তরুণদের ক্রেজ রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা অনেকদিন ধরেই তার সিনেমায় অভিনয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। তার ভক্তরাও আশায় ছিলেন তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন। ভক্তদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটলো মিথিলার সিনেমায় চুক্তি করার মধ্যে দিয়ে। তিনি বরাবরই সিনেমার প্রসঙ্গটি এলে বলতেন ভালো গল্প ও চরিত্রের জন্য অপেক্ষায় আছি। অবশেষে পেয়েও গেলেন সেই গল্প ও চরিত্র।
অনন্য মামুন পরিচালিত ‘অমানুষ’ শিরোনামে সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি। ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করবেন নিরব হোসেন। ২০ মার্চ এই ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি।
মিথিলা- নিরব ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করছেন ‘জানোয়ার’ দিয়ে আলোচনায় আসা অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু ও কাজী নওসাব।
সিনেমাটি নিয়ে পরিচালক অনন্য মামুন বলেন ‘চার মাস আগে ‘অমানুষ’ নির্মাণের পরিকল্পনা করি। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিই। ২৫ মার্চ সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়েছে।’
‘অমানুষ’ সিনেমার শুটিং হবে সুন্দরবনে। ব্যাপক আয়োজন আর পরতে পরতে চমক নিয়ে হাজির হচ্ছে ‘অমানুষ’।
সুন্দরবনের জলদস্যু ও সুন্দরবনের বায়োডাইভার্সিটিকে উপজীব্য করে এই চলচ্চিত্র নির্মিত হতে যাচ্ছে। শুধু গল্প নয়, পুরো আয়োজন ও পরিকল্পনা শুনে মুগ্ধ হয়েছেন মিথিলা। আর তাই খুব আগ্রহ নিয়েই মিথিলা কাজটি করছেন।
মডেলিং, উপস্থাপনা, নাচ, গান, ছোটোপর্দায় অভিনয়সহ সবই করেছেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। রুপালি পর্দায় তার পথচলা শুরু হওয়ার খবর শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠছিল না। যা একটু-আধটু শোনা যাচ্ছিল, করোনা ভাইরাস মহামারি এসে যেন তা আরও পিছিয়ে দিল।
মিথিলা বলেনÑ ‘ব্যস্ততার কারণে এতদিন বড়ো পর্দা নিয়ে ভাবতে পারি নি। ব্র্যাকের সঙ্গে ১৩ বছর ধরে যুক্ত আছি। এছাড়া আমার নিজের লেখাপড়া রয়েছে। সন্তানকে সামলাতে হয়। চাকরির কারণে দেশের বাইরে আসা-যাওয়ার ব্যাপার ছিল। কিন্তু এখন করোনা মহামারির কারণে ভ্রমণটা একটু কমেছে। তাই সময় মিলল। এবার মনে হলো চলচ্চিত্রে পথচলাটা শুরু করি। আমি অভিনয় ভালোবাসি। আমি একজন অভিনয়শিল্পী। বিভিন্ন পরিসরে আমি অভিনয়টা করতে চাই। টিভি দিয়ে আমার শুরুটা হয়েছিল। করোনা মহামারির পর ওয়েব সিরিজে কাজ করছি। এবার বড়োপর্দার দর্শকদের সামনে হাজির হচ্ছি।’
কয়েকদিন আগে ভারতের ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম জিফাইভে এসেছে মিথিলার ওয়েব সিরিজ ‘কন্ট্রাক্ট’। এতে আরও অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী ও আরিফিন শুভ। গেল বছর ভারতের আরেক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’তে মুক্তি পায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ওয়েব সিরিজ ‘একাত্তর’। এতে সাংবাদিক ‘রুহি’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
এদিকে নিজের মেয়ে আইরা তেহরীম খানকে নিয়ে শিশুদের জন্য ভ্রমণবিষয়ক বই লিখেছেন মিথিলা। শিশুতোষ গ্রন্থের ব্র্যান্ড ‘গুফি’ থেকে বের হচ্ছে এটি। তিনি মোট পাঁচটি বইয়ের সিরিজ লেখার জন্য ‘গুফি’র মূল প্রতিষ্ঠান ‘লাইট অব হোপ’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। সিরিজটির নাম ‘আইরা আর মায়ের অভিযান’। এর প্রথম গল্প ‘তানজানিয়ার দ্বীপে’ প্রকাশ হয়েছে এবারের অমর একুশে বইমেলায়। ২৭ মার্চ বিকেল ৫টায় মেলার শিশু চত্বরে ‘লাইট অব হোপ’র স্টলে [৫৭১]-এর মোড়ক উন্মোচন হয়। এতে মা-মেয়ে উপস্থিত ছিলেন ।
ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ প্রসঙ্গে মিথিলা জানান, সিরিজটির মূল বিষয়বস্তু সাত বছরের মেয়ে আইরার চোখে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ এবং সেসব স্থান থেকে বিভিন্ন বিষয় শেখা কেন্দ্র করে। এর মধ্যে ‘তানজানিয়ার দ্বীপে’ ছয় বছর থেকে ১২ বছর বয়সি শিশুদের উপযোগী। তার কথায়, ‘আগেই বলেছি কাজের সুবাদে আমাকে বিভিন্ন দেশে যেতে হয়েছে। আমার ভ্রমণসঙ্গী আইরা। ‘তানজানিয়ার দ্বীপে’ গল্পটি আইরার চোখ দিয়ে লেখা। পুরো ভ্রমণ শেষে সে শেখে কীভাবে ভয়কে জয় করা যায়।’
‘তানজানিয়ার দ্বীপে’ গ্রন্থের মূল চরিত্র আইরা ও তার মা মিথিলাকে আঁকা হয়েছে তাদের মতো করেই। ৩৬ পাতার বইটির প্রতিটি পাতা রঙিন। ছবিগুলো এঁকেছেন মহাইমেনুল রাকিব। তিনি ব্র্যাক বাংলাদেশে মিথিলার সহকর্মী। বইটির শুরুতেই দেওয়া আছে মিথিলা ও আইরার ‘তানজানিয়ার দ্বীপে’ পড়ার ভিডিও। স্মার্টফোন দিয়ে কিউআর কোড স্ক্যান করে ভিডিওটি দেখা যাবে।
এক নজরে মিথিলা
২০০৬ সালে ৭ আগস্ট সঙ্গীতশিল্পী, শিক্ষক, মডেল ও অভিনেতা তাহসানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মিথিলা। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল তাদের কোলজুড়ে আসে একমাত্র কন্যাসন্তান আইরার। বেশ সুখেই চলছিল তাদের সংসার। সুখী পরিবার নিয়ে এরপর কাটতে থাকে সুখের সময়। কর্মজীবনের সাফল্য, গান, অভিনয় আর মডেলিং দিয়ে তারা জয় করতে থাকেন অগণিত মানুষের মন। তাহসান-মিথিলার যাপিত জীবনের গল্পটা এভাবে শেষ হলে মন্দ হতো না। কিন্তু হঠাৎ একটি ঘোষণা সবকিছু ওলোট-পালট করে দিল। ২০১৭ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তহসান ও মিথিলার।
দু’বছর একা থাকার পরে ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ভারতীয় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন মিথিলা। শুরু হলো নতুন জীবন। মিথিলার বিয়ের কিছুদিন আগে নির্মাতা ও পরিচালক ইফতেখার আহমেদ ফাহমির সঙ্গে অন্তরঙ্গ কিছু ছবি ফাঁস হয়। যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।
মিথিলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন। শুধু তাই নয়, ব্রাক ইউনিভার্সিটি থেকে আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে স্বর্ণপদক রয়েছে তার। পড়াশোনার পর ব্রাক ইউনিভার্সিটিতেই গবেষণার কাজ করতেন তিনি। ব্রাক ইন্টারন্যাশানালের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্টের প্রধানও হন তিনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি কত্থক, মণিপুরি ও ভরত নাট্যমের তালিম নিয়েছেন মিথিলা। শিক্ষকতা করেছেন স্কুল ও কলেজে। চার ভাই-বোনের মধ্যে মিথিলা বড়ো।
নীলাঞ্জনা পল্লী-আনন্দভুবন ঈদ ফ্যাশন শোয়ে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে মিথিলার মডেলিং ক্যারিয়ারের শুরু চলতি শতকের একবারে গোড়ার দিকে। এরপর বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রথম সারির সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসাডর হন তিনি। মডেলিং করতে করতেই আসে অভিনয়ের সুযোগ। মিথিলার অভিনয়ে হাতেখড়ি মিউজিক অ্যালবাম দিয়ে। এরপর টেলিফিল্ম। মিথিলার অভিনীত টেলিফিল্মগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়। এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশে তিনি শিশুদের উন্নয়ন ও বিকাশ নিয়ে কাজ করেছেন।