টনি ডায়েস-প্রিয়া ডায়েস এখনো তারা রোমান্টিক

01 Nov 2020, 03:15 PM আকাশলীনা শেয়ার:
টনি ডায়েস-প্রিয়া ডায়েস এখনো তারা রোমান্টিক

২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসাদিবসে বিয়ে করেন টনি ডায়েস ও প্রিয়া ডায়েস। একমাত্র মেয়ে অহনাকে নিয়ে এই দম্পতি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। গত মাসে টনি ডায়েস অল্প কয়েকদিনের জন্য দেশে এসেছিলেন। তার ভালোবাসার গল্প, প্রবাসজীবন, অভিনয়, পারিবার ইত্যাদি নিয়ে লিখেছেন নিথর মাহবুব...


ভালোবাসাদিবসে বিয়ে করবেন এই বিষয়টা টনি ডায়েস ঠিক করে রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই। স্ত্রী প্রিয়া ডায়েসের সঙ্গে টনি ডায়েসের প্রথম পরিচয় হয় টনি ডায়েসের মায়ের মাধ্যমে।

টনি ডায়েস বলেন, ‘মা আমার বিয়ে নিয়ে ভাবছিলেন। একদিন প্রিয়ার একটা ছবি আমাকে দেখালেন। আমি প্রথমে গুরুত্ব দেইনি। তারপর একদিন আমার বোন প্রিয়াকে বাসায় নিয়ে আসে। তখন ১৯৯৭ সাল। ওখান থেকেই আমাদের শুরু। তারপর ২০০০ সালে আমাদের এঙ্গেজমেন্ট হয়। বিয়ের জন্য পরের বছর ভালোবাসাদিবস আসার অপেক্ষায় থাকি। পরে ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আমরা বিয়ে করি।’

অপরদিকে প্রিয়া ডায়েস বলেন, ‘টনি ডায়েসকে নাটক এবং সিনেমাতেই আমার প্রথম দেখা। ‘তথাপি’র মাধ্যমে ও যখন টিভিতে আসে আমি তখন খুব ছোটো। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে টনি ডায়েস একবার  কমিউনিটিতে আসে। তার সঙ্গে বান্ধবীরা মিলে ছবি তুলি। আমাদের খ্রিষ্টান কমিউনিটিটা খুব ছোটো তাই সেখানে সবার সাথেই সবার মোটামুটি পরিচয় ছিল। ওর মা একবার বিয়ের প্রোপোজাল নিয়ে আসে। ওকে আমার ছবি দেখিয়েছিল। কিন্তু ও তখন ওর ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিল তাই খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। তবে আমাকে একদিন তাদের বাসায় নিয়ে যেতে বলে। বাসায় যাওয়ার পর থেকে আমাদের কথা হতো। ওর ভয়েজটা আমার খুব ভালো লাগত। ও বলত, আমার গালের টোলটা ওর ভালো লেগেছিল। টোল দেখেই নাকি কাত হয়ে গেছে। এই ভালোলাগা থেকেই প্রেম। তখন যোগাযোগ এখনকার মতো এত সহজ ছিল না। ফোনে কথা বলতে হতো। তাও ল্যান্ড ফোনে। ও তখন মিডিয়াতে ব্যস্ত। ওর একটা পেইজার ছিল। ওখানে ম্যাসেজ পাঠালে ওখান থেকে ওর কাছে ট্রান্সফার করা হতো, তারপর কথা হতো। বিবাহিত জীবনের ১৯ বছর হয়ে গেছে এখনো মনে হয় আমি টনি ডায়েসের সঙ্গে প্রেম করছি। এখনো খুব রোমান্টিক কথাবার্তা হয় আমাদের মাঝে। এখনো একসঙ্গে আমরা ঘুরতে যাই। আমরা পরস্পরকে খুব ভালো বুঝি। আমাদের পরস্পরের মধ্যে আস্থা আছে।’

প্রিয়া ডায়েস একজন নৃত্যশিল্পী। ছোটোবেলা থেকেই তিনি নাচের সঙ্গে যুক্ত। আর নাচের প্রতি টনি ডায়েসের একটা দুর্বলতা ছিল সবসময়। এ-কারণেই প্রিয়াকে টনি ডায়েসের আরো বেশি ভালো লাগে। প্রিয়া এখনো নিজেকে যুক্ত রেখেছেন নাচের সঙ্গে। এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে অহনা এখন কলেজে পড়ে। মা-বাবার মতো তারও শিল্পের প্রতি প্রবল আগ্রহ বলে জানান তার মা প্রিয়া ডায়েস। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়ে এখন কলেজে পড়ে। ওর পরাশোনার সাবজেক্ট ফিল্ম। আরেকটা সাবজেক্ট হলো মিউজিকাল থিয়েটার। মানে নাচ গান অভিনয় একসঙ্গে। অনেকটা বাংলাদেশের থিয়েটারের মতোই। এখান থেকে সে বের হলে ব্রডওয়ে শো করতে পারবে। হলিউডে কাজ করতে পারবে। আমেরিকাতে ব্রডওয়ে শো খুব নামকরা শো। ছোটোবেলা থেকে অহনা নাচ করত। একটু টিনএজ হওয়ার পর ততটা ইন্টারেস্টেড ছিল না। তবে এখন আবার সে পুরোপুরি আগ্রহ নিয়ে নাচ-গান করছে। অনেক জায়গা থেকে তাকে হায়ার করে নিয়ে যায় গান করার জন্য। ওর বাবা ওকে বলে- ‘তোমার ডেডি বাংলাদেশের তারকা, আমরা চাই তুমি এখানে একটা কিছু হও। আট-দশজনের মতো মেয়েকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন আমরা দেখি না। ওর রক্তে মিশে আছে শিল্প। আমরা চাই ও যা পছন্দ করে তাই নিয়েই বেড়ে উঠবে।’

এ তো গেল স্ত্রীকে নিয়ে টনি ডায়েসের ভালোবাসার গল্প। গত ২২ জানুয়ারি তিনি হঠাৎ বাংলাদেশে এসেছিলেন আরেক ভালোবাসার টানে। না কোনো নাটক বা সিনেমায় অভিনয়ের জন্য নয়। দেশে এসে সোজা পাড়ি জমান পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। এ রহস্য উন্মোচন করতে টনি ডায়েস বলেন, ‘এবারের সফরটা শুধু শৈশবের বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসার টানে, তাদের সঙ্গে ভালো কিছু সময় কাটাতে দেশে এসেছি। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে আমার শৈশব-যৌবন কেটেছে। তখন দুরন্ত এক সময় গেছে আমার। সেই দুরন্ত সময়ের ৪০ জন বন্ধু এক হয়েছিলাম কক্সবাজারে। এই ৪০ জনের মধ্যে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকে। ভালোবাসার টানে সবাই ছুটে এসেছি নিজ দেশে, কক্সবাজারে। বন্ধুরা মিলে স্মৃতিকাতরতায় ভেসেছি। সমুদ্রসৈকতে সবাই মিলে পানিতে নেমেছি, মাছ ধরেছি। মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করছি। একসাথে আড্ডা দিয়েছি, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত উপভোগ করছি আর চিরচেনা খাবার খেয়েছি। এবারের আনন্দটা অনেক বেশি ছিল। বন্ধুদের সাথে কাটানো এই মুহূর্তটা আসলেই মেমোরেবল হয়ে থাকবে।’

টনি ডায়েসের আরেক ভালোবাসার জগৎ অভিনয় অঙ্গন। যোগাযোগ মাধ্যমের অগ্রগতির ফলে এই অঙ্গনের সহকর্মীদের খবরাখবর সহজেই রাখতে পারেন। কিন্তু দেশে এসে সেই প্রিয় মানুষগুলোকে সামনাসামনি দেখার একটা প্রবল আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছিল মনের মধ্যে। তার বহু নাটকের সহশিল্পী তারিন জাহানের হঠাৎ উদ্যোগে সেই আকাক্সক্ষাও পূর্ণ হয়। ২৭ জানুয়ারি আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে কক্সবাজার থেকে ঢাকা এলে অনেকটা হঠাৎ করেই রাজধানীর বনানীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় সহশিল্পীদের নিয়ে এক আড্ডার আয়োজন করেন তারিন। ওইদিন অনেক প্রিয় সহশিল্পীদের সঙ্গে এক প্রাণবন্ত আড্ডায় মিলিত হয়েছিলেন টনি ডায়েস। বিকেল চারটা থেকে রাত প্রায় আটটা পর্যন্ত চলে এই আড্ডা। এ সময়ের মধ্যে টনি ডায়েসের সঙ্গে দেখা করতে আসেন আজিজুল হাকিম, শহীদুজ্জামান সেলিম, তৌকির আহমেদ, তানভীন সুইটি, জিনাত হাকিম, গোলাম ফরিদা ছন্দা, রুনা খান, মৌসুমী নাগ, আশনা হাবিব ভাবনা, পরিচালক এস এ হক অলিক, শান্তা রহমানসহ আরো বেশ ক’জন। প্রিয় সহকর্মীদের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে পেরে টনি ডায়েস ছিলেন বেশ উচ্ছ¡সিত।

এই আড্ডা নিয়ে টনি ডায়েস বলেন, ‘সবাই আমাকে যে খুব ভালোবাসে, খুব মিস করে হঠাৎ এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে তা প্রমাণিত হলো। সবার একটাই কথা ছিল, সবাই একটি মুহূর্তের জন্য হলেও আমার সঙ্গে দেখা করবে। তারিনই মূলত এই উদ্যোগটা নেয়। আমি ভেবেছিলাম দুয়েকজন আসবে। কিন্তু সেলিম ভাই, তৌকির ভাইসহ বাকি যারা এসেছিলেন সেটা সত্যিই আমাকে রীতিমতো মুগ্ধ করে রেখেছিল পুরোটা মুহূর্ত। যদিও অল্প সময়ের জন্য সেই আড্ডাটি ছিল। কিন্তু এতটাই প্রাণবন্ত আড্ডা ছিল যে, সেই আড্ডা ছেড়ে যেতে আমার ভেতরে কষ্ট হচ্ছিল।’  

টনি ডায়েস দেশের বাইরে বসবাস করলেও প্রবাসে এখনো নিজেকে যুক্ত রেখেছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। প্রবাসী জীবন নিয়ে টনি ডায়েস বলেন, ‘বেশ ভালো আছি। একদম নিশ্চিন্তে আছি। এখানে সব কিছু নিয়মের মধ্যে চলে। কোনো আতঙ্ক নেই, লোডশেডিং, পানির সংকট কিংবা ট্রাফিক জ্যাম নেই। সব মিলিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমি খুবই ভালো আছি। ভিনদেশ হলেও আমেরিকাও এখন আমার আরেক দেশ। আমার নতুন নিবাস।’

পর্দায় না থাকলেও টনি ডায়েস নিয়মিত খোঁজখবর নেন দেশীয় শোবিজের। মাঝে মধ্যে সময় পেলে দেশের নাটকগুলো দেখারও চেষ্টা করেন। আবার অনেক সময় বাংলাদেশ থেকে কেউ ওখানে নাটক তৈরি করতে গেলে সেসব নাটকে ডাক পেলে অভিনয়ও করেন।

আশির দশকের শেষ দিকে অভিনয়ের পথচলা শুরু হয় টনি ডায়েসের। নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চে অভিনয় করতেন তিনি। টেলিভিশনের পর্দায় তার অভিষেক ঘটে ১৯৯৪ সালে। নান্দনিক অভিনয়ের সুবাদে অল্প সময়েই দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেন টনি ডায়েস। কাজ করেছেন প্রায় চার শতাধিক নাটক ও টেলিফিল্মে। ছোটোপর্দা ছাপিয়ে কাজ করেছিলেন বড়ো পর্দায়ও। তার অভিনীত ‘মেঘের কোলে রোদ’ চলচ্চিত্রটি এখনো দর্শক মনে রেখেছে। টনি ডায়েস অভিনীত প্রথম টিভি নাটক ‘তথাপি’ ধারাবাহিক। এটি রচনা করেছিলেন ফকির আশরাফ এবং প্রযোজনা করেছিলেন জিয়া আনসারী। প্রথম প্যাকেজ খণ্ডনাটক ছিল সাদিয়া ইসলাম মৌ’র বিপরীতে ‘অভিমানে অনুভবে’। এটি রচনা ও পরিচালনা করেছিলেন ফারিয়া হোসেন। টনি অভিনীত প্রথম সিনেমা ছিল নারগিস আক্তারের ‘মেঘের কোলে রোদ’। পরবর্তীসময়ে তিনি একই পরিচালকের ‘পৌষ মাসের পিরিত’ সিনেমাতেও অভিনয় করেন। দেশে সর্বশেষ তিনি মৌসুমী নাগের বিপরীতে অভিনয় করেন। তবে গেল বছর তিনি আমেরিকাতে রহমতুল্লাহ তুহিনের নির্দেশনায় ‘নিউ ইয়র্ক থেকে বলছি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। টনি ডায়েস জানান, তার বিপরীতে সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেন আফসানা মিমি, তানভীন সুইটি, তারিন ও রিচি। ২০০৫ সালে প্রথম নির্দেশনা দেন তিনি, নাটকের নাম ছিল ‘দূর কুয়াশায় তুমি’। এরপর আরো কয়েকটি নাটক নির্মাণ করেন তিনি।