ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবার বাংলাদেশ

07 Feb 2021, 02:45 PM মুভিমেলা শেয়ার:
ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবার বাংলাদেশ

১৬ জানুয়ারি গোয়ায় শুরু হয় ভারতের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অব ইন্ডিয়া’ আইএফএফআই। এ-বছর ছিল উৎসবটির ৫১তম আসর। ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অব ইন্ডিয়ার [আইএফএফআই] এবারের ‘কান্ট্রি ইন ফোকাস’ ছিল বাংলাদেশ। যার ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশ থেকে মোট ১০টি সিনেমা দেখানো হয়েছে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম... 


২৪ জানুয়ারি ছিল উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান। এ-বছর গোল্ডেন পিকক অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর নির্মিত ডেনিশ ছবি ‘ইন্টু দ্য ডার্কনেস’। সিলভার পিকক অ্যাওয়ার্ড [সেরা অভিনেতা] জু চুয়ান লিউ, ‘দ্য সাইলেন্ট ফরেস্ট’, সিলভার পিকক অ্যাওয়ার্ড [সেরা অভিনেত্রী] জোফিয়া স্টাফিয়েজ, ‘আই নেভার ক্রাই’ সিলভার পিকক অ্যাওয়ার্ড [সেরা নির্মাতা] চেন নিয়েন কো, ‘দ্য সাইলেন্ট ফরেস্ট’, সেরা ডেবিউ পরিচালক ক্যাসিও পেরেইরা ডস সান্টোস, ‘ভ্যালেন্টিনা’, স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড কৃপাল কলিতা, ‘ব্রিজ’, স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড কামিন কালেভ, ‘ফেব্রুয়ারি’ আইসিএফটি ইউনেস্কো গান্ধী অ্যাওয়ার্ড আমেন নায়েফের ‘২০০ মিটার’ বর্ষসেরা ভারতীয় ব্যক্তিত্ব বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি।

ভারতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় মর্যাদাপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল [আইএফএফআই]। সেখানে এবার ‘কান্ট্রি ইন ফোকাস’র সম্মান পাচ্ছে বাংলাদেশ। আইএফএফআইয়ের ৫১তম বর্ষে সেই স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। ১০ জানুয়ারি রাতে ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশকে এই সম্মান দেওয়ার কথা জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, ‘কান্ট্রি ইন ফোকাস’ হলো এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের একটি বিশেষ সেগমেন্ট। যেখানে একটি বিশেষ দেশের ‘সিনেমাটিক উৎকর্ষ ও অবদান’কে সম্মান জানানো হয়। এবারই প্রথমবার এই উৎসবে এ সম্মাননা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৬-২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গোয়াতে ‘হাইব্রিড ফরম্যাটে’ এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয় আরো জানায়, এবারের উৎসবে এই সেগমেন্ট বাংলাদেশের চারটি চলচ্চিত্রকে ‘শোকেস’ করা হয়। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পাওয়া এই ছবিগুলো হলো- নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের ছবি ‘জীবনঢুলী’। এটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন ঢুলী ও তার পরিবারের জীবন সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে নির্মিত। সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ২০১৪ সালে। এখানে শতাব্দী ওয়াদুদ ও জ্যোতিকা জ্যোতি অভিনয় করেছেন। তালিকায় আছে জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’। মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি অতি সাধারণ পরিবারের জীবনের মোড় ঘোরানো অভিজ্ঞতার গল্প নিয়ে নির্মিত এ সিনেমাটি কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটোগল্প ‘রেইনকোট’ অবলম্বনে তৈরি। এটি ২০১৪ মালে মুক্তি পায়। পরিচালক রুবাইয়াত হোসেনের ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ সিনেমাটিও রয়েছে তালিকায়। এটি এক আধুনিক মুসলিম নারীর কাহিনি, যিনি নাগরিক বাংলাদেশের বিস্তারের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ভারতীয় অভিনেতা সাহানা গোস্বামী ও রাহুল বোস অভিনয় করেছেন এ সিনেমায়। চতুর্থ সিনেমাটি হলো ১১টি শর্ট-ফিল্মের সংকলন ‘সিনসিয়ারলি ইয়োর্স, ঢাকা’ বা ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’। এগারোজন পরিচালকের সৃষ্টি নিয়েই ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল এই অ্যানথোলজি। ভারতের ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল [আইএফএফআই] সাধারণত প্রতিবছর নভেম্বরের ২০-২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, আর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র গোয়ার সৈকতেই এই উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

কিন্তু গতবছর করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এই উৎসব যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তা এ বছরের জানুয়ারিতে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়। উৎসবে কিছু ছবি অনলাইন, বাকি সব অফলাইনে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে আইএফএফআই যে ‘কান্ট্রি ইনফোকাস’ হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান ভারতের চলচ্চিত্র বোদ্ধা ও সমালোচকেরাও।



৩৫তম বিসিএস-এ প্রশ্ন ছিল ‘জীবনঢুলী’ কি -জ্যোতিকা জ্যোতি

মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অব ইন্ডিয়া’ আইএফএফআই অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির ‘জীবনঢুলী’ ছবিটি প্রদর্শনের সুযোগ পায়। এই প্রসঙ্গে জ্যোতিকা যা বললেন-

খবরটি শুনে খুব ভালো লাগছে। এর আগেও ‘জীবনঢুলী’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়েছে। মুক্তির প্রায় ৬ বছর পর আবারো এমন প্রেস্টিজিয়াস একটা ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হচ্ছে তা সত্যি আনন্দের। মজার বিষয় হলো দিন দিন চলচ্চিত্রটির দর্শক ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অনলাইনে অনেকেই এখন দেখছে। ইনবক্সে প্রশংসা পাঠাচ্ছে, ভালো লাগে। তানভীর মোকাম্মেল ভাই একবার বলেছিলেন, আমাদের সিনেমা যত পুরনো হতে থাকে তত মানুষ খুঁজতে থাকে এবং আমি উপলব্ধি করেছি কথাটা কতটা সত্য।

এখন তো নাটকে অভিনয় করা হয় না বললেই চলে। আগে বিশেষ দিবস উপলক্ষে প্রচুর কাজ করতাম, টেলিভিশনে দেখানো হতো। শুটিং নেই তো নাটকও নেই। কিন্তু আমি খুব ভাগ্যবান যে, স্বাধীনতাদিবস বা বিজয়দিবসে আমার ৩-৪টি সিনেমা সবগুলো চ্যানেলে প্রতিবছর ঘুরেফিরে দেখানো হয়। ‘জীবনঢুলী’ তার মধ্যে অন্যতম। আমার তখন ভীষণ ভালো লাগে যে, আমি এমন সব সিনেমায় অভিনয় করছি। ফেস্টিভালে ‘জীবনঢুলী’ চলচ্চিত্রটির জন্য ভারতীয় একাধিক পরিচালক আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

‘জীবনঢুলী’ নিয়ে আমার সব থেকে ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে, ৩৫তম বিসিএস-এ প্রশ্ন ছিল ‘জীবনঢুলী’ কি ? এবং একাধিক পরীক্ষার্থী আমাকে ছবি তুলে পাঠিয়েছিলেন। একজন তো লিখেই ছিলেন যে, আপনার জন্য সিনেমাটা দেখতে গিয়েছিলাম বলেই আজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম। এই ঘটনা আমাকে গর্বিত করে। আমিও তানভীর ভাইয়ের সঙ্গে এক হয়ে বলছি, এমন সব সিনেমায় অভিনয় করে যেতে চাই, যেন দিন যত যাবে মানুষের কাছে তত সমাদৃত হতে থাকবে।