করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গোটা বিশ্বের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। কোনো দেশে সংক্রমণ কমলে, অন্য দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। যার কারণে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের নিতে হচ্ছে কঠিক সব পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের প্রভাব বিনোদন জগতে এসেও পড়েছে। বাংলাদেশে এখন সংক্রমণ কমে এসেছে, সরকারও বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করেছে। যার ফলে আবার বিএফডিসি জমে উঠেছে। শুটিং শুরু হলেও এখনো সিনেমা হলগুলো বন্ধ রয়েছে। প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী কলাকুশলীরা প্রহর গুনছে কবে সিনেমা হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। বর্তমানে প্রায় তিন ডজন সিনেমার কাজ সম্পন্ন হয়ে রয়েছে। অনেকেই আশায় আছেন আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে হয়ত হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
২০২০ সালের মার্চ মাসে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনও স্থবির হয়ে পড়ে। করোনার সেই থাবায় বেকার হয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ। বাদ পড়েনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শিল্পী-কলাকুশলীরাও। ২০২১ সালের শুরুর দিকে সংক্রমণ কমে এলে নতুন উদ্যোমে আবার জ্বলে ওঠে চলচ্চিত্রাঙ্গন। শুরু হয় বন্ধ হয়ে যাওয়া একের পর এক সিনেমার শুটিং। সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন সিনেমাও। কিন্তু মার্চ মাসের শেষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ ও মৃত্যু। আবার প্রভাব ফেলে বিনোদনের সব মাধ্যমে। বন্ধ হয়ে যায় সিনেমার শুটিং। এমনকি নতুন ছবির শুটিংও পিছিয়ে যায়। এপ্রিলের শেষে সংক্রমণ কিছুটা কমে আসে। এ-সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া ছবি ও নতুন ছবির শুটিংয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। ঈদুল ফিতরের পরপরই আবার শুরু হয় ছবির শুটিং।
ঈদের পরের দিন থেকে শুরু হয় সোলায়মান লেবু পরিচালিত ‘প্রেম প্রীতি বন্ধন’ ছবির শুটিং। ৩০ মে পর্যন্ত চলে এই ছবির শুটিং। ছবিতে প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অপু বিশ্বাস ও জয় চৌধুরী। এই প্রসঙ্গে অপু বিশ্বাস বলেন, “করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে এলেও একধরনের শঙ্কা নিয়েই শুটিং করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ করা কারো জন্যই স্বাভাবিক নয়। তারপরও কাজ তো করতে হবে। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেমন স্যানিটাইজার, মাস্কসহ যা যা প্রয়োজন, ব্যবহার করছি।”
জয় চৌধুরী বলেন, “দীর্ঘদিন বসে রইলাম, করোনা থেকে কবে নিস্তার পাব, আমাদের জানা নেই, জীবন তো আর থেমে থাকবে না, তাই যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা কাজ করছি।”
জয় অভিনীত প্রায় নয়টি সিনেমার কাজ সম্পন্ন হয়ে আছে। হল বন্ধ থাকার কারণে ছবিগুলো মুক্তি দেওয়া যাচ্ছে না। জয় চৌধুরী অভিনীত নয়টি ছবিসহ প্রায় তিন ডজন সিনেমার কাজ সম্পন্ন হয়ে আছে বলে জয় জানান। জয় বলেন, “করোনার প্রথম ঢেউয়ে আমরা প্রায় ৭-৮ মাস শুটিং থেকে বিরত ছিলাম, এরপর পরিবেশ অনুক‚লে এলে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুটিংয়ে অংশ নিই। এরপর আবার সংক্রমণ বাড়লে কিছুদিন কাজ বন্ধ রেখে ঈদুল ফিতরের পরের দিন থেকে আবার কাজ শুরু করি।” জয় চৌধুরী যখন কথা বলছিলেন তখন তিনি মনতাজুর রহমান আকবরের ‘প্রেম প্রীতি বন্ধন’ ছবিতে শুটিং করছিলেন। জয় জানান, ৫ জুন পর্যন্ত এফডিসিতে এই ছবির শুটিং হবে। এছাড়াও জয় আরো কয়েকটি ছবিতে কাজ করছেন।
এদিকে অনন্য মামুন পরিচালিত ‘অমানুষ’ ছবির গানের শুটিং বান্দরবানে শুরু হয়েছে ৩০ মে থেকে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ছবিটির গানের অংশের শুটিং আটকে ছিল। এই প্রসঙ্গে অনন্য মামুন বলেন, “ছবির গানের জন্যে কয়েকদিন কাজ হবে বান্দরবানে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং করব। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। জীবন তো আর থেমে থাকবে না। কাজ করে যেতে হবে।”
‘মুখোশ’ ছবির শুটিং শুরু হয়েছে ২৪ মে থেকে। টাঙ্গাইল, সাভার ও গাজীপুরে এক সপ্তাহ চলবে এ-ছবির আটকে থাকা কাজ। ছবির পরিচালক ইফতেখার শুভ বলেন, করোনার কারণে ৩ এপ্রিলের পর আর শুটিং করতে পারেন নি তারা। তিনি বলেন, যদিও করোনার সংক্রমণ এখনো কমেনি। তারপরও একধরনের বাড়তি চাপ নিয়েই শুটিং শুরু করলাম। তা না হলে সঠিক সময়ে এই ছবির কাজ শেষ করা যাবে না।
রায়হান রাফির ‘দামাল’ ছবির শেষ অংশের শুটিং শুরু হয়েছে স¤প্রতি সৈয়দপুরে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা, জানালেন ছবির নায়ক সিয়াম আহমেদ। তিনি বলেন, বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেই শুটিং করব। কারণ, কাজটি শেষ করতে হবে। সাত-আট দিন শুটিং করলে ছবির কাজ শেষ হয়ে যাবে। ‘দামাল’ ছবিতে সিয়াম ছাড়াও অভিনয় করছেন বিদ্যা সিনহা মিম।
ছবির শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন শাকিব-বুবলীও। বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশের’ শুটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন শাকিব খান ও বুবলী। ছবিটি পরিচালনা করছেন তপু খান। এছাড়া ঈদের পরপর শুরু হয়েছে ‘১৯৭১ : সেই সব দিন’সহ বেশ কয়েকটি ছবির শুটিং। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, ফেরদৌস, লিটু আনাম, আনিসুর রহমান মিলন, তারিন জাহান, হৃদি হক, মৌসুমী হামিদ, অর্ষা, সানজিদা প্রীতি, সাজু খাদেম, সুদীপ বিশ্বাস প্রমুখ। পরিচালনা করছেন হৃদি হক।
আসন্ন ঈদ সামনে রেখে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ তোড়জোড় দিয়েই ছবিগুলোর কাজ করছেন। আশা করছেন ঈদুল আযহায় ছবিগুলো মুক্তি দিতে পারবেন। ইতোমধ্যে ঈদুল আযহায় একটি ছবি মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা করেছে শাপলা মিডিয়া। সিনেমা হল না খুললেও ওটিটি মাধ্যমে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানা যায়।