সিনেমার জন্য অনুদান, অনুদানের সিনেমা

23 Jul 2023, 02:15 PM মুভিমেলা শেয়ার:
সিনেমার জন্য অনুদান, অনুদানের সিনেমা

১৯৭৬-’৭৭ অর্থবছর থেকে দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য সরকারি অনুদান চালু করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২-’২৩ অর্থবছরের সরকারি অনুদানের তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এবার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে ২২ জনকে ১২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। ২২টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ১১টি চলচ্চিত্রের প্রতিটি অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৬০ লাখ টাকা। ৮টি চলচ্চিত্রের প্রতিটি ৫৫ লাখ টাকা করে। ৬৫ লাখ করে পেয়েছে ২টি চলচ্চিত্র এবং ৫৮ লাখ টাকা পেয়েছে একটি চলচ্চিত্র।

১৮ জুন, ২০২৩ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুদানের পরিমাণ ও অনুদানপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যেখানে ২২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ রয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত ২২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শাখায় একটি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিশুতোষ শাখায় একটি, সাধারণ শিশুতোষ শাখায় দু’টি ও সাধারণ শাখায় ১৮টি সিনেমা।

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে সর্বোচ্চ ৬৫ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন নূর ইমরান মিঠু ও মাতিয়া বানু শুকু। ‘সার্কাস’ সিনেমার জন্য এ অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন মিঠু। সিনেমাটি পরিচালনাও করবেন তিনি। অন্যদিকে মাতিয়া বানু শুকু পেয়েছেন ‘লাল মিয়া’ নামের সিনেমার জন্য। এটি পরিচালনা করবেন পরিচালক নুরুল আলম আতিক।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শাখায় অনুদান পেয়েছেন বদরুন নাহার রক্সি। ‘যুদ্ধ শিশু’ সিনেমার জন্য তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন মোহাম্মদ উল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিশুতোষ শাখায় ‘ভোর’ সিনেমার জন্য ৬০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন মাহিন মাহনুমা। পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন আমিনুর রহমান খান।

শিশুতোষ শাখায় ‘মাটির রাজকুমার’ সিনেমার জন্য ৬০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন শামীমা ইসলাম তুষ্টি। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন রুবেল শঙ্কর বিশ্বাস। একই শাখায় একই পরিমাণ অর্থ অনুদান পেয়েছেন আকা রেজা গালিব। ‘মস্ত বড়লোক’ নামের সিনেমাটি পরিচালনাও করবেন তিনি।

এছাড়া সাধারণ শাখায় ‘দেনা পাওনা’; প্রযোজক ও পরিচালক সাদেক সিদ্দিকী ৫৫ লাখ টাকা, ‘মাস্টার’; প্রযোজক ও পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত ৬০ লাখ, ‘দ্য আগস্ট’; প্রযোজক ও পরিচালক মাসুদ পথিক ৬০ লাখ, প্রযোজক ও পরিচালক রোকেয়া প্রাচী ৬০ লাখ, ‘লারা’; প্রযোজক জ্যোতিকা পাল জ্যোতি, পরিচালক শেখর দাশ ৬০ লাখ, ‘দুই পয়সার মানুষ’; প্রযোজক ও পরিচালক ঝুমুর আসমা জুঁই ৫৮ লাখ, ‘সর্দার বাড়ির খেলা’; প্রযোজক মীর জাহিদুল হাসান [মীর জাহিদ হাসান], পরিচালনা মো. সজীব আহমেদ [রাখাল সবুজ] ৫৫ লাখ, ‘ঠিকানা’; প্রযোজক ও পরিচালক আনোয়ার হোসেন [পিন্টু] ৫৫ লাখ, ‘জীবন আমার বোন’; প্রযোজক মোহাম্মদ জাহিদুল করিম, পরিচালক এনায়েত করিম বাবুল ৫৫ লাখ, ‘সূর্যসন্তান’; প্রযোজক সৈয়দ আশিক রহমান, পরিচালক কৌশিক শংকর দাস ৫৫ লাখ, ‘শিরোনাম’; প্রযোজক কাজী রুবায়াৎ হায়াৎ, পরিচালক এস এম তারেক রহমান ৫৫ লাখ, ‘নীল আকাশে পাখি ওড়ে’; প্রযোজক ও পরিচালক এস ডি রুবেল ৬০ লাখ, ‘নীল জোসনার জীবন’; প্রযোজক ও পরিচালক ফাখরুল আরেফিন খান ৬০ লাখ, ‘রুখসার’; প্রযোজক ও পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ৬০ লাখ, ‘শাপলা শালুক’; প্রযোজক ও পরিচালক রাশেদা আক্তার লাজুক ৫৫ লাখ, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’; প্রযোজক ইয়াসির আরাফাত, পরিচালনা জহির রায়হান।

রোকেয়া প্রাচী

পরিচালক ও প্রযোজক

পরিচালক-প্রযোজক হিসেবে প্রথমবার অনুদান পেয়েছেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। কাজের পরিকল্পনাও শুরু করে দিয়েছেন। চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি পেয়েছেন ষাট লাখ টাকা। অনুদান পেয়ে বললেন, ‘জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই অনুদান পেয়েছি। সরকার আমাকে সম্মানিত করেছে, এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের। চেষ্টা করব সততার সঙ্গে নয় মাসের মধ্যেই সিনেমাটি শেষ করতে।’

জ্যোতিকা জ্যোতি

প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পী

প্রযোজক হিসেবে প্রথমবার অনুদান পেয়েছেন জ্যোতিকা জ্যোতি। ‘লারা’ নামে তার সিনেমাটি পরিচালনা করবেন শেখর দাশ। সিনেমাটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জ্যোতি বলেন, ‘এখনো আমি অসুস্থ, বিশ্রামে আছি, বেশি কথা বলতে পারব না। সুস্থ হয়ে ওঠার পর সিনেমাটি নিয়ে বিস্তারিত জানাব। আপাতত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সম্মান্নিত জুরিদের, যারা আমার গল্পটি যাচাই বাছাই করে নির্বাচন করেছেন।’

এসডি রুবেল

প্রযোজক ও সংগীতশিল্পী

প্রথমবারের মতো সরকারি অনুদান পেয়েছেন সংগীতশিল্পী-নির্মাতা এসডি রুবেলও। ‘নীল আকাশে পাখি ওড়ে’ নির্মাণের জন্য এই অনুদান পেলেন তিনি। সিনেমাটি নির্মিত হবে তারই লেখা একই শিরোনামের উপন্যাস অবলম্বনে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসডি রুবেল বলেন, ‘প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই বিচারকদের, যারা গল্পটি নির্বাচন করেছেন। এছাড়াও এসডি রুবেল বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সিনেমাটি নির্মাণ করে জমা দিতে চাই। আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছি।’

শামীমা তুষ্টি

প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পী

অভিনয়শিল্পী শামীমা তুষ্টিও প্রথমবারের মতো অনুদান পেয়েছেন এবারের আসরে। তিনি নির্মাণ করবেন শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাটির রাজকুমার’। গল্প নির্বাচন কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যেহেতু সরকারি অনুদানে সিনেমা নির্মাণে ৯ মাসের বিধিবিধান রয়েছে, সেই হিসেবেই সিনেমাটির পরিকল্পনা করেছি।’

মাতিয়া বানু শুকু

প্রযোজক

মাতিয়া বানু শুকু পেয়েছেন ‘লাল মিয়া’ ছবির জন্য অনুদান। পরিচালনা করবেন নুরুল আলম আতিক। এর আগে এই জুটি ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’র জন্য অনুদান পেয়েছিলেন। আতিক বললেন, ‘এই সময়ে সিনেমা নির্মাণ অবশ্যই সম্ভব। তবে সিনেমা করা মানে অনেক আয়োজনের কাজ। তাই কখনো কখনো এই ৯ মাসের বেশি সময়ও লাগে। তবে অনেকে এই টাকা-পয়সার অপব্যবহার করেন, যা দুঃখজনক।’

সৈয়দ আশিক রহমান

প্রযোজক

প্রথমবারের মতো অনুদান পেয়েছেন আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রযোজক সৈয়দ আশিক রহমান। ‘সূর্যসন্তান’ শিরোনামের ছবির জন্য তারা পেয়েছেন ৫৫ লাখ টাকার অনুদান। ছবিটি পরিচালনা করবেন কৌশিক শংকর দাস। অনুদান পাওয়া প্রসঙ্গে সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, ‘আমরা আনন্দিত। এই ধরনের উদ্যোগ কাজের প্রতি আরো উৎসাহিত করে দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ সিনেমা প্রযোজনা করে যাচ্ছি। আমি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের গল্পটি পছন্দ করেছে। গল্পটা অন্য গল্প থেকে আলাদা।’ অনুদানের টাকায় একটি ছবি নির্মাণ করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, ‘একটি সিনেমা নির্মাণের জন্য কম করে হলেও এককোটি টাকার প্রয়োজন। সরকার বাজেট বাড়াচ্ছে, সামনে আরো বাড়িয়ে দিলে সবার জন্য ভালো হয়।’ 

 লেখা : শেখ সেলিম