খ্যাতিমান নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহানের অনবদ্য আবিষ্কার চিত্রনায়িকা মৌসুমী। ৯০ দশক জুড়ে কোটি হৃদয়ের এক স্বপ্নের রানি। যার মুখ দেখে কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা মন্তব্য করেছিলেন, ‘ওর চেহারা দেখার পর দর্শক চোখ ফেরাতে পারে না, কেমন যেন বার বার দেখতেই ইচ্ছে করে। সৃষ্টিকর্তা ওর ওই মুখটাতে সব সুন্দরের ভাণ্ডার দিয়ে রেখেছেন, চাইলেই চোখ ফেরানো যায় না’। সর্বশেষ গত ঈদুল ফিতরে এফ আই মানিক অভিনীত ‘সৌভাগ্য’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। তবে ঈদের সিনেমায় প্রচারে শিরোনাম হতে না পারলেও সম্প্রতি রেস্ট্রুরেন্ট কান্তে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। হাতে উল্লেখযোগ্য তেমন সিনেমাও নেই, তাই বলে তার ব্যস্ততা কম সেটাও ভাবা ঠিক হবে না। তার দৈনন্দিন ব্যস্ততা অ্যাপসভিত্তিক অনুষ্ঠান নিয়ে। এরমধ্যে টিকটক অ্যাপ নিয়ে বিতর্ক ওঠায় সামাজিক, রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার জায়গায় আনন্দভুবনের পাঠকবৃন্দের জন্য আহমেদ তেপান্তরের লেখায় মৌসুমীর ভাবনা এবং অর্থনৈতিক আয়ের কথা উঠে এসেছে ...
আনন্দভুবন : সম্প্রতি নারীকে বিভৎস করে নির্যাতনকারী বাংলাদেশি একটি চক্র ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছে, বলা হচ্ছে এরা সবাই টিকটক অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত। এই প্রসঙ্গটি কি শুনেছেন বা ওই ভিডিওটি কি দেখেছেন?
মৌসুমী : লোকমুখে শুনেছি, পরে পত্রিকায় পড়ে জেনেছি। ওই নারীর সঙ্গে যা হয়েছে তা রীতিমতো ভয়ংকর। এরা প্রত্যেকেই বিপথগামী।
আনন্দভুবন : অনেকেই টিকটক বা লাইকির মতো অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত। প্রশ্ন হচ্ছে টিকটকারদের নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে সেলিব্রেটিদের নিয়ে কিন্তু অতো অভিযোগ নেই-
মৌসুমী : সেলিব্রেটি যারা এই অ্যাপগুলো ইউজার তারা কিন্তু জেনেশুনে বুঝে করছেন। তবে অন্য যারা এতে যুক্ত তারা কিন্তু অতো খতিয়ে দেখে না। না দেখেই মনগড়া কর্মকান্ডে জড়িয়ে বদনাম করছেন। এরা খুব সহজে সেলিব্রেটি তকমা পেতে চাইছেন, যদিও বিষয়টি এতো সহজ নয়।
আনন্দভুবন : টিকটক বা লাইকির মধ্য দিয়ে এর ইউজাররা ঠিক কী মেসেজ দিচ্ছেন ?
মৌসুমী : মেসেজ নেই এমনটা বলা যাবে না। যেমন কিছু টিকটকার বা লাইকি হোস্টার আছেন যারা সুন্দর স্টোরিলাইন দাঁড় করিয়ে নিজেদের ক্রিয়েটিভিটি দেখায়, এতে করে একজন ইউজার একই সঙ্গে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তাও খুঁজে পান। কখনো কখনো কেউ কেউ সামাজিক অসংগতির মেসেজ নিজেদের মতো করে তুলে ধরেন। ভক্তরা এসবে উৎসাহী হন। আবার কেউ আছেন না বুঝে এমন কান্ড ঘটান যেটা অনাচারে রূপ নেয়, তবে এদের সংখ্যা নগন্য।
আনন্দভুবন : আপনার টিকটকের মেসেজ কী ?
মৌসুমী : আমার টিকটকের কোনো মেসেজ নেই। কেবল নিজের ভালো লাগার জায়গা থেকে সখে করা। দেখা গেল নিজের পুরানো একটা ক্লিপ রয়েছে যেটা এখনও ভালো লাগে, সে অংশটুকু এখন নিজের মতো করে করে টিকটক অ্যাপে দেই। ভক্তরা লাইক কমেন্টে ভরে দেয়, এখানে এটাই প্রাপ্তি।
আনন্দভুবন : টিকটক, লাইকি থেকে শুনেছি বেশ ইনকাম হয়?
মৌসুমী : না না, বিষয়টি তেমন নয় কারণ টিকটক অ্যাপের বিষয়টি ভালো জানা নেই, তবে লাইকি থেকে আসে। এটার হোস্টিং হতে হয়। এর মাধ্যমে লাইভ ভিডিও চ্যাটিং করা যায়। ইনকামের যে প্রসঙ্গ এসেছে সেটা করতেও দিনের নির্দিষ্ট সময় এখানে থাকতে হয়। ইনকাম ওইভাবে কিছু না, কাজকর্মগুলো ফেসবুকের মতোই। ফ্যান ফলোয়ার আসেন এক ধরনের ইন্টাররেকশান হয়, তারা আমার সম্পর্কে জানতে চায়, জানতে পারে।
আনন্দভুবন : ভারতে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা কিন্তু টিকটকার হিসেবেই পরিচিত, একজন সেলিব্রেটি হিসেবে তাদের বিষয় আপনার মূল্যায়ন কী ?
মৌসুমী : আমি শুনেছি, পত্রিকা পড়ে জেনেছি। ভিডিও দেখিনি...। তবে যতটুকু জেনেছি তাতে এটা পরিষ্কার এরা সুস্থ কিনা সে প্রশ্ন আমারই। এরা সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে যা করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।
আনন্দভুবন : টিকটক অ্যাপের ব্যবহারকারীরা সামাজিক নিরাপত্তা ও ভারসাম্যে ব্যাপক হুমকি হওয়ার দাবি উঠেছে অ্যাপসটি বন্ধ করে দেওয়ার, আপনার অভিমত কী ?
মৌসুমী : দেখুন সবকিছুরই ভালো-মন্দ দিক রয়েছে। যেমন সরকারের বক্তব্য লাইকি বা টিকটকে যত হিট পড়ে তাতে টাকাটা দেশে না এসে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা অবশ্যই বাজে বিষয়। আবার বিপরীত চিত্রও কিন্তু আছে। যেমন একজন কলেজ গোয়িং কিন্তু লাইকি ইউজ করে নিজের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ইনকাম করতে পারছে, যেটা কেউ তাকে এমনিতেই দেবে না। ছেলে বা মেয়টি কিন্তু কারো বোঝা হচ্ছে না আবার বিপথগামীও হচ্ছে না। অর্থনৈতিক দৈন্য থেকে মানসিক অস্থিরতা কাজ করে। সরকার কিন্তু বেকার ভাতা দিচ্ছে না, সুতরাং স্বাবলম্বী হওয়ার মতো একটা আয়ের পথ বন্ধ করতে গেলে অনেক দিক ভাবতে হবে বলে মনে করি। কারণ যারা ইনকাম করছেন তারা কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ সকলে। এই টাকাটা হয়তো সরাসরি রাজস্বখাতে যোগ হচ্ছে না তবে ইকোনোমিক সাইকেল ধরলে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বরং বন্ধের পথে না গিয়ে অ্যাপগুলোকে আরও কঠোর নজরদারির আওতায় আনা যেতে পারে।
আনন্দভুবন : কিন্তু এ কথাতো ঠিক এই কথিত স্বাবলম্বী হতে গিয়ে মোবাইলে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হচ্ছে ?
মৌসুমী : না না, এখানে আসক্তির সুযোগ নেই। কারণ লাইকি অ্যাপ ইউজারদের কঠোর নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। চাইলেই যে কেউ এর ইউজার হতে পারবেন না। পারবেন না মানে ইচ্ছে করলেই যাচ্ছেতাই করতে পারবেন না, সেটা করলে আইডি বাতিল হয়ে যাবে। আর দেশীয় সংস্কৃতি বিরোধী কেউ কোনো আচরণ প্রদর্শন করতে পারবেন না। যাই করুন না কেন সুস্থ চিন্তা নিয়েই অ্যাপ ইউজ করতে হবে।
আনন্দভুবন : আপনি কতটা সময় দেন, আয় কেমন ?
মৌসুমী : আমি ১৫ দিন দুই ঘণ্টা করে সময় দেই। এতে অনেক সময় এক থেকে কোনো মাসে দুই লাখ পর্যন্ত আয় হয়।
আনন্দভুবন : তবে এটাও তো ঠিক অনেকেই এই অ্যাপ ব্যবহার করে সমাজ-সংস্কৃতি বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে ?
মৌসুমী : টিকটক আর লাইকি কিন্তু এক নয়, দুটো আলাদা অ্যাপ। দ্বিতীয়ত অনেক ভালোর মাঝে কিছু খারাপ কিন্তু বড় অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে না। কেউ কেউ হয়তো অপকর্মে জড়িত তবে সবাই নন।
আনন্দভুবন : সমাধান কী ?
মৌসুমী : যারা এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, অপকর্ম করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেন গঠনমূলক উদ্যোগ আর্থ-সামজিক উন্নয়নে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। অ্যাপসগুলো কি নিয়মে চলছে, কোথায় অর্থনৈতিকভাবে রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে সেগুলো খতিয়ে একধরনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনতে পারলে অনেক অভিযোগ কমে আসবে।
লেখা : আহমেদ তেপান্তর