আপনি যদি ‘টি লাভার’ হয়ে থাকেন আর চায়ে আপনার আসক্তি থেকেই থাকে আপনার জন্য খুব ভালো একটি বিকল্প হবে টারমারিক-টি বা হলুদ-চা।
প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় হলুদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যদিও এটি মশলা হিসেবে পরিচিত। ত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে, খাবারের সাথে আমাদের এশিয়ানদের রান্নাঘরের নিত্যব্যবহার্য একটি অংশই হচ্ছে হলুদ। হলুদের গুণাগুণ অনবদ্য আর সে-কারণে এখন শুধু খাবারে মশলা হিসেবে নয়, এটি টারমারিক-টি এবং এন্টি এজিং সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও পাওয়া যায়।
প্রতিদিন সাধারণত ৫০০ থেকে ২০০০ মিলিগ্রাম কারকিউমিন আমাদের গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেটি সাধারণত হলুদ-চা বা খাবারে যে হলুদ ব্যবহার করি সেটির মাধ্যমেই আমাদের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই পূরণ হয়ে যায়। এর পরেও অনেক সময় পুষ্টিবিদগণ ও ডাক্তাররা আমাদের প্রয়োজন ও চাহিদা বুঝে ডোজ এডজাস্ট করে থাকেন।
বছর জুড়ে পাওয়া যায় দেখে আমরা কিন্তু খুব সহজেই আমাদের সুস্বাস্থ্যে, সৌন্দর্যে ও ফিটনেসের জন্য এই হলুদ প্রতিদিন চা হিসেবে খেতে পারি।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য হলুদ ব্যবহার করা হয়। এটি বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বা বর্তমানে বিভিন্ন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টেও হলুদ ব্যবহার করা হয় সেটি আপনার ময়েশ্চারাইজার, সেরাম, সানস্ক্রিন বা স্লিপিং মাস্কেও থাকে। কেননা, হলুদ আমাদের ত্বকের প্রদাহ কমায় আর ফ্রি রেডিক্যালের সাথে কাজ করে এজিং প্রসেসকে স্লো করে। এছাড়াও এটি ত্বকে মেলানিনের পরিমাণও কমিয়ে আনে যার ফলে ত্বকের রং উজ্জ্বল হয় এবং বয়সের ছাপও বয়সের তুলনায় কম দেখায়।
হলুদে থাকা কারকিউমিনের কারণে এর রং হলুদ হয়। হলুদে থাকে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ সকল ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রিসার্চের মাধ্যমে এটাও পরীক্ষিত যে, হলুদে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।
আমরা এখন ওয়েলনেস নিয়ে কাজ করে নিজেকে ভালো রাখতে চাই এবং ওয়েলনেসের কাজ হচ্ছে নিজেকে যেকোনো রোগের হাত থেকে প্রতিরোধ করা। সুতরাং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে আমরা নিয়মিত হলুদ-চা পান করতে পারি।
ওজন কমানোর জার্নিতে যারা বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত তাদের ক্ষেত্রে খুব সহজেই এটি ফ্যাট লস থেরাপি হিসেবে কাজ করবে। মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে এটি ফ্যাট বার্নার হিসেবে কাজ করবে।
হলুদ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে আনে। একারণে আপনার হার্টের সুস্বাস্থ্যের জন্য এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি কোষের ক্ষতিকে কমিয়ে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে দেয়। হলুদ চায়ের আরেকটি নাম ডিটক্সিফায়ার ড্রিংক। সুতরাং আপনার পিত্তথলির পাথরের ঝুঁকি কমানো, লিভারকে ভালো রাখার জন্য এটি উৎকৃষ্ট একটি বিকল্প। এটি পিত্তরস তৈরি বৃদ্ধির মাধ্যমে লিভার কোষের সুরক্ষা ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
নিজেকে ভালো রাখার জন্য, ভালো থাকার জন্য প্রতিদিন সকালে এককাপ করে হলুদ চা পান করুন, শরীর ও মন ভালো রাখুন।
আমাদের স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে মন ভালো রাখে হলুদে থাকা কারকিউমিন। সে-কারণে নিজের শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন সুপার পাওয়ার টারমারিক-টি গ্রহণের অভ্যাস রাখুন। হলুদ-চা আপনি নিয়মিত খেতে পারেন তবে অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। সাপ্লিমেন্ট সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। হ
লেখক : কনসালটেন্ট ডার্মালোজিস্ট
শিওরসেল মেডিকেল [বাংলাদেশ] লিমিটেড, গুলশান, ঢাকা
মডেল : উর্বী স্বয়ম্প্রভা