চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মৌসুমিকে নিয়ে আনন্দভুবনের ৩ বর্ষ ৫ সংখ্যা [১৬ জুলাই ১৯৯৮], ৯ বর্ষ ২ সংখ্যা [১ জুন ২০০৪]-সহ আরো কয়েকটি সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১ জুন ২০০৪- এ শিরোনাম ছিল মৌসুমীর মাতৃত্ব আটক। ১ জুন ২০০৪ সংখ্যা প্রতিবেদক লিখেছেন :
আশির দশকে রাজকাপুর নির্মিত ‘রাম তেরি গঙ্গা ময়লি’ ছবির দৃশ্যের কথা অনেকেরই মনে আছে। ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে কান্না থামাতে মন্দাকিনী শিশুকে বুকের দুধ পান করান। আমাদের দেশে ‘সারেং বউ’ ছবিতে পিপাসার্ত ফারুককে বাঁচাতে কবরী পানি না পেয়ে নিজের বুকের সম্পদকে ব্যবহার করেন। ‘বসুন্ধরা’ ছবিতে ববিতার সন্তানকে দুগ্ধ পান করানোর প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয় পোট্রেট। একবিংশ শতাব্দীতে এসে পরিচালক জাহিদ হোসেন সন্তানের আকাক্সক্ষায় উন্মুখ এক নারীর স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘মাতৃত’¡ নামের চলচ্চিত্র। ৬ মে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড তিনটি কর্তন সাপেক্ষে ‘মাতৃত্ব’ ছবিটি প্রদর্শনের উপযোগী বলে সবশেষ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। ১ নং কর্তনটি হচ্ছে মৌসুমীর শিশুকে দুধ খাওয়ানোর দৃশ্যে স্তন দেখানো অংশটি কর্তন করতে হবে। পরিচালক আপিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মৌসুমী অভিনীত ‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রটি এখন দোলাচলে। এই প্রেক্ষাপটে আনন্দভুবন প্রচ্ছদে এলেন চলচ্চিত্র তারকা মৌসুমী।
‘কাজের স্বাধীনতাই হচ্ছে শিল্পীর আনন্দ। আমার মনে হয় ভাবনার যে আনন্দটা শিল্পীর জীবনে থাকে, কর্মের স্বাধীনতা থাকে, অন্য প্রফেশনে তা পাওয়া যায় না। একজন শিল্পী যদি নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকে তাহলেই সে জয়ী। ‘মাতৃত্ব’ ছবিতে আমি এমন কোনো শট দিইনি যা সমালোচিত হবে। ‘মাতৃত্ব’ ছবির গল্পটি মানবিক। আর একজন শিশুকে দুধ খাওয়ানোর শ্বাশত দৃশ্যটি হচ্ছে স্বর্গীয়। যে দর্শক প্রথম দৃশ্য থেকে ছবিটি দেখবেন দৃশ্যটি এলে নিজের অজান্তে তার চোখ দিয়ে জল গড়াবে। যদি তার মানবিকতা থাকে’...
লেখা : সৈকত সালাহউদ্দিন।
চলতি সময়ে
গত ঈদে মুক্তি পেয়েছে মৌসুমী অভিনীত ‘সোনার চর’। ছবিটি তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। খোদ মৌসুমীই ছিলেন দেশের বাইরে, কোনোরকম প্রচারণায় অংশ নেননি। যুক্তরাষ্ট্রে কিছুদিন পরপরই বেড়াতে যান এই অভিনেত্রী। সেখানে তার একটি বাড়িও রয়েছে। দেশে হোক কিংবা দেশের বাইরে, ঘরে থাকাই আজকাল পছন্দ করেন গত শতকের নয়ের দশক কাঁপানো এই নায়িকা। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে মান্নার মৃত্যুর পর থেকেই ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেন মৌসুমী। যদিও ফেরদৌসের সঙ্গে বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন, কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মান্না-মৌসুমী জুটির দাপটের কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয়নি। যদিও মৌসুমীর জীবনের সবচেয়ে বড়ো ছবিগুলোর মধ্যে একটি, ‘খায়রুন সুন্দরী’-তে তার নায়ক ফেরদৌস। তার সর্বাধিক ছবির নায়কও ফেরদৌস। কিন্তু মৌসুমীর সেকেন্ড ইনিংসে বড়ো ভূমিকা মান্নার। ‘লুটতরাজ’ থেকে শুরু, ‘কুখ্যাত খুনী’, ‘কষ্ট’, ‘দুই বধূ এক স্বামী’, ‘বর্তমান’ ইত্যাদি এই জুটির সুপারহিট ছবি। আরো অনেক হিট ছবি রয়েছে এই জুটির দখলে। মান্নার পর মৌসুমীর সফল জুটি ওমর সানীর সঙ্গে। ‘আত্মঅহংকার’, ‘লাট সাহেবের মেয়ে’, ‘প্রথম প্রেম’, ‘দোলা’র মতো ছবি রয়েছে এই জুটির। আর সালমান শাহর সঙ্গে তো ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর মতো কমার্শিয়াল ক্ল্যাসিক রয়েছেই। রয়েছে ‘দেনমোহর’, ‘স্নেহ’, ‘আন্তরে অন্তরে’র মতো সুপারহিট ছবি। গোটা নয়ের দশক প্রায় সব নায়কের সঙ্গে অভিনয় করে সফলতা পেয়েছেন মৌসুমী। অভিনয় করেছেন প্রথম সারির সব পরিচালক ও ব্যানারের সঙ্গে। তার স্টারডমের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারছে না এ যুগের কোনো নায়িকা। যেজন্য তার মতো নায়িকাদের প্রতি শ্রদ্ধা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
লেখা : মাহফুজুর রহমান