নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ফয়জুর রহমান ও মাতা আয়েশা ফয়েজ দম্পতির প্রথম সন্তান হুমায়ূন আহমেদ। তার বাবা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কর্তব্যরত অবস্থায় তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনীর হাতে শহিদ হন।
হুমায়ূন আহমেদের পরিবার সাহিত্যমনা হওয়ার কারণে তার ভিতটাও পরিবার থেকেই গড়ে উঠেছিল। তিনি ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। এরপর ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন এবং একই বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করেন। তবে, তার ছেলেবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল লেখালেখি করা। যার কারণে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে মনোযোগী হলেন লেখালেখি ও চলচ্চিত্র নির্মাণে। চলচ্চিত্র নির্মাণে দারুণ চমক দেখিয়েছেন প্রবাদপ্রতীম এই কথা সাহিত্যিক। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এছাড়া তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো- ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘প্রিয়তমেষু’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘আমার আছে জল’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ইত্যাদি।
নাট্যকার হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষবিন্দুতে। তিনি অসংখ্য নাটক নির্মাণ করেছেন। ‘এই সব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘অয়োময়’, ‘আজ রবিবার’, ‘সবুজ সাথী’, ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, ‘এই মেঘ এই রৌদ্র’, ‘কালা কইতর’, ‘চন্দ্র কারিগর’ নাটকগুলো দর্শকমহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয়। প্রথম বই দিয়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন তিনি। সেই থেকে লেখালেখি শুরু, চলেছিল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এই সময়ে তিনি প্রায় দুই শতাধিক উপন্যাস লিখেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে আছে- ‘মিসির আলী’, ‘হিমু’, ‘শুভ্র’ ইত্যাদি।
হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারে। এর মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন সময় দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদ ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই নিউ ইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নন্দিত এই কথাসাহিত্যিককে তারই প্রিয় নুহাশপল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
নন্দিত এই লেখকের জন্মদিনে আনন্দভুবনের পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।