শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে আনন্দভুবনে ২ বর্ষ ১৬ সংখ্যা [১ জানুয়ারি ১৯৯৮]-সহ আরো কয়েকটি সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। শিরোনাম ছিল ‘হুমায়ুননামা’। তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে :
যারা প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে অভ্যস্ত তাদের হুমায়ুননামার বিষয় মোগল সম্রাট হুমায়ুন। আর যারা ঘাঁটেন আনন্দভুবন তাদের হুমায়ুননামার বিষয় ভিলেন সম্রাট হুমায়ুন ফরীদি। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের জন্যে, আগামী শতকের জন্যে এই আমাদের খলনায়ক-নায়ক-নায়িকা ছেড়ে দিলেও যিনি একাই ছবি টেনে নিতে পারেন। কাজকেই তিনি ধ্যান মনে করেন, আল্লাহর রহমতে যার বিশ্বাস অটুট, মাখলুকাতের দায়িত্ব যিনি চিহ্নিত করেন নিজের কাজ মনোযোগ দিয়ে করা বলে সেই ফরীদির হুমায়ুননামা বাতলেছেন তার আশেপাশের মানুষেরা।
শহিদুল ইসলাম খোকন [পরিচালক]
বিনোদন ছবিতে হুমায়ুন ফরীদিকে আমি প্রথম এনেছি। এই পর্যন্ত ছবির জীবনে প্রায় ২৫ জন শিল্পীকে আমি এনেছি। কিন্তু তাদের মধ্যে নিজগুণে হুমায়ুন ফরীদি সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়েছেন। তিনিই প্রথম চলচ্চিত্রে ভিলেনদের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দেন। ভিলেন স্ক্রিনে এলে দর্শক হাততালি দেয় এটা কেবল হুমায়ুন ফরীদির ক্ষেত্রেই ঘটেছে। ভিলেন নায়ককে মারলেও দর্শক খুশি হয়ে তালি দেয় এই অসম্ভব ব্যাপারটিও তার ক্ষেত্রেই ঘটেছে। শিল্পী হিসেবে তার তুলনা নেই। আমি যে চার-পাঁচ জন অভিনেতার কাজে সন্তুষ্ট থাকি এদের মধ্যে অন্যদের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ থেকে আশি ভাগ হলে হুমায়ুন ফরীদির ক্ষেত্রে আমি একশত ভাগ সন্তুষ্ট থাকি। তিনি অভিনয় করলে পরিচালককে মারাত্মকভাবে বিরক্ত করেন, সারাক্ষণই বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। চরিত্র সম্পর্কে জানতে চান।
সাময়িকভাবে বিরক্ত হলেও মনে মনে আমি কিন্তু তাতে খুশি হই। তবে নিজের চরিত্র বাড়ানো নয় বরং কী করলে গল্প আরো জমাট হবে সেই পরামর্শ দেন। তিনি শুধু নিজের অভিনয় নিয়েই ভাবেন না, পুরো গল্পে ইনভলড থাকেন।
হুমায়ূন ফরীদির ব্যাপক পড়াশোনা রয়েছে। অভিনয় তিনি চর্চা করেন। বলা যায় রাউন্ড দ্য ক্লক তিনি একজন অ্যাক্টর। তবে তিনি জীবন-যাপনে অনিয়ম করেন।
হাঁপানির কারণে ধুলো সহ্য করতে পারেন না ফলে ধূমপান তার জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
রাজীব [অভিনয়শিল্পী]
হুমায়ুন ফরীদি খুব গুণী শিল্পী। আমি নেগেটিভ পজেটিভ দু’ধরনের চরিত্রে অভিনয় করি। তিনি মূলত নেগেটিভ চরিত্র করেন। সিরিও কমিক অভিনয়ে হুমায়ুন ফরীদি আনপ্যারালাল। অভিনেতা হিসেবে তিনি আমার সিনিয়র। অনেক আগে থেকেই মঞ্চে আর টিভিতে কাজ করতেন। আমি টিভিতে সেরাজ আলুকদারের অভিনয় দেখেছি, মঞ্চে দেখিনি ...
লেখা : আদিত্য কবির, পলাশ শরীফ।
পরবর্তীসময়ে
২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে না-ফেরার দেশে চলে যান হুমায়ুন ফরীদি। অভিনয়-ভুবনে তার শূন্যতা এখনো পূরণ হয়নি। অনেকে মনে করেন তার শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তাকে বলা হয় সর্বকালের সেরা অভিনেতা। তাকে অভিনয়ের মানদ- হিসেবে ধরা হয়। তরুণ প্রজন্ম তাকে অভিনয়ের আইকন মেনে চলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল তার অভিনয়জীবন। সেখান থেকে থিয়েটারে তার পথচলা। তারপর যাত্রা টেলিভিশনে। সেখান থেকে রুপালি পর্দায়। যেখানেই পা রেখেছেন সেখানেই সোনা ফলেছে, স্বাক্ষর রেখেছেন নিজের অভিনয় প্রতিভার। তার যাত্রা শুরু ‘দহন’ ছবির মধ্য দিয়ে। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে তার আত্মপ্রকাশ ‘সন্ত্রাস’ ছবিতে। মূলত টেলিভিশনের ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিকে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় তাকে জনপ্রিয়তার রাস্তায় এনে ফেলে। সিনেমায় নেমে তিনি ‘সন্ত্রাস’, ‘সতর্ক শয়তান’, ‘টপ রংবাজ’, ‘ভ-’-সহ বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই সমস্ত ছবি তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। তাকে ভিত্তি করে ছবির পোস্টার তৈরি হয়। তার নামের ওপরে সিনেমা হলে ভিড় করতে শুরু করে দর্শক। মন্দ অভিনয়ে সবাইকে ছাড়িয়া যান। ফরীদি অভিনয়ের জন্য মাত্র একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেও মনে করা হয় বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা তিনি। হ
লেখা : মাহফুজুর রহমান