ফারিয়া ও এমিলার গল্প

31 Dec 2020, 01:09 PM আকাশলীনা শেয়ার:
ফারিয়া ও এমিলার গল্প

নতুন প্রজন্মের মেধাবী অভিনয়শিল্পী এমিলা হক। দীপ্ত টিভির চলতি দুই ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে তিনি দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে তার অভিনীত একাধিক ধারাবাহিক নাটক। বর্তমান কাজ ও

অন্যান্য প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা বলেন নিথর মাহবুব...



২০২০ সাল আমার জন্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছে। বেশ ভালোভাবেই শুরু হয়েছে নতুন বছর। দীপ্ত টিভির ‘মান অভিমান’ এবং ‘বকুলপুর’ নাটকে আমার দুটি চরিত্রের জন্যই দর্শকের কাছ থেকে অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। ‘মান অভিমান’ নাটকের ডিরেক্টর হচ্ছেন আশিষ রয়, নাটকটি লিখেছেন নাসিমুল হাসান। এই নাটকে দর্শক আমার চরিত্রটিকে নেগেটিভ হিসেবে জানছে এখন। এখানে আমার ক্যারেক্টারের নাম ফারিয়া, ভাইয়ের বন্ধু রাহাতকে সে ভালোবেসে ফেলে, যেকোনোভাবে সে রাহাতকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু রাহাত রানু নামে একটা মেয়েকে ভালোবাসে। এই চরিত্রটির রিভিউ খুব ভালো, দীপ্তর সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ, আমার লাইফে এই প্রথম ক্যারেক্টার দিয়ে মানুষ আমাকে চিনছে, রাস্তায় বের হলে বুঝতে পারি নাটকটির প্রতিক্রিয়া অনেক ভালো। অনেকে আমাকে ফারিয়া বলে ডাকে, ফেসবুকে কোনো ছবি পোস্ট করলে ফারিয়া বা নাটক নিয়ে অনেক কমেন্টস করছে। অনেকে বলে, আপনি খারাপ বুঝলাম, কিন্তু এতটা খারাপ ঠিক না। অনেক বাচ্চারা ‘মান অভিমান’ নাটক দেখে আমাকে বলে, তুমি পচা। ‘বকুলপুর’ নাটকটিরও অনেক ভালো রেসপন্স। আহমেদ সাহাবুদ্দিনের রচনায় নাটকটি পরিচালনা করছেন কায়সার আহমেদ। এখানে দুটো গ্রাম দুটো বংশের মধ্যে ঝগড়া। আমি যে পরিবারে আছি সেটা মণ্ডল বংশ, আর যে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া সেটা তালুকদার বংশ। এখানে আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসতাম। সে আমার বান্ধবীকেও ভালোবাসত, কিন্তু আমরা দুই বান্ধবী বিষয়টা জানতাম না। পরে গ্রামে যাত্রাপালা এলে ছেলেটা এবার যাত্রাপালার নায়িকা নিয়ে ভেগে যায়। তখন আমাদের দুই বান্ধবীর মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। নাটকে ওগান্ডা নামের একটা ক্যারেক্টার আছে। ওগান্ডা পরে আমাকে মন্টু নামের একটা ছেলের সঙ্গে প্রেম করিয়ে দেয়। কিন্তু মন্টুর ভাবি তার নিজের বোনকে মন্টুর সঙ্গে বিয়ে দিতে চান। ওগান্ডা ছেলেটিকে উঠিয়ে এনে আমার সঙ্গে বিয়ে দেয়। তাই বাড়িতে এখন আমাকে নিয়ে খুব গণ্ডগোল হচ্ছে। ‘বকুলপুর’ নাটকের এই চরিত্রটির নাম ফোয়ারা। আমি দীপ্ত’র দুটো নাটকে একসঙ্গে কাজ করলেও দর্শক কখনোই ফুয়ারা আর ফারিয়াকে এক করে না। ফুয়ারা এবং ফারিয়াকে দর্শক আলাদাভাবেই চেনে।

দীপ্ত টিভিতে প্রচারাধীন দুই ডেইলিসোপে এমিলা তার অভিনীত দুই চরিত্র নিয়ে বলছিলেন। ‘বকুলপুর’ নাটকেরই পরিচালক কায়সার আহমেদের পরিচালনায় এমিলা অভিনীত আরেক ধারাবাকি নাটকের প্রচার শুরু হয়েছে গত ৮মার্চ থেকে মাছরাঙা টিভিতে। নাটকের নাম ‘চাঁন বিরিয়ানী’। এটি লিখেছেন রিজোয়ান খান। পুরনো ঢাকার বিরিয়ানির দোকান নিয়ে নাটকের গল্প। এছাড়া বৈশাখি টিভিতে ১৭ মার্চ থেকে প্রচার শুরু হয়েছে তার অভিনীত নতুন আরেক ধারাবাহিক নাটক ‘একটি শহর একটি গ্রাম’। এই নাটকটি পরিচালনা করছেন এস এম শাহিন, লিখেছেন জাকির হোসেন উজ্জল। সামনে প্রচারের অপেক্ষায় আছে তার অভিনীত আরো দুইটি ধারাবাহিক নাটক। টুর নিয়ে ‘ফান টুর’ নামে একটি নাটক প্রচার হবে এটিএন বাংলায়। ফজলুর সেলিমের রচনায় নাটকটি পরিচালনা করছেন সৈয়দ শাকিল। এজাজ মুন্নার পরিচালনায় তার অভিনীত অপর ধারাবাহিক নাটক ‘শহর আলী’ প্রচার হবে এনটিভিতে। মিডিয়ায় আসার শুরুর দিকটা জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, শুরুর দিকটা অনেকেরই মসৃণ থাকে না। আমার ক্ষেত্রেও ছিল না। আমার গ্রামের বাড়ি সৈয়দপুর। ইন্টার পর্যন্ত ওখানেই পড়েছি। ইডেনে সুযোগ পাওয়ার পর ঢাকায় আসি। মিডিয়ায় আমার প্রথম আগমন ঘটে একটা ফটোশুটের মাধ্যমে। রুট ডিজাইন নামে একটি ফটোশুট দিয়ে আমার শুরু। আমার এক বন্ধু আমাকে ওই কাজে নিয়ে যায়। এই কাজের কথা আম্মুকে যখন জানিয়েছি আম্মু সাতদিন আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। আমিও রাগ করে বলছি, ঠিক আছে কথা না বললে না বল, আমিও যোগাযোগ করব না। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন সবাই আমাকে খুব সাপোর্ট করে।

অভিনয়ে আমার শুরুটা হয় থিয়েটার থেকে। অভিনয় করার আইডিয়া বা ইচ্ছে কোনোটাই আমার ছিল না। অভিনয় করতে হলে কী করতে হয় এগুলো আমার জানার বাইরে ছিল। আমার ধারণা ছিল অভিনেতাদের খুব স্মার্ট হতে হয়, অনেক স্পেশাল হতে হয়। ঢাকায় এসে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়। ও সম্ভবত তখন থিয়েটার শুরু করেছিল। ও আমাকে বলল, ক্লাসের পর তো সময় থাকে, চল, থিয়েটার করবি, সময় কাটবে, ভালো লাগবে। আমাকে অনেকটা জোর করেই সে নাট্যকেন্দ্র নাটকের দলের মহড়ায় নিয়ে আসে। তখন দলে হয়ত মেয়েরও সঙ্কট ছিল। আসার আগে আমার ফ্রেন্ড বারবার আমাকে বলছিল, থিয়েটারের মেয়েরা অন্যরকম হয়। তোর যে অবস্থা, তোকে নেবে কি না জানি না। আমার মনে ছিল নিলে নেবে না নিলে নাই। সেদিন ‘দুই যে ছিল এক চাকর’ নাটকের মহড়া হচ্ছিল। আমি এই প্রথম থিয়েটারে কী দেখলাম ? দেখলাম সবাই লাফাচ্ছে, বেয়াম করছে, অভিনয় করছে, ছোটো বড়ো সবাই একসঙ্গে লাফাচ্ছে। আমি খুব হাসছিলাম, সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর তারিক আনাম ভাই আসেন। তারিক ভাইয়ের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো। তারিক ভাই বললেন আসছো, আসো, দেখা যাক। সবাই ভেবেছিল আমি আর হয়ত দলে যাব না। কিন্তু আমি পরের দিনও মহড়ায় গেলাম। তারিক ভাই আমাকে কোরাসে কাজ করতে বললেন। খুব ভয়ে ভয়ে কোরাস করলাম। পরে একবার গ্রামীণ ফোনের শোতে আমরা যাই। ওখানে কোরাসের ছয়টা মেয়ের একজন অনুপস্থিত থাকে। তখন তারিক ভাই আমাকে বলেন, তুই কাজটা করতে পারবি ? আমি তখন খুব ভয় পেয়ে যাই। তারিক ভাই বলছেন, পারবি পারবি। আমাকে জোর করে সবাই মিলে কস্টিউম পরিয়ে দিল এবং শোটা করি। আমি ‘দুই যে ছিল এক চাকর’ নাটকের সম্ভবত পঞ্চম শোতে অংশগ্রহণ করি।

থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণেই এমিলার টিভি নাটকে অভিনয় করার সুযোগ আসে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা পেয়েছি নিজের নাটকের দলসহ অন্যান্য নাটকের দলের সদস্যদেরও। এমিলা বলেন, আসলে আমরা যারা থিয়েটার করি তারা কিন্তু একটা দলে সীমাবদ্ধ থাকি না। দেখা গেছে অন্যান্য দলের সদস্যদের সঙ্গেও আমাদের ভালো সম্পর্ক থাকে। সবাইকে খুব আপন মনে হয়। সবাই সবাইকে সহযোগিতা করে। সবার সহযোগিতায় একটা দুইটা কাজ করতে করতে গত দুই বছর ধরে এখন অনেক কাজই করছি। এখন নিয়মিত কাজ করছি। প্রথমে বিটিভির স্বাস্থ্যবিষয়ক একঘণ্টার একটা নাটকে কাজ করি। শুরুতে ছোটো ছোটো কাজ করতাম। একটা দুইটা সিনের জন্যও কাজ করেছি। কাজের ক্ষেত্রে আমাদের দলেরই সদস্য শহিদুল্লা সবুজ ভাই অনেক সাপোর্ট করেছে। তিনি অনেক জায়গায় আমাকে রেফার করতেন। দ্ইুটা বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছি। এর মধ্যে শরিফ মেলামাইনের একটি বিজ্ঞাপন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রচার হচ্ছে।

টিভি নাটক বিজ্ঞাপনের বাইরে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির প্রতিপর্বেই থাকে এমিলার উপস্থিতি। ইত্যাদিতে যুক্ত হওয়ার পেছনের গল্পটা নিয়ে এবার এমিলা বলেন, ইত্যাদিতে নিয়মিত কাজ করছি। খুব ভালো লাগে হানিফ সংকেত ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতে। সংকেত ভাই আমাকে দারুণ পছন্দ করেন। উনি চান আমি নিয়মিত উনার কাজ করি। এতবড়ো মানুষের সঙ্গে কাজ করা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। সংকেতদা ‘পাঁচফোড়ন’ নামে একটা অনুষ্ঠান করেন এটিএন বাংলার জন্য। আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে হঠাৎ একদিন জিজ্ঞেস করে, হানিফ সংকেত ভাইয়ের একটা কাজ করবি ? কাজটা করলে হানিফ সংকেতের টিমের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবি। পরে রমনায় শুটিংয়ে যাই। সংকেতদা সেখানে ছিলেন না। কাজ শেষে সংকেতদার অ্যাসিস্টেন্ট মামুন ভাই বললেন, তুমি অনেক ভালো অভিনয় কর, তোমার নম্বরটা দাও। ‘ইত্যাদি’তে তোমাকে ডাকব। আমি ভেবেছিলাম হয়ত আর মনে থাকবে না। কিন্তু কয়েকদিন পরে তিনি আমাকে ফোন করে জানান, সংকেত ভাই আমার অভিনয় খুব পছন্দ করেছেন। তাই ‘ইত্যাদি’তে আমাকে দিয়ে কাজ করাবেন। একটা কাজ করার পর থেকে আমি ইত্যাদির পরিবারের সদস্যদের মতো হয়ে যাই। এখন নিয়মিতই ‘ইত্যাদি’তে কাজ করছি। সংকেতদা আমাকে অনেক আদর করেন।

পরিবারে দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে এমিলা সবার বড়ো। পরিবারে সবাই সৈয়দপুর গ্রামের বাড়িতে থাকে। এমিলা পড়ালেখা শেষ করলেও মিডিয়ায় কাজের জন্যই এখন ঢাকায় থাকেন। মিডিয়ায় নিজের স্থায়ী জায়গা তৈরি করার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ অভিনেত্রী। কাজ করতে চান ভালো ভালো গল্পের চলচ্চিত্রেও। তার ভাষায়, আমার এখনো অনেক কিছু শেখার আছে। সবাই যেভাবে আমাকে ভালোবাসা দিচ্ছে, সামনে এমনিভাবে সবার ভালোবাসা ও সহযোগিতা চাই। সামনে আরো ভালো ভালো কাজ করতে চাই। যতটুকু কাজ করা হয়েছে তা কিছুই না। আরো অনেক কাজ করতে চাই।