দুই মাধ্যমে মিশু চৌধুরী

05 May 2021, 07:50 PM আকাশলীনা শেয়ার:
দুই মাধ্যমে মিশু চৌধুরী

খেলাধুলা বিষয়ক উপস্থাপনার জন্যেই বেশি মানুষের কাছে পরিচিত অভিনেত্রী মিশু চৌধুরী। তিনি মঞ্চনাটক, টিভিপর্দার খণ্ড কিংবা ধারাবাহিক নাটকে নিয়মিত কাজ করছেন। এর বাইরে তার পূর্ব পরিচয় তিনি একজন ক্রিকেটার। খেলার মাঠ ছেড়ে এখন টিভির পর্দাতেই সরব তিনি।

উপস্থাপনা নাকি অভিনয়, কোনটায় বেশি স্বাচ্ছন্দ ? প্রথমেই এমন প্রশ্নের জবাবে মিশু চৌধুরী বলেন, দুটোতেই। কারণ, আমি দুটো মাধ্যমে কাজ করতে এসেছি, জেনে ও বুঝে। ছিলাম ক্রিকেটার। আট বছর ক্রিকেট খেলেছি। কিন্তু তার আগেই অভিনয়ে আমার হাতেখড়ি। ছেলেবেলা থেকেই মঞ্চে কাজ করেছি। বগুড়া থিয়েটারে আমি কাজ করতাম। সেখানে প্রায় পাঁচটা প্রোডাকশনে আমি ছিলাম। সেখানে সর্বশেষ ২০০৯ সালে ‘নুরলদিনের সারাজীবন’ নাটকে অভিনয় করেছি। ঢাকায় বর্তমানে দেশ নাটকের সঙ্গে যুক্ত আছি। নাট্যকার মাসুম রেজা রচিত ও নির্দেশিত ‘সুরগাঁও’ নাটকে আমি ২০১৩ সাল থেকে কাজ করছি। ফলে ক্রিকেট খেলার কারণে যেরকম ক্রিকেটের খুঁটিনাটি বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা হয়, যা খেলাধুলা বিষয়ক উপস্থাপনার জন্য আমার কাজে লাগছে। তেমনি থিয়েটারে কাজ করার ফলে অভিনয় বিষয়েও আমার কিছুটা হলেও জানাশোনার জায়গা তৈরি হয়েছে। আর জেনে বুঝে দুটো মাধ্যমে কাজ করছি বলে দুটোই আমি এনজয় করি।

আসন্ন ঈদের জন্য বেশকিছু নাটকে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মিশু চৌধুরী। এরমধ্যে ‘আমরা আমরাই-২’ নামে একটি নাটকের শুটিং সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও সামনে মিশু অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘খুব পেইনে আছি’ এবং ‘মমতাজ মহল’ প্রচারের অপেক্ষায় আছে বলে জানান তিনি।

নাটক টেলিফিল্মে অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও রয়েছে তার পদচারণা। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং প্রাণ দুধের বিজ্ঞাপনসহ বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করছেন তিনি। গ্রামীণফোনের আলোচিত একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করার পর এবার তাকে দেখা যাচ্ছে গ্রামীণফোনের ফোরজি বিজ্ঞাপনে।

এসবের বাইরে মিশু এখন লেখালেখিও করছেন। বাংলাদেশের শুরুর লগ্ন থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত মেয়েদের ক্রিকেটের ওপরে একটি বই লিখছেন মিশু। বইটি ইংরেজি এবং বাংলা- দুই ভাষাতেই হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বইটি শুধু বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটের কথা নয়, এখানে অন্যান্য দেশের মেয়েদের ক্রিকেটের কথাও থাকবে। মিশু জানান, বইটি আগামী বছর প্রকাশ পাবে।

বর্তমানে টিভিতে চলছে এমন কাজের খবর জানতে চাইলে এই অভিনয়শিল্পী বলেন, বর্তমানে নিয়মিত চ্যানেল আইয়ে রাত ১০.৩০ মিনিটে ‘আই স্পোর্টস’ নামে স্পোর্টস নিউজ পড়ছি এবং এটিএন বাংলাতে প্রতিরবিবার সকাল ১০.৩০ মিনিটে ‘খেলার জগৎ’ নামে সাপ্তাহিক খেলার অনুষ্ঠানটিতে উপস্থাপনা করছি।

ক্রিকেট মাঠে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে বেড়ানো সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান টিভির অভিনেত্রী মিশু চৌধুরী চলচ্চিত্রেও স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন। কারণ, এরই মধ্যে মিশু একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এগুলো হলো শাহ আলম কিরণের ‘একাত্তরের মা জননী’, ইসমত আরা চৌধুরী শান্তির ‘মায়ানগর’, শাহিন সুমনের ‘কেউ কথা রাখেনি’, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুর ‘কপোতাক্ষের কান্না’, নার্গিস আক্তারের ‘যৈবতী কন্যার মন’ ও প্রশান্ত অধিকারীর ‘হাডসনের বন্দুক’। এসব সিনেমায় তিনি পার্শ্বচরিত্রে রূপদান করছেন। সামনে চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

মিশু বলেন, বড়ো ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, ইনজুরি আমার বড়ো ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। যে কারণে মিডিয়াতে চলে এসেছি। ধারাবাহিকের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করলেও এখন আমার সব স্বপ্ন সিনেমাকে ঘিরে। আমি বড়োপর্দাতেই স্থায়ী হতে চাই। কারণ শিল্পের সবচেয়ে বড়ো মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। প্রত্যেকটি অভিনয়শিল্পীর স্বপ্ন থাকে একদিন বড়ো পর্দায় কাজ করার।

শহীদুজ্জামান সেলিমের ‘ডিবি’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু করেন মিশু। এ ধারাবাহিকে ডিবি অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এরপর তিনি অভিনয় করেছেন আহসান হাবীবের ‘ভূতের গল্প’, সকাল আহমেদের ‘প্রবাসে পরবাসে’, মাহফুজ আহমেদের ‘মা গো তোমার জন্য’, নরেশ ভুঁইয়ার ‘শুধু তুমি’, মঞ্জুরুল আলমের ‘বন সবুজের তৃষ্ণা’ ধারাবাহিক নাটকসহ অনেক নাটকে। টেলিফিল্মেও অভিনয় করেছেন তিনি। যার মধ্যে আছে মাহফুজ আহমেদের ‘সরীসৃপ’ এবং শাহ আলম কিরণের ‘সবাই ডাক্তার না’।

পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছিলেন বলে বাবা-মার খুব ইচ্ছা ছিল মিশুকে ডাক্তার বানানোর। স্কুলের ফাঁকে দুষ্টুমি আর পড়ালেখার মধ্য দিয়ে সময় হয়ে গেল এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার। কিন্তু যখন পরীক্ষার প্রবেশপত্র এল সেখানে বিজ্ঞান বিভাগের জায়গায় বাণিজ্য বিভাগ লেখা ! জীবনের প্রথম হোঁচট খেলেন তখনই। মিশুর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সেখানেই শেষ। এরপর ঢাকায় এসে বীজ বুনতে লাগলেন আরেকটি স্বপ্নের। তা হলো- ভালো ক্রিকেট খেলোয়াড় হবেন। রাজশাহী বিভাগ নারীক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন দীর্ঘদিন। ঢাকায় খেলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, ইন্দিরা রোড ক্রীড়াচক্রের নারীক্রিকেট দলে। একসময় জাতীয় মহিলা দলের হয়ে খেলতেও শুরু করলেন এই অভিনেত্রী। খেলার সময় হঠাৎ একদিন বাম পায়ে আঘাত পেলেন। সেখানেই তার দ্বিতীয় স্বপ্নটি নষ্ট হয়ে গেল। যেহেতু ছেলেবেলা থেকে মঞ্চের প্রতি তার দুর্বলতা তাই এবার ঝুঁকলেন মঞ্চে। ইডেন কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করলেন ঢাকা থিয়েটারে। মনে মনে স্বপ্ন দেখতে থাকলেন অভিনয়শিল্পী হওয়ার। 

লেখা : নিথর মাহবুব