পরিবারের বিরুদ্ধে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ পপির

26 Feb 2025, 01:04 PM মুভিমেলা শেয়ার:
পরিবারের বিরুদ্ধে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ পপির


সম্পত্তি এমন একটি বিষয় যে, এই সম্পত্তির জন্য কাছের মানুষও অনেক সময় শত্রুতে পরিণত হন। শুধু সাধারণ মানুষই নন, এই তালিকায় শিল্পীদেরও নাম আসছে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সাদিকা পারভীন পপির পরিবারের মাঝে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...



৬ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই ফেসবুক লাইভে এসে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী পপি পরিবারের প্রতি অভিযোগ এনে বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন। সবাইকে দু-হাত ভরে শুধু দিয়েই গেছেন, কিন্তু তারাই বেইমানি করেছেন।

৩ ফেব্রুয়ারি পপির বিরুদ্ধে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ এনে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করেন তার বোন ফিরোজা পারভীন। এ প্রসঙ্গে পপি বলেন, ‘আমি শিল্পী মানুষ, আমি কি ভূমিদস্যু ? ছেলেবেলা থেকে ভাইবোনদের লালন-পালন করে বড়ো করেছি। এর জন্য আমার জীবনের সুন্দর সময়গুলো উপভোগ করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু এখন কী দেখলাম, তারা মানুষ হয়নি, হিংস্র পশুও বলতে পারছি না। কারণ, হিংস্র পশুর কৃতজ্ঞতা বোধ আছে, ওদের নেই।’

তিনি অনেকটা আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পৃথিবীতে সব মা-ই মা নন। ভালো মা যেমন আছেন, খারাপ মা-ও আছেন। দুর্ভাগ্যবশত আমি আমার মায়ের ভালোবাসা কখনো পাইনি। আমি শুধু তার কাছে ডিমপাড়া হাঁস, দুধ দেওয়া গরু, টাকা ছাপানোর মেশিন ছিলাম। তা-ও এসব বিষয়ে আমি কখনো অভিযোগ করিনি, এখনো নেই। কারণ, আমি মনকে বুঝিয়েছি, একটা মানুষ যখন মেশিনে পরিণত হয়, তখন তার মূল্য মেশিন হিসেবেই থাকে। মানুষ হিসেবে থাকে না।’

প্রায় ৪০ মিনিট ফেসবুক লাইভে ছিলেন তিনি। ওই ভিডিওতে পপি অপ্রকাশিত কয়েকটি তথ্য তুলে ধরেনÑ

* দীর্ঘ ২৮ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে পপি যা আয় করেছেন তার সবই ভোগ করেছেন পপির মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা-নানির পরিবার।

* পপির টাকা দিয়ে জমি, সম্পত্তি কেনা হয়েছে পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে। অভিনেত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থের পরিমাণ শূন্য ছিল, যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করত পপির পরিবার।

* অর্থাভাব থাকায় সামির নামে এক শিশুকে দত্তক নেয় পপির পরিবার। যার ভরণপোষণ দিতেন পপি। কিন্তু সেই পালক ভাইয়ের হাতেই মার খেতে হয়েছে অভিনেত্রীকে। ওই অপরাধের জন্য সে-সময় জিডি করা হয়েছিল।

* ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে অভিনেত্রী জানতে পারেন, তার নামে কিছুই নেই। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সব টাকা তার বাবা, মা-বোনের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। নিঃস্ব অভিনেত্রীকে তখন সাহায্য করেন ইন্ডাস্ট্রির কয়েকজন অভিনয়শিল্পী।

* পরিবার পপির সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করে বাড়ি থেকে বের করে দিলে ইন্ডাস্ট্রির কিছু শুভাকাক্সক্ষী পপির পরিবারকে অভিনেত্রীর আয়ের কিছু অংশ ফেরত দিতে বলেন। ওই সময় অভিনেত্রীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে খুনি ভাড়া করে তার পরিবার।

* অর্থাভাবে পপির মামা, চাচারা জমি বিক্রি করতে চাইলে সেগুলো কিনে নেন পপি। সেই কেনা জমির দখল এখনো অভিনেত্রী পাননি।

* খেয়ালি নামে পপির বোন মাদক ব্যবসাসহ বেশ কিছু অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। বোনের এ কাজে মায়ের সাপোর্ট ছিল। কিন্তু অনৈতিক কাজ বাবা মেনে না নেওয়ায় বাবাকে মারধর করেন খেয়ালি। এ ঘটনায় বাবাকে বাঁচাতে গেলে আহত হন অভিনেত্রী। একপর্যায়ে মাকে ডিভোর্স দিতে চান পপির বাবা। বাসা থেকে বের করে দেন। এ ঘটনারও জিডি রয়েছে থানায়।

পরিবারের নানা চক্রান্তের কারণেই অনেকদিন আড়ালে ছিলেন পপি।

লুকিয়ে বিয়ে করায় দীর্ঘদিন ধরেই মিডিয়ার আড়ালে ছিলেন অভিনেত্রী। থানায় বোনের জিডি করার পর স্বামী, সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে এলেন সাদিকা পারভীন পপি। তবে, আরো একটি পারিবারিক কারণে নিজেকে ‘গৃহবন্দি’ করেছিলেন তিনি।

দীর্ঘ ৬ বছরেরও বেশি সময় হলো জাহাজ ব্যবসায়ী আদনান উদ্দিন কামালকে বিয়ে করেন পপি। তাদের সংসারে আয়াত নামে চার বছরের একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে।

সংসারজীবনে সুখে থাকলেও অশান্তি ছিল পরিবারে। কারণ পপির এটি প্রথম বিয়ে হলেও ব্যবসায়ী আদনানের এটি দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম ঘরে আদনানের স্ত্রী ও তিনটি সন্তান রয়েছে। তাই পরিবারের চাপে পপিকে প্রকাশ্যে আনতে পারেননি আদনান।


বিয়ের পর থেকেই আদনানের পরিবার পপিকে মেনে নেয়নি

বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে ধানমন্ডির একটি বাসায় থাকতেন পপি। ওই সময় থেকেই একপ্রকার ‘গৃহবন্দি’ হয়ে থাকতেন। যে-কারণে সিনেমায় অভিনয় করা থেকে বিরত থাকেন তিনি। এরপর সংসারে সন্তান এলে তাকে ঘিরেই সময় কাটাতে থাকেন পপি। বর্তমানে স্বামী ও সন্তান নিয়ে খুলনায় বসবাস করলেও মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে পপির মায়ের পরিবারের সঙ্গেও বনিবনা নেই। পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ ভাই-বোনদের না দিয়ে একাই ভোগ করতে চাওয়ায় পারিবারিক কলহে জড়িয়ে পড়েছেন। মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন ভাই, বোন ও মাকে।

এ ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করেন অভিনেত্রীর বোন ফিরোজা পারভীন। পপির বিরুদ্ধে থানায় জিডি করার পরই অভিনেত্রীর স্বামী, সন্তানের খবর ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে।


১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘কুলি’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সাদিকা পারভীন পপির বড়োপর্দায় অভিষেক ঘটে।

এই অভিনেত্রী ‘মেঘের কোলে রোদ’, ‘কি যাদু করিলা’, ‘গঙ্গাযাত্রা’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।

তার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে, ‘আমার ঘর আমার সংসার’, ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’, ‘লাল বাদশা’, ‘ক্ষেপা বাসু’, ‘টর্নেডো কামাল’, ‘ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী’, ‘মায়ের জন্য যুদ্ধ’, ‘অনেক দিনের আশা’, ‘দু’জন দু’জনার’, ‘দাম দিয়ে প্রেম যায় না কেনা’, ‘মা যখন বিচারক’, ‘বিশ্ব বাটপার’, ‘বস্তির রানী সুরিয়া’, ‘প্রেম করেছি বেশ করেছি’, ‘রানী কুঠির বাকি ইতিহাস’।