা হৃদি হক বলেন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে রকম কাজ করতে চেয়েছি, কিছু কারণে সেই কাজের গভীরতা ও আদর্শগত জায়গায় ফারাক তৈরি হয়েছিল। সেসব কাটিয়ে কাজ শেষ করতে পারছি এটাই স্বস্তির। আশা করছি, ছবিটি উপভোগ্যই হবে। কারণ, ছবির প্রত্যেক অভিনয়শিল্পী বেশ আন্তরিকতা নিয়েই অভিনয় করছেন। উল্লেখ্য যে, শুরুর দিকে অভিনেত্রী পরীমণিকে নিয়ে শুটিং শুরু করেছিলেন পরিচালক। কিন্তু পরে তাকে বাদ দেওয়া হয়।
লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা তিনের মধ্যে জায়গা করে মিডিয়ায় আসেন নাজিয়া হক অর্ষা। প্রথমদিকে মডেলিংয়ের প্রতি টান থাকলেও পরবর্তীসময়ে তিনি অভিনয়ে মনোযোগী হন। টিভিপর্দায় অনেক বছর ধরে অভিনয় করছেন নাজিয়া হক অর্ষা।